শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

বিপদ বাড়ছে দরিদ্র মানুষের

এই খবর অনেক আগেই পুরনো হয়ে গেছে যে, দেশে দরিদ্র ও বেকার মানুষের সংখ্যা আশংকাজনকভাবে বেড়ে চলেছে। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির এক মাসিক রিপোর্টের উদ্ধৃতি দিয়ে গতকাল, ১ ডিসেম্বর জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত এক রিপোর্টে জানানো হয়েছে, চলতি বছর ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে ৩৭ শতাংশ মানুষের আয়-রোজগার কমে গেছে। জুলাই থেকে আগস্ট পর্যন্ত তিন মাসে সবচেয়ে বেশি তথা ৩৩ শতাংশ মানুষের আয় কমেছে। অন্যদিকে এ সময়ে আয় বেড়েছে খুব সামান্য সংখ্যক তথা মাত্র ৯ শতাংশ মানুষের।

একই সময়ে মাঝারি ও মারাত্মক খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে বরিশাল বিভাগে ২৬, খুলনায় ২২, চট্টগ্রামে ১৮, রংপুরে ১৭, ঢাকায় ১৩, রাজশাহীতে ১২ ও ময়মনসিংহ বিভাগে ৯ শতাংশ মানুষ। আলোচনার ভিত্তিতে চিহ্নিত করে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি জানিয়েছে, ৪২ শতাংশ মানুষের খাদ্য সহায়তা দরকার। একই সঙ্গে জীবিকার উপায় দরকার ৪৬ শতাংশ মানুষের। এ ছাড়া স্বাস্থ্য ও শিক্ষা সহায়তা দরকার ২৬ ও ১৭ শতাংশ মানুষের। আর ৯ শতাংশ মানুষের দরকার বাসস্থানের জন্য সহায়তা।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত অন্য এক রিপোর্টে জানানো হয়েছে, মহামারির আকারে করোনা ছড়িয়ে পড়ার আগে দেশে বেকারের সংখ্যা ছিল ২৭ লাখ। এ সময় আয় করার মতো কাজে যুক্ত ছিল ৬ কোটি ৮ লাখ মানুষ। অন্যদিকে দু’ বছরের বেশি সময় ধরে চলমান করোনার মধ্যে কাজ বা চাকরি হারিয়েছেন অন্তত ৩০ শতাংশ মানুষ। সেই সাথে আয় কমেছে ৭০ শতাংশ মানুষের। তাছাড়া করোনা শুরু হওয়ার আগে দেশে দারিদ্র্যের হার যেখানে ছিল ২০ শতাংশ, বর্তমানে সেখানে তা বেড়ে হয়েছে ৪০ শতাংশ। ওদিকে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা আইএলও-ও জানিয়েছে, বাংলাদেশে তরুণদের মধ্যে অন্তত ২৫ শতাংশই বেকারÑ যাদের সংখ্যা প্রায় তিন কোটি।

করোনাকালে ঠিক কত মানুষের চাকরি বা কর্মসংস্থান হয়েছে সে ব্যাপারেও প্রকাশিত রিপোর্টে সংশয়ের প্রকাশ ঘটেছে। বিশ্লেষকরা অবশ্য সরকারের দেয়া পরিসংখ্যানকে সঠিক মনে করেন না। তাদের মতে বেকার এবং দারিদ্র্য উভয়ের হারই বাস্তবে অনেক বেশি। উদাহরণ দিতে গিয়ে রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০১৮-১৯ থেকে ২০২০-২১ পর্যন্ত তিন অর্থবছরে অন্তত ৩০ লাখ মানুষকে চাকরি দিয়ে বিদেশে পাঠানো সরকারের পরিকল্পনা ছিল। অন্যদিকে বাস্তবে এক লাখেরও কম মানুষকে পাঠানো সম্ভব হয়েছে। বিদেশ থেকে চাকরি হারিয়ে বরং কয়েক লাখ মানুষ দেশে ফিরে এসেছে। দেশের ভেতরে কর্মসংস্থান করার ক্ষেত্রেও সরকার সফল হতে পারেনি। স্বাভাবিক সময়ে সরকারি ও বেসরকারি খাতে প্রতি বছর অন্তত ৭ লাখ মানুষের চাকরি বা কর্মসংস্থান হয়ে থাকে। কিন্তু করোনার কারণে সব মিলিয়েও এক লাখ মানুষের চাকরি হয়নি। বরং বহু নারী-পুরুষ চাকরি হারিয়েছে। এমন অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতেই তথ্যাভিজ্ঞরা মনে করেন, সব মিলিয়ে ৮ কোটিরও বেশি মানুষ বর্তমানে বেকার বা কর্মহীন অবস্থায় রয়েছে।

বলার অপেক্ষা রাখে না, এটা কোনো সাধারণ খবর নয়। সরকারের থিংক ট্যাংক হিসেবে পরিচিত সংস্থা পরিকল্পনা কমিশনের জিইডি বা সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ এবং বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর দেয়া পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে প্রকাশিত রিপোর্টে তথ্যগুলো জানানো হয়েছে। সংস্থা দুটি এক রিপোর্টে জনিয়েছে, বাংলাদেশের ৩৬ দশমিক এক শতাংশ মানুষ বহুমাত্রিক দারিদ্র্যের শিকার। এই রিপোর্টের ভিত্তিতে অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, সাম্প্রতিক সময়ে উন্নয়ন তথা দারিদ্র্যের ধারণাগত পরিবর্তন হয়েছে। নতুন ধারণা অনুযায়ী শুধু প্রবৃদ্ধিনির্ভর উন্নয়ন হলেই চলবে না, বৈষম্য কমিয়ে এনে সাম্যের ভিত্তিতেও উন্নয়ন করতে হবে। আর এজন্য জীবনযাত্রার অনেক কিছুকেই বিবেচনায় নিতে হবে।

অর্থনৈতিক উন্নয়নের এই নতুন মাপকাঠি বা মানদন্ডের ভিত্তিতে গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে দরিদ্র্র মানুষের সংখ্যা শুধু অনেক বাড়েনি, করোনার কারণে এখনও আশংকাজনকভাবে বেড়েই চলেছে। লক্ষ্যণীয় বিষয় হলো, শতকরা হিসাবে পার্থক্য থাকলেও সকল সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানই স্বীকার করেছে, করোনার কারণে বাংলাদেশে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। আমরা মনে করি, দরিদ্র মানুষের সংখ্যা আট কোটি ছাড়িয়ে যাওয়ার খবর অত্যন্ত ভীতিকর। কারণ, করোনার প্রভাবে সমগ্র বিশ্বকেই বর্তমানে মহা সংকট পার হতে হচ্ছে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা আইএলও’র হিসাবে বিশ্বের ৫০ শতাংশ মানুষ একই সংকটের শিকার হয়ে চাকরি তথা জীবিকা হারাতে পারে। বাংলাদেশেও চাকরি হারিয়ে বেকার হতে পারে কয়েক লক্ষ মানুষ।

একই কারণে ভয়ে পিছিয়ে যাওয়ার পরিবর্তে সরকারের উচিত গার্মেন্টসহ বিভিন্ন শিল্পের মালিকদের সঙ্গে সমঝোতার মাধ্যমে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সকল শিল্প-কারখানা চালু করার ও চালু রাখার এবং উৎপাদন ও রফতানি বাড়ানোর লক্ষ্যে তৎপর হয়ে ওঠা, যাতে নতুন করে আর কাউকে বেকার না হতে হয় বরং সকল সেক্টরে মানুষের জন্য জীবিকার ব্যবস্থা তথা চাকরির সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে। আমরা আশা করতে চাই, সরকার সচেষ্ট হতে বিলম্ব করবে না এবং বাংলাদেশ করোনার সংকটের পাশাপাশি দারিদ্র্য কাটিয়ে উঠতেও সক্ষম হবে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ