শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

খাদ্যসঙ্কটের শঙ্কায় দেশ

চলমান বৈশ্বিক সঙ্কটের কারণেই দেশে খাদ্য পরিস্থিতি নিয়ে ক্রমেই উদ্বেগ বাড়ছে। চুক্তি অনুযায়ি চাল ও গম আমদানি এখন পর্যন্ত অপর্যাপ্ত। মোট চুক্তির ৭৪ শতাংশ খাদ্যশস্য এখনো দেশে আসেনি। অপরদিকে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের পূর্ভাবাস দিয়ে বলেছে, গত বছরের তুলনায় এবার ২৫ লাখ টন চাল উৎপাদন কম হবে। কমবে গম ও ভুট্টার উৎপাদন। এছাড়া কৃষকের কাছ থেকে ধান সংগ্রহ কম হয়েছে প্রায় পৌনে ৪ লাখ টন।

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সম্প্রতি খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির বৈঠকে নিরাপদ মজুতের পরিমাণ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে। সেখানে স্বাভাবিক খাদ্য নিরাপত্তা মজুতের পরিমাণ ১৩ লাখ টন এবং সঙ্কটকালীন মজুতের পরিমাণ ১৪ লাখ টন নির্ধারণ করা হয়। বর্তমান খাদ্য নিরাপত্তা মজুতের পরিমাণ সাড়ে ১০ লাখ টন। কিন্তু এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোন উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি নেই।

জানা গেছে, গত ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত গম আমদানি হয়েছে ১ লাখ ৫৪ হাজার টন। এর মধ্যে রাশিয়া থেকে ৫০ হাজার টন এবং বুলগেরিয়া থেকে ১ লাখ ২ হাজার টন। অপরদিকে বেসরকারিভাবে চাল আমদানি হয়েছে ১ লাখ ৬১ হাজার টন এবং গম ৩ লাখ ৫৬ হাজার টন। এদিকে বাজারে নিয়ন্ত্রণহীন মূল্য পরিস্থিতি বিরাজ করছে। দেশ ও বিশ্ব উভয় বাজারেই পণ্যের দাম বাড়ছে। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর থেকে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এ তিন বছরে বিশ্ববাজারে চালের রপ্তানি মূল্য টনপ্রতি থাইল্যান্ডে ৩ হাজার ২৪৮ টাকা (২৯ মার্কিন ডলার), ভারতে বেড়েছে ১ হাজার ১২০ টাকা (১০ ডলার)। অপরদিকে ইউক্রেনে গমের রপ্তানি মূল্য টনপ্রতি বেড়েছে ১৩ হাজার ৪৪০ টাকা (১২০ মার্কিন ডলার)। একইভাবে রাশিয়ায় গমের মূল্য বেড়েছে ১৪ হাজার ৬৭২ টাকা (১৩১ মার্কিন ডলার)। এক্ষেত্রে প্রতি মার্কিন ডলার ধরা হয়েছে ১১২ টাকা। যা স্মরণকালের ভয়াবহ মূল্যপরিস্থিতির কথায় স্মরণ করিয়ে দেয়। 

বিশ্ববাজারে মূল্য বৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে দেশের বাজারের ওপর। মোটা চাল কেজিতে খুচরা পর্যায়ে ১৮ দশমিক ৩৩ টাকা এবং পাইকারি ১৭ দশমিক ৭১ টাকা বেড়েছে। একই সময়ে আটার খুচরা মূল্য কেজিতে ২২ দশমিক ৭০ টাকা এবং পাইকারিতে ২১ দশমিক ৫৬ টাকা বৃদ্ধি পায়। এই অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির কারণে মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের ওপরে চলে গেছে। যা নিম্ন ও মধ্যম শ্রেণির ভোক্তাকে চরম বিপাকে ফেলছে। ফলে কৃষকরা সরকারের কাছে ধান বিক্রিতে খুব বেশি আগ্রহ দেখায়নি। এছাড়া কোনো কোনো অঞ্চলে প্রাকৃতিক দুর্যোগে উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ধান সংগ্রহ কম হয়েছে।

তবে খাদ্যমন্ত্রী বলেছেন, এবার কৃষক ধানের ভালো দাম পেয়েছে। ধান কেনার মূল লক্ষ্যই থাকে একটা প্রতিযোগিতামূলক বাজার তৈরি করা, যাতে কৃষক ন্যায্যমূল্যে ধান বিক্রি করতে পারে। ধান ছাড়াও ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সিদ্ধ চাল ১১ লাখ টন সংগ্রহের বিপরীতে ১১ লাখ ২১ হাজার ৯১০ টন এবং আতপ চাল ৫০ হাজার টনের বিপরীতে ৫৫ হাজার ২০৮ টন সংগ্রহ হয়েছে। কিন্তু মন্ত্রীর এই দাবির সাথে বাস্তবতার মূল্য যৎসামান্যই। কারণ, কৃষকরা এবার ধানের দাম নিয়ে সন্তষ্ট হতে পারেন নি।

মূলত, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণেই গোটা বিশ্বেই খাদ্যপণ্যের দাম অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত না হওয়ার কারণেই বাজারে কৃত্রিম সঙ্কটও সৃষ্টি হয়েছে। নানাবিধ জটিলতা ও প্রতিকূলতার কারণে উৎপাদনও কমেছে ব্যাপকভাবে। এমতাবস্থায় আগামী দিনের সম্ভাব্য খাদ্যসঙ্কট মোকাবেলায় খাদ্যের নিরাপদ মজুদ গড়ে তোলার কোন বিকল্প নেই। অন্যথায় সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ