শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

ছুটির দিনে রাজধানীতে বিধিনিষেধ নিয়ে মাথাব্যথা ছিল না কারো

ইবরাহীম খলিল : শোনা গিয়েছিল ছুটির দিন হলেও শুক্রবার থেকে কড়া বিধিনিষেধ পালন করা হবে। কিন্তু কই সেরকম কিছু দেখা গেল না গতকাল শুক্রবার। রাজধানীর শপিংমল, গণপরিবহন এবং রেস্টুরেন্টগুলোর সামনে ‘নো মাস্ক, নো সার্ভিস’ নোটিশ টানানো থাকলেও বাস্তবচিত্র দেখা গেছে  উল্টো। সেখানে যারা যাচ্ছেন তাদের অনেকের মুখেই মাস্ক নেই। এমনকি রেস্টুরেন্টকর্মী, গণপরিবহনের হেলপার, যাত্রী, পথচারীদের অনেকের মুখে ছিল না মাস্ক। থাকলেও হাতে কিংবা থুতনিতে ছিল ঝোলানো। কাঁচাবাজারগুলোতে দেখা গেছে একই চিত্র।
এদিকে এক দিনে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা চার হাজার ছাড়িয়েছে। এ ছাড়া নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে নতুন রোগী শনাক্তের হারও ১২ শতাংশের বেশি। আর ৮৮ দিন পর আবারও এক দিনে করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা ১০ ছাড়াল। বিপরীতে দেশজুড়েই স্বাস্থ্যবিধি মানায় চরম উদাসীনতা দেখা গেছে। তবে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বিধিনিষেধ কার্যকরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ও সংশ্লিষ্টদের তৎপরতা দেখা গেছে। স্বাস্থ্যবিধি না মানায় অনেককে গুনতে হয়েছে জরিমানাও।
সরকারি বিধি-নিষেধে বলা হয়েছে, অফিস-আদালত, দোকান, শপিং মল, কাঁচাবাজার, হোটেল-রেস্তোরাঁসহ জনসমাগম বেশি হয় এমন স্থানে সবাইকে বাধ্যতামূলক মাস্ক পরতে হবে। মাস্ক না পরলে আর্থিক জরিমানাসহ জেলের বিধান করা হয়েছে। কিন্তু রাজধানীতে স্বাস্থ্যবিধি মানায় দেখা গেছে উদাসীনতা। সরকারের পক্ষ থেকেও ছিল না কঠোর নজরদারি।
দেখা গেছে, আগের মতোই মানুষজন প্রবেশ করছে আর দেখতে চাওয়া হচ্ছে না টিকার সনদ। যদিও অনেক রেস্টুরেন্টের প্রবেশপথে সতর্কবার্তা হিসেবে ‘নো মাস্ক, নো সার্ভিস’ ও ‘টিকা কার্ড ছাড়া প্রবেশ নিষেধ’ লেখা রয়েছে।
মগবাজারের কয়েকটি রেস্টুরেন্টে খাবার খেতে আসা বেশির ভাগ মানুষের কাছেই ছিল না টিকা সনদ। ‘টিকা সনদ’ আছে কি না তা জানতেও চাননি সেখানকার কোনো কর্মী। এছাড়া রেস্টুরেন্টের অধিকাংশ কর্মীর মুখেও ছিল না মাস্ক। রাজধানীর বাজারগুলোয় বিক্রেতার বেশির ভাগ মাস্ক পরতে সরকারি নির্দেশনা জানেনই না। কাঁচাবাজারগুলোয় গাদাগাদি করেই চলে বেচাকেনা। বিক্রেতাদের পাশাপাশি বেশির ভাগ ক্রেতাকে মাস্ক পরা অবস্থায় দেখা যায়নি। অনেকের সঙ্গে মাস্ক থাকলেও ব্যবহারে ছিল উদাসীনতা। মাটিকাটা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, শাক-সবজি, মাছ, মাংস ও মুদি দোকানিরা মাস্ক না পরেই পণ্য বিক্রি করছেন।
রাজধানীর শাহবাগ এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন ডিএমপির নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ডা. সঞ্জীব দাস। তিনি বলেন, পৌনে ২ ঘণ্টার অভিযানে ৫০-৬০ জনের প্রত্যেকেরই মাস্ক পরায় ত্রুটি দেখা যায়। কেউ থুতনিতে মাস্ক পরেছেন, কেউ ম্যাজিস্ট্রেট দেখে পকেট থেকে মাস্ক বের করেছেন। এ ছাড়া অধিকাংশের কাছেই ছিল না মাস্ক। তারা নানা অজুহাত দিয়েছেন। অভিযানে ১১ জনের নামে মামলা দেওয়া হয়েছে। তাদের ১০০-২০০ টাকা করে অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে। কয়েকজনকে মৌখিকভাবে সতর্ক করা হয়েছে। পরে মাস্ক পরবে এ মর্মে মুচলেকাও নেওয়া হয়েছে। আমাদের মূল উদ্দেশ্য সবাইকে সতর্ক করা।
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে নতুন করে আরোপ করা বিধিনিষেধের দ্বিতীয় দিন শুক্রবার রাজধানীতে স্বাস্থ্যবিধি মানা নিশ্চিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতাও তেমন একটা ছিল না।
রাজধানীর বাসাবো, খিলগাঁও পুলিশ ফাঁড়ি, মালিবাগ, মগবাজার, রামপুরা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় স্বাস্থ্যবিধি মানা নিশ্চিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো সদস্যের তৎপরতা দেখা যায়নি। বিভিন্ন গন্তব্যমুখী লোকজনকে অপেক্ষমাণ দেখা গেলেও স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে শিথিলতা দেখা যায়। খিলগাঁও থেকে পুলিশ ফাঁড়িতে রিকশায় যাতায়াতকালে চালক রহমানের কাছে জানতে চাওয়া হয় মাস্ক না পরার কারণ। তিনি বলেন, ‘রিকশা চালানোর সময় মাস্ক পরা যায় না; কষ্ট হয়।’
বাগানবাড়ি বাজারের বিক্রেতা আলাল বলেন, ‘আগেরবার মাস্ক পরার জন্য পুলিশের টহল ছিল, এখন সেই টহল নেই। ফলে মাস্ক না পরলেও কেউ কিছু বলে না। আর না পরলেও কোনো সমস্যা নাই। সরকারের নির্দেশনার কথা বলা হলে তিনি বলেন, ‘সরকারের নির্দেশনা শুনছি। এখন মাস্ক ছাড়া থাকলেও পরে পরব।’
স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন এবং মাস্ক পরার বিষয়ে সব মসজিদে জুমার নামাজের খুতবায় মুসল্লিদের সচেতন করতে ইমামদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সরকার।
প্রথম দিকে নির্দেশনায় বাসে অর্ধেক যাত্রী নিয়ে চালাচলের নিদের্শনা দেয়া হলেও পরবর্তী সময়ে বাসের যত আসন তত যাত্রী নিয়ে চলাচলের সিদ্ধান্ত দেয়া হয়েছে। শুক্রবার সরকারি ছুটির দিন হওয়ায় বাসগুলোতে যাত্রীদের তেমন ভিড় দেখা যায়নি।
রাইদা বাসের হেলপার বলেন, ‘ছুটির দিন হওয়ায় সকাল থেকে রাস্তায় যাত্রী ছিল কম। সব যাত্রীর মুখে মাস্ক থাকে না, তবে সরকারের পক্ষ থেকে এখনও কোনো কড়াকড়ি না থাকায় যাত্রীদের মুখে মাস্ক না থাকলেও কিছু বলা হয় না।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ