শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

আজ কুমিল্লায় বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ

গতকাল শুক্রবার কুমিল্লার একটি রেস্টুরেন্টে বিভাগীয় সমাবেশ উপলক্ষে বিএনপি আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন            -সংগ্রাম

মোহাম্মদ জাফর ইকবাল ও রেজাউল করিম রাসেল, কুমিল্লা থেকে : জ্বালানি তেল ও নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যেমূল্যর অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি, ভোলা-মুন্সিগঞ্জ-নারায়নগঞ্জ-যশোরে দলীয় কর্মসূচিতে পুলিশের গুলীতে নেতা-কর্মীদের হত্যা, দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে গত ১২ অক্টোবর চট্টগ্রামের পলোগ্রাউন্ডে সমাবেশের মধ্য দিয়ে বিএনপি দুই মাসব্যাপী বিভাগীয় সমাবেশের কর্মসূচি শুরু করে। তারই ধারাবাহিকতায় আজ শনিবার  কুমিল্লায় গণসমাবেশ করবে বিএনপি। এটি বিএনপির ৮ম বিভাগীয় গণসমাবেশ। আগামী ৩ ডিসেম্বর রাজশাহীতে বিভাগীয় সমাবেশ শেষে ১০ ডিসেম্বর রাজধানী ঢাকায়  হবে মহাসমাবেশ । ইতিপূর্বে অনুষ্ঠিত সবকটি গণসমাবেশে সরকারি দলের পক্ষ থেকে  ধর্মঘট, অবরোধ, বাধা, হুমকি ধামকি থাকলেও কিছুটা ব্যতিক্রম কুমিল্লা সমাবেশের ক্ষেত্রে । এখানে মারধর হুমকি ধামকি থাকলেও প্রকাশ্যে কোনো ধর্মঘট বা অবরোধ নেই। তারপরও গত কয়েকদিন থেকেই শহরে জড়ো হতে শুরু করে নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষ। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় সমাবেশস্থল টাউন হল ময়দানে দেখা যায় হাজারো নেতা কর্মীর ঢল। আয়োজকরা বলছেন, আজ কুমিল্লার গণসমাবেশে লাখো মানুষের উপস্থিতি ঘটবে। সরকারি দলের কোনো বাধাই নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষদের আটকিয়ে রাখতে পারবে না।  

সূত্র মতে,গণসমাবেশগুলোতে বিএনপির নেতাকর্মীদের সবচেয়ে বেশি বেকায়দায় ফেলেছিল হঠাৎ করে ডাক দেওয়া পরিবহন ধর্মঘট। সব শেষে গত শনিবার দলটির সিলেট বিভাগের গণসমাবেশের সময়ই এক চিত্র দেখতে পেয়েছেন তারা। এ জন্য আগাম  প্রস্তুতি হিসেবে 

 

অনেকে দুই দিন আগেই চলে এসেছেন।  আজকের সমাবেশে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা, কুমিল্লা উত্তর জেলা, কুমিল্লা মহানগর এবং চাঁদপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা অংশ নেবেন।  তবে এর বাইরে ফেনী, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর জেলার নেতাকর্মীও গণসমাবেশে যোগ দিচ্ছেন।  বিভাগীয় এই গণসমাবেশকে ঘিরে এরই মধ্যে উজ্জীবিত হয়ে উঠেছেন বিএনপির স্থানীয় নেতা-কর্মীরা। কুমিল্লা নগরী থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলেও হঠাৎ প্রাণ ফিরে পেয়েছে দীর্ঘদিন ঝিমিয়ে থাকা দলটি। এজন্য সমাবেশ সফল করতে ৫টি ইউনিটের নেতা-কর্মীরা দিনরাত প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন।

কুমিল্লা জেলা বিএনপির আহবায়ক এবং সাবেক সংসদ সদস্য আমিনুর রশীদ ইয়াছিন বলেন, লক্ষাধিক নেতাকর্মী-সমর্থকের সমাগম ঘটবে, তাই টাউন হল মাঠে জায়গা না হবে না, আমরা নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে মাইক সেটিং করেছি, নগরীর সবকটি পয়েন্ট থেকেই কেন্দ্রিয় নেতাদের বক্তব্য শোনা যাবে। তিনি বলেন, যারা সমাবেশস্থলে কর্মী সমর্থক দ্বারা জায়গা দখল করেছেন তারা মৌসুমী রাজনীতিবীদ, কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ তাদের বিষয়ে অবগত আছেন। আমাদের টার্গেট স্বাগতিক জেলা হিসেবে আমরা যেকোন মূল্যে সমাবেশ সফল এবং সার্থক করবে।

পিছু হটেছে সরকার: গত ১২ অক্টোবর চট্টগ্রামের গণসমাবেশের মাধ্যমে বিএনপির বিভাগীয় এই কর্মসূচি শুরু হয়। চট্টগ্রামের সমাবেশে পথে পথে বাধা দেয়া হয়। এরপর ময়মনসিংহ সমাবেশে অঘোষিত ধর্মঘট ডেকে জনসমাগম ঠেকানোর চেষ্টা হয়। খুলনা, রংপুর, বরিশাল ও ফরিদপুরের সমাবেশের বাধার তীব্রতা আরো বাড়ে। তবে কুমিল্লায় সমাবেশে ভিন্ন চিত্র দেখা গেল। এখানে ধর্মঘট অবরোধ নেই।  তবে হুমকি ধামকি মারধর রয়েছে। জানতে চাইলে বিভাগীয় সমাবেশের দলনেতা বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু বলেন, ধর্মঘট ডাকা না হলেও সমাবেশে আসতে নেতা-কর্মীদের নানাভাবে বাধা দেওয়া হচ্ছে। এ বাধা উপেক্ষা করেই শনিবার  কুমিল্লা স্মরণকালের বৃহৎ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। ধর্মঘট না দেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমাদের মাথাব্যথা নেই। একদিন আগেই হাজার হাজার নেতা-কর্মী সমাবেশ মাঠে উপস্থিত হয়েছেন। ধর্মঘট ডেকেও জনস্রোত ঠেকাতে না পেরে সরকার পিছু হটেছে। 

কুমিল্লা বিএনপির নেতাদের প্রত্যাশা, সাম্প্রতিককালে দেশের বিভিন্ন বিভাগীয় শহরে দলটির গণসমাবেশের সময় হঠাৎ পরিবহন ধর্মঘটের ঘটনা ঘটলেও কুমিল্লায় এমনটা হবে না। কারণ কুমিল্লার ভৌগোলিক অবস্থানই তাদের এই চিন্তা থেকে রেহাই দিয়েছে। এ জন্য পরিবহন ধর্মঘটের বিষয়টি নিয়ে ভাবেছন না তারা। গণসমাবেশ ঘিরে অন্যান্য বিভাগের মতো ঘটনা ঘটলে উল্টো সমস্যায় পড়বে সরকার ও পরিবহন মালিকরা। কারণ দেশের অর্থনীতির লাইফলাইন হিসেবে খ্যাত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মধ্যবর্তী স্থান কুমিল্লা। এ ছাড়া ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের মধ্যবর্তী স্থানও কুমিল্লা। কুমিল্লা জেলার বাইরে চাঁদপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে নেতাকর্মীরা কুমিল্লায় আসতেও খুব একটা সমস্যায় পড়তে হবে না। ট্রেন ও সড়কের বেশ কয়েকটি পথে দুই জেলা থেকে দলটির নেতাকর্মীদের কুমিল্লায় প্রবেশের সুযোগ রয়েছে। তবে এর পরও দূরের নেতাকর্মীদের সমস্যার বিষয়টি মাথায় রেখে আগাম প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন বলে জানিয়েছেন দলটির একাধিক নেতা।

একই সুরে কথা বলেছেন কুমিল্লার পরিবহন নেতারাও। তাদের ভাষ্য, বিএনপির কুমিল্লার বিভাগীয় সমাবেশকে কেন্দ্র করে অন্য বিভাগগুলোর মতো পরিবহন ধর্মঘট হবে- এমন চিন্তা মাথায়ও আনছেন না তারা। ভৌগোলিক কারণে কুমিল্লায় যাতায়াত বন্ধ করে দেওয়া হলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে দেশের অর্থনীতি।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কুমিল্লা জেলা সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের সভাপতি কবির আহমেদ বলেন, আমরা বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে ধর্মঘটে যাব না। এটাই আমাদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। আর পরিবহন বন্ধ থাকলে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন মালিকরা। তাই তাদের (বিএনপির) বিষয়টি নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। আমরা স্বাভাবিক নিয়মের পরিবহন ব্যবস্থা চালিয়ে যাব।  

মুখর টাউন হল মাঠ : শুক্রবার সকালে দেখা যায়, সমাবেশের ১ দিন আগেই খ- খ- মিছিল নিয়ে বিভিন্ন এলাকার নেতা-কর্মীরা টাউন হল মাঠের দিকে আসছেন। তাদের অনেকের গায়ে স্থানীয় নেতাদের ছবি সম্বলিত টি-শার্ট। মাথায় ক্যাপ। হাতে বিভিন্ন দাবি সম্বলিত প্ল্যাকার্ড। এই টাউন হল মাঠে রাত যাপনের অনুমতি মেলেনি। দূর-দূরান্ত থেকে আসা নেতা-কর্মীদের থাকার জন্য শহরের বেশ কিছু কমিউনিটি সেন্টার ও হোটেল বুকিং দেওয়া হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় নিতান্ত অপ্রতুল। তা সত্ত্বেও ১ দিন আগে সমাবেশ উপলক্ষে ২৫ হাজারের বেশি নেতা-কর্মী কুমিল্লায় চলে এসেছেন বলে জানা গেছে।

কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও বহিষ্কৃত বিএনপি নেতা মনিরুল হক সাক্কু বলেন, মনোহরগঞ্জ, লাকসাম, চিতষী, শাহরাস্তি ও চান্দিনাসহ বিভিন্ন বিভিন্ন উপজেলা থেকে এরমধ্যে ২০ হাজারের বেশি লোক চলে এসেছে। তাদের অনেকের জন্য তার পক্ষ থেকে খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। 

কুমিল্লা মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক উৎবাদুল বারী আবু জানান, সমাবেশে আসা নেতা-কর্মীদের খাওয়ার জন্য ১০টি গরুও কেনা হয়েছে।  কুমিল্লা মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মনির হোসেনের ভাষ্য, ৫টি সাংগঠনিক জেলা থেকে স্বেচ্ছাসেবক দলের প্রায় ৫০ হাজার নেতা-কর্মীর যোগ দেওয়ার কথা এই সমাবেশে। এদিকে সমাবেশস্থল টাউন হল মাঠে এরমধ্যে তৈরি হয়ে গেছে মঞ্চ।

গতকাল খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে  কুমিল্লার সমাবেশ স্থলে যোগ দিয়েছে  নেতা কর্মীরা। কুমিল্লার লাকসাম উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আবুল কালামের অনুসারীরা তার নামে মিছিল ও প্ল্যাকার্ড নিয়ে এসেছেন। একই এলাকায় সাবেক সংসদ সদস্য আনোয়ার উল আজিমের নামেও মিছিল হয়েছে। চাঁদপুরের মতলব উত্তর ও দক্ষিণের বিএনপি নেতা মুহাম্মদ জালাল উদ্দিন তার অনুসারীদের নিয়ে গণসমাবেশে এসেছেন। একই রঙের টি-শার্ট পরে তারা বড় একটি মিছিল করেছেন। চাঁদপুর জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তফা খান বলেন, বৃহস্পতিবার থেকে কুমিল্লায় অবস্থান করছি। এই গণসমাবেশে সরকার ভীত হয়ে পড়েছে। মানুষ বিএনপির কর্মসূচির সঙ্গে একমত হয়ে এখানে জড়ো হচ্ছে। মাঠে থাকার অনুমতি না থাকলেও নেতাকর্মীরা নিজেদের মতো করে থাকছেন।

সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখবেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সমাবেশে লক্ষাধিক লোকের সমাগম ঘটবে বলে ধারণা করছেন বিএনপি নেতারা। এদিকে আজ সমাবেশের মুল কর্মসূচী হলেও গতকাল শুক্রবার থেকেই টাউন হল মাঠে তিল ধারণের ঠাঁই নেই। হাজার হাজার বিএনপি নেতাকর্মী এবং সমর্থকের পদচারণায় মুখরিত এখন গোটা নগরী। অপরদিকে সমাবেশে কেন্দ্রীয় নেতাদের সামনে কুমিল্লা সাংগঠনিক বিভাগের অধীনে বিভিন্ন সংসদীয় আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা পৃথক পৃথক শো-ডাউনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। নিজেদের জনসমর্থন জাহির করতে মাঠের চতুরপাশে নেতারা দুইদিন আগেই ব্যানার ফেস্টুন টানিয়ে কর্মী-সমর্থক দ্বারা জায়গা দখল করে রেখেছন। তাছাড়া হাজার হাজার কর্মী সমর্থকের সমাগম ঘটিয়ে কুমিল্লাকে বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে প্রমাণ করতে সব প্রস্তুতি গ্রহণ করেছেন এ সাংগঠনিক বিভাগের নেতারা।   

মাঠেই জুমার নামাজ আদায়  : কুমিল্লা টাউন হল মাঠে শুক্রবার পৃথক জামাতে জুম্মার নামাজ আদায় করেছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। একই মাঠে ১০ মিনিটের ব্যবধানে দুটি জামাত হয়েছে। মাঠের পশ্চিম পাশের ত্রিপলের নিচে এক জামাতে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশারফ হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক মিয়া, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আমিন উর রশিদ ইয়াছিনসহ দলের জেলা, মহানগরসহ চাঁদপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে আসা নেতাকর্মীরা অংশ নেন। মাঠের পূর্বপাশে প্যান্ডেলের নিচে অপর জামাতে অংশ নেন কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও বহিষ্কৃত বিএনপি নেতা মনিরুল হক সাক্কু। ১টা ১৫ মিনিটের জামাতে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারাসহ কর্মীরা নামাজ আদায় করেন। এর আগেই ১টা ৫ মিনিটের জামাতে নামাজ আদায় করেন মনিরুল হক সাক্কু।

সাংবাদিক সম্মেলন  : এদিকে গতকাল  শুক্রবার বেলা ১১টায় কুমিল্লা নগরের খন্দকার হক ম্যানশনের পঞ্চম তলায় আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন  বলেন , সরকারের বিভিন্ন লোকজন বলছেন, খেলা হবে। এটা খেলা নয়, রাজনীতি। এই রাজনীতির মাধ্যমেই তারা দেশের ভেঙে পড়া অর্থনীতিকে মেরামত করতে চান। গণসমাবেশে জনস্রোত ঠেকাতে আওয়ামী লীগ বিভিন্ন ধরনের ফন্দি করছে বলে অভিযোগ করেন খন্দকার মোশাররফ। তিনি বলেন, কুমিল্লার জনগণ ফুসে উঠেছে। দ্রব্যমূল্যের দাম হু হু করে বেড়েছে। দেশ এখন সরকারের নিয়ন্ত্রণে নেই। সরকারকে জনগণ কুমিল্লার সমাবেশ থেকে লাল কার্ড দেখাবে। এই সরকারকে বিদায় নিতে হবে।

মোশাররফ হোসেন বলেন, কুমিল্লা এখন উৎসবের নগরী। মুক্তিকামী জনতা সমাবেশের এক দিন আগ থেকে সমাবেশস্থলে এসে পৌঁছেছে। এটা দেখে অবৈধ সরকার ও তাদের মদদপুষ্ট পুলিশ বাহিনী কুমিল্লা বিভাগের বিভিন্ন স্থানে নারকীয় তা-ব শুরু করেছে। তারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভাঙচুর ও হামলা করেছে।

সাংবাদিক সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লাহ বুলু, কুমিল্লা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক মিয়া, কেন্দ্রীয় বিএনপির ত্রাণ ও পুনর্বাসন সম্পাদক আমিন উর রশিদ ইয়াছিন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্যসচিব জসিম উদ্দিন, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক উদবাতুল বারী, সদস্যসচিব ইউসুফ মোল্লা, মহানগর বিএনপির সদস্য কাউছার জামান প্রমুখ।

লিখিত বক্তব্যে খন্দকার মোশাররফ বলেন, বিএনপির নেতা–কর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হেলমেট পরে সশস্ত্র অবস্থায় মোটরসাইকেল মহড়া ও হুমকি দেওয়া হচ্ছে। গায়েবি মামলাসহ নানা ধরনের ভয়ভীতি প্রদর্শন করছে।  মোশাররফ বলেন, দেশে এখন বিচারহীনতার সংস্কৃতি চলছে। মানুষ নায্য বিচার পাচ্ছেন না। জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে। এটা মানুষ আর সহ্য করতে পারছে না। এই কারণে বিএনপির নেতা–কর্মীদের দাবির সঙ্গে সাধারণ মানুষ এক হয়ে গণসমাবেশে আসছে। আমরা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন চাই। আওয়ামী লীগ নির্বাচনের সব কাঠামো ভেঙে দিয়েছে। স্থানীয় পর্যায়ের নির্বাচনগুলোতেও বিনাভোটে জয়ী হচ্ছে। অন্যরা নির্বাচন করতে পারছে না। ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। সমাবেশকে উপলক্ষে করে গোটা কুমিল্লা নগরী উৎসবের নগরীতে পরিণত হয়েছে উল্লেখ করে খন্দকার মোশাররফ বলেন,  এত বাধাবিপত্তির পরও আগের সাতটি সমাবেশ ব্যাপক শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে। কথা দিলাম, কুমিল্লার সমাবেশও শান্তিপূর্ণ হবে।

সাংবাদিক  সম্মেলনে কুমিল্লা ও আশপাশের জেলার বিভিন্ন এলাকায় নেতা–কর্মীদের হয়রানি, মারধর, গ্রেপ্তারের চিত্র তুলে ধরে বলা হয়, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরে গণসমাবেশের প্রচারপত্র বিতরণের সময় ছাত্রদল নেতা রফিকুল ইসলাম ওরফে নয়ন মিয়াকে পুলিশ পেটের সঙ্গে শর্টগান ঠেকিয়ে নির্মমভাবে গুলী করে হত্যা করেছে। ১৭ সেপ্টেম্বর মনোহরগঞ্জ উপজেলার বিপুলাসাবে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লাহ বুলুর ওপর হামলা করা হয়। ২১ নবেম্বর রাতে লাকসাম পৌর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মনির আহমেদের বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর করা হয়। ১৯ নবেম্বর মনোহরগঞ্জ উপজেলার খিলা ইউনিয়নের বাতাবাড়িয়া গ্রামে ছাত্রদল নেতা লিটনের বাড়ি ভাঙচুর করা হয়। লাকসাম পৌরসভার ১ নং ওয়ার্ড যুবদল নেতা আমান উল্লাহকে তুলে নিয়ে লাকসাম রেলক্লাবে মারধর করে টাকা পয়সা ও মুঠোফোন নিয়ে যায়। চাঁদপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সলিম উল্লাহর বাড়িতে পুলিশি তল্লাশি করা হয়। ২৩ নবেম্বর থেকে চাঁদপুর জেলার হাজীগঞ্জ ও শাহরাস্তিতে ঘরে ঘরে তল্লাশি ও গণগ্রেপ্তার করা হয়। হাজীগঞ্জ উপজেলায় ১০ নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

দলে ফিরতে মরিয়া সাক্কু : কুমিল্লায় বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ সফল করতে ২৫ লাখ টাকা বরাদ্দ রেখেছেন। নেতা-কর্মীদের থাকার ব্যবস্থা করেছেন ৭৮টি ফ্ল্যাটে। কেন্দ্রীয় নেতাদের জন্য রেখেছেন নিজের হোটেল। কয়েক দিন ধরেই তিন বেলা নেতা-কর্মীদের খাবারের আয়োজন করছেন। পুরো নগরে তার নামে শত শত বিলবোর্ড, ব্যানার ও ফেস্টুন। কুমিল্লা টাউন হল মাঠের চারপাশ তার ছবিতে সয়লাব। এই ব্যক্তি হচ্ছেন কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মনিরুল হক (সাক্কু)। যদিও দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে সিটি নির্বাচনে অংশ নেয়ায় তাকে বিএনপি থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। আজ কুমিল্লা টাউন হল মাঠে বিএনপির গণসমাবেশের আগে নিজের কর্মকা- দিয়ে আলোচনায় উঠে এসেছেন মনিরুল হক। দলে ফেরার জন্য হঠাৎ তিনি তৎপর হয়েছেন বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা। বিএনপির উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশনা পেয়েই মাঠে নেমেছেন বলে জানিয়েছেন মনিরুল হক। জানা যায়, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন মনিরুল হক। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে অংশ নেন তিনি। ফলে গত ১৯ মে তাকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করে দল। একই সঙ্গে দলের নেতা–কর্মীদের তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে বারণ করা হয়। গত ১৫ জুন অনুষ্ঠিত নির্বাচনে মনিরুল হক আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আরফানুল হক রিফাতের কাছে ৩৪৩ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন। এরপর তিনি হঠাৎ দলীয় রাজনীতিতে সক্রিয় হঠে ওঠেন। যুবদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী, বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী, ৭ নবেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস পালন করেন। কুমিল্লায় বিভাগীয় গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে তিনি ১০ নবেম্বর থেকে রাজনীতির মাঠে সরব হয়ে ওঠেন।

মনিরুলের অনুসারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কয়েক দিন ধরে মনিরুল হক গণসমাবেশ সফল করতে নগরের বিভিন্ন এলাকায় প্রচারপত্র বিলি করে আসছেন। তার কুমিল্লা নগরের নানুয়াদিঘির পাড়ের বাসভবনে দলীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে বৈঠক করছেন। বাসার পাশের ১৪ তলা ভবনের ৭৮টি ফ্ল্যাটে দলীয় নেতা-কর্মীদের থাকার ব্যবস্থা করেছেন। তাদের গত বুধবার রাত থেকে খাওয়াচ্ছেন। শুক্রবার রাত পর্যন্ত ২০ হাজার নেতা-কর্মী খেয়েছেন। সকালে খিচুড়ি, দুপুরে মুরগি, রাতে ডিম, ভর্তা ও ডাল খাওয়ানো হচ্ছে। গতকাল দুপুরে কুমিল্লা টাউন হল মাঠে নেতা-কর্মীদের নিয়ে ভাত খেয়ে সভাস্থল পরিদর্শন করেন তিনি। পুরো নগরে তার নামে পোস্টার, ব্যানার ও ফেস্টুন লাগানো হয়েছে। কুমিল্লা সার্কিট হাউস এলাকায় তার একটি বিলবোর্ড ছিঁড়ে ফেলার ঘটনায় গতকাল সন্ধ্যায় তিনি কুমিল্লার কোতোয়ালি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।

বিএনপির কুমিল্লা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক মিয়া বলেন, মনিরুল হকের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়নি। তিনি নিজ থেকে এসব কাজ করছেন।

জানতে চাইলে রাতে মনিরুল হক সাক্কু বলেন, দল আমাকে বহিস্কার করলেও আমি বিএনপির সঙ্গে আছি। দলের মহাসচিব ও ভাইস চেয়ারম্যান বুলু ভাই (বরকত উল্লাহ) আমাকে কাজ করতে বলেছেন। তাই আমি কাজ করছি। এই গণসমাবেশ উপলক্ষে দলীয় নেতা-কর্মীদের জন্য ২৫ লাখ টাকার ওপর বরাদ্দ রেখেছি। এখন মনে হয় আরও বেশি খরচ হবে। বুধবার রাত থেকে বিএনপির নেতা-কর্মীদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করেছি। এখন দলের কর্মী হয়ে আছেন উল্লেখ করে মনিরুল বলেন, বিএনপির প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে আমাদের পরিবার ও আমি জড়িত। কুমিল্লায় আদি বিএনপি আমরা। গণসমাবেশে দুই হাজার লোক নিয়ে টাউন হল মাঠে থাকব। বাকিরা সড়কে থাকবে। আমি মঞ্চে যাব না। উঠব না। বললেও যাব না। দলের কর্মী হয়ে আছি এখন। বিএনপিকে সংগঠিত করে এগিয়ে নেয়াই আমার কাজ। দলে আমাকে ফিরিয়ে নেবে, এই বিশ্বাস আমার আছে।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু বলেন, সাক্কুর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার হয়নি। তবে তিনি দলের জন্য কাজ করছেন। কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়র থাকাকালে মনিরুল হক নিজ দলের নেতার চেয়ে অন্য দলের নেতাকে বেশি প্রাধান্য দিতেন বলে আলোচনা আছে। যে কারণে দলের সঙ্গে তার দূরত্ব বাড়ে। স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষক আহসানুল কবীর বলেন, মনিরুল অতীতের অবস্থান থেকে সরে এসে বিএনপির মূলধারার রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার চেষ্টায় এই গণসমাবেশে তার সর্বোচ্চ শক্তি নিয়োগ করছেন। দলে ফেরার জন্যই তার এই প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা। 

সতর্ক আইনশৃঙ্খলা বাহিনী : এদিকে বিএনপির সমাবেশ নিয়ে আইনশৃংখলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে জেলা পুলিশ সর্তক রয়েছে বলে জানান কুমিল্লার পুলিশ সুপার (এসপি) আবদুল মান্নান। তিনি বলেন, সাধারণ মানুষের যেনো সমস্যা না হয় সেটি আমরা বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি।  আমাদের বাড়তি নজরদারি থাকবে সড়কগুলোতে, যেনো যানজট সৃষ্টি না হয়। তিনি বলেন, আমরা আশা করি কুমিল্লায় শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ শেষ হবে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ