শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

পবিত্র রমযান মাস

চাঁদ দেখা গেলে একদিন পর, আগামী ৩ এপ্রিল থেকে বাংলাদেশে রমযান মাসের শুরু হবে। পবিত্র এ মাসটি আল্লাহ তা’লার সান্নিধ্য ও রহমত লাভ করার এবং গুনাহ থেকে মাফ পাওয়ার জন্য শ্রেষ্ঠ মাস হিসেবে পরিচিত। সিয়াম বা রোযা সম্পর্কে অল্প কথায় বলা যায়, সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সব ধরনের পানাহার থেকে বিরত থাকাই রমযান মাসে সুস্থ ও প্রাপ্তবয়ষ্ক মুসলিম নরনারীদের জন্য আল্লাহর বিধান। রোযা রেখে সকল ধরনের অন্যায় করা থেকেও মুসলিমদের বিরত থাকতে হয়। এগুলোর কোনোটিই আসলে সহজ কাজ নয়। কিন্তু কোনো মানুষ দেখবে না বা জানবে না জানার পরও মুসলিমরা লুকিয়ে কিছুই পানাহার করেন না। কোনো অন্যায় বা গুনাহর কাজে লিপ্ত হন না। কারণ, তারা জানেন, মানুষ না দেখলেও আল্লাহ সবই দেখছেন। আর রোযা যেহেতু আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য সেহেতু কষ্ট যতোই হোক, কোনো মুসলিম রোযা ভাঙেন না। রোযা নষ্টও করেন না। এর মধ্য দিয়ে মুসলিমরা একদিকে অনাহারক্লিষ্ট গরীব মানুষের জীবন যন্ত্রণা বুঝতে ও অনুভব করতে শেখেন, অন্যদিকে পরীক্ষা দেন ধৈর্য ও সংযমের। রোযাদাররা অন্যদের প্রতি সহমর্মিতার শিক্ষাও লাভ করেন। কারণ, রোযা মানুষকে ধৈর্য এবং সহমর্মিতার শিক্ষা দেয়।

রমযানে আল্লাহ অবশ্য তাঁর মুসলিম বান্দাদের জন্য নানামুখী কল্যাণ রেখেছেন। এ মাসে মুসলিমরা শুধু পানাহার থেকে বিরত থাকেন না, একই সঙ্গে চিন্তা ও কার্যক্রমের প্রতিটি ক্ষেত্রেও নিজেদের পরিশীলিত রাখেন তারাÑ অন্যের ক্ষতির চিন্তা তো এড়িয়ে চলেনই, কোনো অন্যায় কাজে যেমন অংশ নেন না, তেমনি কারো সঙ্গে বিবাদেও জড়ান না। সব মিলিয়েই রমযানের দিনগুলোতে মুসলিমরা আত্মশুদ্ধির এবং আল্লাহতা’লার নৈকট্য ও সন্তুষ্টি লাভের চেষ্টায় নিয়োজিত থাকেন। আল্লাহতা’লাও দান করেন প্রচুর পরিমাণে। তিনি গুনাহগার বান্দাদের প্রতি বিশেষ অনুগ্রহ দেখান এবং তাদের মাফ করে দেন। ভালো কাজ না করার কারণে যারা দরিদ্র ও হীন অবস্থায় থাকে তারাও এ মাসের মাহাত্ম্যে এবং তওবা-ইস্তেগফার ও ইবাদতের মাধ্যমে সম্মানিত ও মর্যাদাবান হয়ে উঠতে পারেন। হয়ে ওঠেনও।

রমযান মাসের গুরুত্ব ও মর্যাদার দ্বিতীয় কারণ পবিত্র লাইলাতুল কদর। ২৬ রমযানের দিন শেষে, অর্থাৎ ২৭ তারিখে, অনেকের মতে রমযান মাসের শেষ ১০ দিনের যে কোনো বেজোড় তারিখের রাতে মহানবী  হযরত মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর পবিত্র কুরআন নাজিল শুরু হয়েছিল। আল-কুরআন এমন একটি মহাগ্রন্থ, যার মধ্যে আল্লাহর নাজিল করা পূর্ববর্তী সকল গ্রন্থের সারবস্তু এবং ভূমন্ডল ও নভোমন্ডলের যাবতীয় জ্ঞান-বিজ্ঞানের মৌল নির্দেশনা একত্রিত করা হয়েছে। বস্তুত আকাশ ও পৃথিবীসহ সমগ্র সৃষ্টি জগতে এমন কোনো বিষয় বা রহস্য নেইÑ যার উল্লেখ আল-কোরআনে না আছে। পবিত্র এ গ্রন্থটিকে আল্লাহ মানুষের জন্য জীবন বিধান হিসেবে পাঠিয়েছেন। মক্কার নিকটবর্তী হেরা পর্বতের গুহায় শুরু হওয়ার পর দীর্ঘ ২৩ বছর ধরে পবিত্র কুরআন অবতীর্ণ হয়েছিল। স্বয়ং আল্লাহতা’লা বলেছেন, ‘লাইলাতুল কদর হলো এক হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ।’ সুরা কদরে আল্লাহ আরো বলেছেন, ‘এতে প্রত্যেক কাজের জন্য ফেরেশতাগণ ও রূহ অবতীর্ণ হয় তাদের পালনকর্তার নির্দেশক্রমে।’ 

এই রাতে বেশি বেশি ইবাদতের তাগিদ দিয়েছেন রাসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম। তিনি নিজেও কদরের সারারাত আল্লাহর ইবাদতে কাটাতেন। শুধু এই একটি রাত্রি নয়, রাসুলুল্লাহ (সা.) রমযানের শেষ ১০দিনই ইতিকাফ করতেন, যার অর্থ পৃথিবীর সবকিছু ছেড়ে কেবলই আল্লাহ রাব্বুল আ’লামীনের প্রশংসায় মগ্ন থাকা এবং তাঁর মাগফিরাত ও রহমতের জন্য মোনাজাত করা। গুনাহর জন্য মাফ চাওয়া। এজন্যই কদরের রাতকে যারা পাবেন তারা খুবই সৌভাগ্যবান এবং তাদের উচিত আল্লাহর কাছে সর্বান্তকরণে নিজেদের সমর্পণ করা, তাঁর পানাহ চাওয়া। শিক্ষা চাকরি ব্যবসা এবং শারীরিক সুস্থতা ও সহজ-সরল জীবন যাপনের সাধ্য দেয়ার জন্য আল্লাহতা’লার কাছে বিশেষভাবে মোনাজাত করা। 

রমযানের পবিত্র মাসে মুসলিমদের উচিত আল্লাহর মাগফিরাত ও রহমতের জন্য মোনাজাতে নিমগ্ন থাকা এবং গুনাহ থেকে মাফ ও মুক্তি চাওয়া। কারণ, লোভ-লালসা, হিংসা-বিদ্বেষ ও দ্বন্দ্ব-সংঘাতপূর্ণ জীবনে মানুষ প্রতিদিনই অনেক গুনাহ তথা অপরাধ করে। অন্যদিকে ফেরেশতাদের মাধ্যমে আল্লাহ গুনাহগার বান্দাদের মাফ করে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। ব্যাভিচারী, মুশরিক ও নাস্তিক-মুরতাদ ছাড়া অন্য বান্দাদের সব নেক ও ভালো আশা-আকাক্সক্ষা রমযান মাসে আল্লাহ পূরণ করেন। এজন্যই প্রত্যেক মুসলিমের উচিত নিজেদের পাশাপাশি জনগণের কল্যাণ এবং বাংলাদেশের সমৃদ্ধির জন্য আল্লাহর কাছে প্রাণখুলে মোনাজাত করা। সরকারের উচিত প্রতিটি বিষয়ে সততার সঙ্গে তৎপর থাকা, যাতে রোযাদার মুসলিমদের কষ্ট কম হয়। ব্যবসায়ীদের উচিত অন্তত এই একটি মাসে রোযাদারসহ জনগণকে কষ্ট না দেয়া। 

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ