শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

কালিয়াকৈরে এক রাতে ৩ গ্রামের ৯ বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ॥ এলাকায় আতঙ্ক

কালিয়াকৈর (গাজীপুর) সংবাদদাতা: গাজীপুরের কালিয়াকৈরে রাতের আঁধারে ৩ গ্রামের ৯ বাড়িতে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। আগুনে পুড়ে গেছে, গবাদিপশুসহ বাড়ির আসবাবপত্র। এঘটনায় এলাকা জুড়ো চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। সুষ্ঠু তদন্ত ও অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন, স্থানীয়রা। ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন, স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন। 

গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার ভান্নারা পশ্চিমপাড়া গ্রামের কুলছুম ও রবিউল দম্পত্তি হাঁস-মুরগী ও ছাগল পালন করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। প্রতিদিনের মতো বৃহস্পতিবার রাতে ঘরের মধ্যে হাস-মুরগী ও ছাগল বেঁধে পাশের ঘরে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। মধ্যরাতে হঠাৎ ছাগলগুলোর চিৎকারে ঘুম ভেঙে যায় ওই দম্পতির। ঘর থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করেই বাহির থেকে ঘরের দরজা আটকানো দেখতে পান। জালানা দিয়ে দেখতে পান পাশের ঘরে দাউ দাউ করে জ্বলছে আগুন। পরিবারের সকলের চিৎকারের প্রতিবেশীরা এসে দরজা খুলে দেন এবং পাশের ঘরে আগুন নেভানোর চেষ্টা। ততক্ষণে ঘরসহ সকল আসবাবপত্র, ৫টি ছাগল ও ৮ মণ ধান পুড়ে ছাই হয়ে যায়। 

ক্ষতিগ্রস্ত ভান্নারা পশ্চিমপাড়া গ্রামের কুলসুম বেগম জানান, রাতে হঠাৎ ছাগলের চিৎকার শুনে ঘর থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করে বাহির থেকে দরজা আটকানো দেখে আতঙ্কিত হয়ে যান পরিবারের সকলেই। বাড়ি থেকে পাশের ঘরে আগুন থেকে জীবন বাঁচানোর জন্য চিৎকার শুরু করলে পাশের বাড়ি স্বজনরা এগিয়ে এসে দরজা খুলে দেন। প্রতিবেশীর সকলেই আগুন নেভানোর চেষ্টা করতে থাকে। আগুন নেভাতে নেভাতে ওই ঘরে থাকা ৫ টি ছাগল, ১৫ /১৬টি মুরগী ও  ৮ মণ ধানসহ সকল আসবাবপত্র পুড়ে ছাই হয়ে যায়। দুটি ছাগলের শরীরের বিভিন্ন অংশ ঝলসে গেলেও এখনও জীবিত রয়েছে। 

কুলসুমের স্বামী রবিউল ইসলাম জানান, ঘরের দরজা বাহির থেকে আটকানো দেখে সকলেই আতঙ্কিত হয়ে যান তারা। তাদের কোন শত্রু না থাকলেও অবস্থা দেখে গ্রামের প্রত্যেকেই ভয়ে আছেন।  

শুধু ওই বাড়িতেই নয়, এক বাড়ির আগুন নিভাতেই অন্য বাড়িতেও আগুন দেখতে পান প্রতিবেশীরা। এভাবে একই সময়ে পাশাপাশি ভান্নারা, ধোপাচালা ও রাখালিয়াচালা গ্রামের ৯ বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। এঘটনায় ওই তিন গ্রামের মানুষের মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। 

ধোপাচালা গ্রামের আয়নাল হকের বাড়িতে গিয়েও দেখা যায়, তার একটি মিনি গার্মেন্টসের মালামাল রাখার ঘরের মধ্যে আগুন দেয়ায় পুড়ে গেছে বেশ কিছু ফেব্রিক্স ও এক্সেসরিজ। এছাড়া ওই বাড়িতে একটি পোল্ট্রি খামারেও আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। এসময় ওই খামারে বিভিন্ন অংশ পুড়ে গেলেও স্থানীয়রা আগুন নেভালে মুরগীগুলো প্রাণে বেঁচে যায়। এঘটনার সুষ্ঠু তদন্তসহ আপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন ক্ষতিগ্রস্ত আয়নাল হক। 

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ক্ষতিগ্রস্তদের বাড়ি পরিদর্শন করেছেন। এসময় নাশকতামূলক কাজের সাথে জড়িত অপরাধীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তার আশ্বাস দেন তারা। এসময় মৌচাক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান লোকমান হোসেন জানান, গত তিন/চার দিন আগেও উপজেলার মৌচাক ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডে বামনবাগ এলাকায় একইভাবে ৩ বাড়িতে অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটায় দুর্বৃত্তরা। কোন মাদকসেবী চক্র অথবা কোন নাশকতাকারী চক্র করছে কিনা তা প্রশাসনকে খতিয়ে দেখাসহ জড়িতদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন তিনি। কালিয়াকৈর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান সেলিম আজাদ ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ক্ষতিগ্রস্তদের উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে যতদ্রুত সম্ভব আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হবে। পাশাপাশি নাশকতার সাথে যেই জড়িত থাকুক তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা নেয়ার জন্য পুলিশকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন বলেও জানান তিনি। 

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ