শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

অনাবৃষ্টি ও প্রচণ্ড তাপদাহ ॥ চিংড়ি চাষিদের কপালে চিন্তার ভাঁজ

পাইকগাছা সংবাদদাতা: পাইকগাছায় চিংড়ি চাষিরা বিপর্যয়ের মুখে পড়তে যাচ্ছে। একদিকে অনাবৃষ্টি অন্যদিকে প্রচণ্ড তাপদাহে চিংড়ি চাষিদের কপালে এখন চিন্তার ভাজ। উপজেলায় প্রায় সর্বত্রই কম বেশি চিংড়ি চাষ হয়ে আসছে। দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে উপজেলা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। চিংড়ি উৎপাদনের পাশাপাশি এই খাতে অসংখ্য বেকার যুবকের কর্মসংস্থান হয়েছে। এই অঞ্চলে অর্থনীতিতে মারাত্মক বিপর্যয় নেমে আসবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। পাশাপাশি অসংখ্য শ্রমিক যুবক কর্মসংস্থানের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়ে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়বে। উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় চিংড়ি ঘেরের সংখ্যা তিন হাজার ৯৪০টি। যার আয়তন ১৭ হাজার ৭৫ হেক্টর। গত বছর ভাইরাসজনিত কারণে মোড়কের পরও পাঁচ হাজার ৭২০ টন চিংড়ি উৎপাদন হয়েছে। চলতি বছর বাগদা পোনার ব্যাপক সংকট ও অধিক দামের কারণে অধিকাংশ চিংড়ি ঘেরে অনেকেই পোনা ছাড়তে পারেনি। এছাড়া মে মাস থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত মৎস্য প্রজননজনিত কারণে মাদার আহরণ বন্ধ থাকায় এ বছর চিংড়ি চাষ নিয়ে হতাশায় ভুগছে চাষিরা। গত বছর এক হাজার পোনার দাম ছিল ২০০-৩০০ টাকা, চলতি বছর যার দাম ৯০০-১০০০ টাকা। জানা গেছে, পোনার দাম বৃদ্ধি, অনাবৃষ্টি ও প্রচ- তাপদাহের কারণে প্রায় প্রতিটি ঘেরে বাগদা চিংড়িতে মড়ক দেখা দিয়েছে। মৎস্য ঘেরে এক ধরনের কাটা শেওলার জন্ম হয়ে থাকে যেটা বাগদা চিংড়ির খাদ্য ও পুষ্টি যোগায়। চলতি মৌসুমে এক ধরনের পোকা এই শেওলা কেটে অধিকাংশ ঘের উজাড় করে দিয়েছে। খাদ্যসংকট, অনাবৃষ্টি, অধিক তাপ, প্রাকৃতিক খাদ্যের ঘাটতি, সব মিলিয়ে চিংড়ি চাষিদের পথে বসার উপক্রম হয়েছে। নতুন করে যে সময় পোনা ছাড়ার ভরা মৌসুম ঠিক সেই সময় সরকার নদী বা সাগর থেকে রেনু পোনা আহরণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। চিংড়ি চাষিরা জানান, প্রাকৃতিক পোনা বাগদা চাষিদের জন্য একটি আশীর্বাদ। এই পোনা জীবাণুমুক্ত এবং মৃত্যুর হার কম এর পাশাপাশি দ্রুত বর্ধনশীল। সরকার নদী বা সাগর থেকে রেনু পোনা আহরণ নিষিদ্ধ করায় সুযোগটাকে কাজে লাগায় হ্যাচারি কোম্পানিগুলো। পরিমল দাশ জানান, চিংড়ি চাষে কোনো কোনো সময় ক্ষতিগ্রস্ত হলেও প্রতি বছর এ সময় চাষিরা সাদা মাছের পোনা ছেড়ে ক্ষতির পরিমাণ কিছুটা পুষিয়ে নিতেন। কিন্তু বৃষ্টি না হওয়ার কারনে পানির লবণাক্ততা এত পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে যে এবার সাদা মাছের পোনা ছাড়তে সবাই শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। 

অতিরিক্ত লবণযুক্ত পানির জন্য সাদা মাছ মারা যায়। সব মিলিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে সম্ভাবনাময় এ চিংড়ি খাত। 

চিংড়ি চাষি আনিচুর রহমান বলেন, ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে চিংড়ি চাষ করেছি। কিন্তু বৃষ্টি না হওয়ায় চিংড়ি ঘেরে পানি কম থাকা, তাপ মাত্রা বেশি ও লবণাক্ততার জন্য রেনু ছাড়তেই মারা যাচ্ছে। তাছাড়া গত বছরের তুলনায় চিংড়ির বাজার মূল্য কম। সব মিলিয়ে চিংড়ি চাষিরা বিপর্যয়ের মুখে আছেন।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ