বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪
Online Edition

করচ গাছের মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্য্য

॥ আসগর মতিন ॥

হিজলেরই মতো আরেকটি গাছ করচ। কিন্তু এটা ততটা পরিচিত নয়। গত বছর কিশোরগঞ্জ হাওড় এলাকা ট্রাভেল করতে গিয়েছিলাম। সেখানে ট্রলার থেকে পানিতে ডুবন্ত কতগুলো গাছ দেখে অবাক হই। হিজলের মত দেখতে গাছগুলোর গোড়া পানিতে তলিয়ে আছে, কিন্তু গাছগুলো জীবন্ত ও প্রাণবন্ত। জানতে পারি এর নাম করচ। মাঝারি আকারের, বহুবর্ষজীবী, দ্রুত-বর্ধনশীল, ঘন ডালপালা সমৃদ্ধ চিরসবুজ উদ্ভিদ। এটি বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও ভারতের গাছ। কিশোরগঞ্জই শুধু নয় আমাদের হাওড় এলাকার একান্তই স্থানীয় গাছ করচ। জলজ বৃক্ষ কথাটা অদ্ভুত শোনালেও এতে অত্যুক্তি নেই নিঃসন্দেহে। হাওড়ের অথৈ পানিতে অনেকেই গাছটিকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে অবাক হন। আসলে সুদীর্ঘকালের জীবন সংগ্রামে পুরো ভেজা মৌসুম জুড়ে, দীর্ঘ সময়--বছরের প্রায় ৬ মাসেরও বেশি সময় ধরে ভরপুর পানিতে টিকে থাকার জন্য অভিযোজিত হতে হয়েছে তাকে। নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, কিশোরগঞ্জের হাওড় ও রাতারগুলসহ সিলেটের হাওড়গুলোতে অবস্থানকারী এই বৃক্ষটি খুব একটা উচ্চতা পায় না, মোটের ওপর ১০-১৩ মিটারের মতো। হিজলের মতোই ঝোপালো গড়নের ছোট বা মাঝারি আকারের গাছটি কলোনি করে, অর্থাৎ একসাথে অনেকগুলোকে অবস্থান করতে দেখা যায়। ডালপালা-পাতাবহুল গাছটির কা- কিছুটা বাদামি-রেশমি। করচের বৈজ্ঞানিক নাম: ডালবার্গিয়া রেনিফর্মিস (Dalbergia Reniformis)। পরিবার বা ফ্যামিলী ফ্যাবাসি (Fabaceae)সাব ফ্যমিলি হচ্ছে ফেবোইডায়ে, অর্ডার বা বর্গ হচ্ছে ফেবালেস (Fabales) গণ বা জেনাস হচ্ছে ডালবার্গিয়া (Dalbergia),, আর প্রজাতি বা স্পেসিজ হচ্ছে ডি. রেনিফর্মিস(D.Reniformis)। 

এটি ছড়ানো-মাথা, পত্রমোচী গাছ। যৌগপত্র পক্ষল, পত্রিকা ৫-৭টি, গাঢ় সবুজ। ডালপালা-পাতাবহুল গাছটির কাণ্ড কিছু বাদামি-রেশমি। তবে কিছু দিনের মধ্যে কাণ্ডের রেশমি ভাবটি আর থাকে না। পাতাগুলো এর ছোট ছোট, আয়ত-বল্লমাকার, সামান্য পুরু। একেকটি পক্ষলের আকার ১৫-৩২ সেমি, পক্ষলে পাতাসংখ্যা ৭-৯, একান্তর, অর্থাৎ পাতাগুলো একই উৎস থেকে না গজিয়ে একটার পর একটা গজায়। জোড়ায় জোড়ায় ৩-৪ জোড়া জন্মে।  করচের ফুলের মৌসুম বসন্তকাল। ১০-১৩ সেমি লম্বা কাক্ষিক আর বাদামি ও সূক্ষ্ম রোমাবৃত মঞ্জরীদণ্ডে ফুলগুলো সাদা রঙের; ফ্যাবাসি পরিবারে যা হয়, শীমফুল আকৃতির, তবে বেশ ছোট। বৃতি ৫-দন্তক, পাপড়ি ঠোঁটের মতো বাঁকানো। এর ফল উদ্ভিদবিদ্যার ভাষায় শীম, ২.৫-৩ সেমি-এর মতো লম্বা। এগুলো কিডনির মতো দেখতে। শুকিয়ে গেলে গাঢ় বাদামি রঙ ধারণ করে। বীজ সাধারণত ১টি, তবে ২টিও বিচিত্র নয়। এর বীজগুলোও ফ্যাবাসি পরিবারের অধিকাংশ সদস্যের মতো। এরও বংশ বৃদ্ধি চলে বীজের মাধ্যমে। করচের আরেকটি দেশীয় নাম কুরেস। গাছটির অনেক গুণ। তার মধ্যে শ্রেষ্ঠ গুণ--ঝড়ঝঞ্ঝা আর প্রবল বাতাস থেকে বসতবাড়িকে রক্ষা করা। এ ছাড়া ভূমিক্ষয় রোধে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। লাকড়ি হিসেবেও ব্যবহার করা চলে। ওষুধি গুণাবলিও রয়েছে করচ গাছের। করঞ্জা এবং করচ সম্পূর্ণ ভিন্ন বৃক্ষ। অনেকেই দুটোকে এক মনে করে ভুল করে থাকেন।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ