শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

বিশ্ব ঐতিহ্য ষাটগম্বুজ মসজিদে পর্যটকদের ভিড়

খুলনা ব্যুরো : শীত মৌসুমে পর্যটকদের আনাগোনা বেড়েছে বিশ্ব ঐতিহ্য ষাটগম্বুজ মসজিদে। মুসলিম স্থাপত্যের এই অনন্য নিদর্শন দেখতে প্রতিদিনই অসংখ্য দেশী-বিদেশী দর্শনার্থীরা আসছেন বাগেরহাটের ষাটগম্বুজে। অন্যান্য দিনের থেকে ছুটির দিনে দর্শনার্থীদের পরিমাণ অনেক বেশি থাকে। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত এই স্থাপনায় দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড় ছিল। কেউ এসেছেন বন্ধু-বান্ধবের সাথে, কেউ পরিবার-পরিজন নিয়ে, কেউ বা একা এসেছেন বিশ্বি ঐতিহ্য ষাটগম্বুজ দেখতে। প্রায় সাড়ে ৬শ’ বছর আগে নির্মিত মসজিদ, মসজিদ চত্বরে থাকা যাদুঘর, বিভিন্ন রাইডস, প্রশস্ত সড়ক, নানা জাতের ফুল এবং মসজিদের পশ্চিম পাশের বিশালাকৃতির ঘোড়াদিঘি দেখে মুগ্ধ সবাই। তবে সংখ্যা বেশি হওয়ায় দর্শনার্থীদের  সামাল দিতে হিমশিম খেতে হয় প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর কর্তৃপক্ষকে।
প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, শীত আসার আগ মুহূর্ত থেকেই ষাটগম্বুজ মসজিদে দর্শনার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে। শীতের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রচুর দর্শনার্থী আসেন এই স্থানে। এছাড়া সারা বছরই কমবেশি দর্শনার্থী ষাটগম্বুজ ভ্রমণ করে থাকেন। এ বছর ১৯ আগস্ট থেকে ২৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৮০ জন বিদেশীসহ এক লক্ষ ১০ হাজার ৫৩০ জন দর্শনার্থী ষাটগম্বুজ ভ্রমণ করেছেন। এর মাধ্যমে ১৯ লক্ষ ৫২ হাজার ৬০৫ টাকা রাজস্ব আয় করেছে সরকার। বিপুল পরিমাণ এই দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা ও সার্বিক সহযোগিতায় প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের পাশাপাশি ট্যুরিস্ট পুলিশও দায়িত্ব পালন করছেন।
ষাটগম্বুজ ঘুরতে আসা সিরাজগঞ্জ এলাকার দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী লিলা আক্তার বলেন, এই প্রথম ষাটগম্বুজ আসলাম। ভাইয়া, বড় আপুসহ মোট চারজন আসছি আমরা। এখানে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলোর সাথে ছবি তুলতে আমার খুব ভাল লাগছে।
ঢাকা ইডেন মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী কারিশা নাদিয়া পুনম বলেন, ষাটগম্বুজ মসজিদ কমপ্লেক্সের মধ্যেই রয়েছে বাগেরহাট যাদুঘর। যার ফলে এখানে আসলে আসলে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন দেখার পাশাপাশি বাগেরহাটের ইতিহাস ঐতিহ্য সম্পর্কেও জানা যায়। বাগেরহাট যাদুঘর ঘুরে, খানজাহান আমলের কুমিরের চামড়া দেখে আমার খুব ভাল লেগেছে। সুযোগ পেলে আবারও আসতে চাই ষাটগম্বুজে।
টাঙ্গাইল জেলার আয়নাপুর এলাকা থেকে আসা রবিউল ইসলাম নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, বইয়ে ষাটগম্বুজ সম্পর্কে পড়েছি, টাকাতে  এই মসজিদের ছবি দেখেছি। এখন সামনা-সামনি দেখে খুব ভাল লাগছে। বইয়ে যেটা পড়েছি, সেই শিক্ষাটাকে ঝালাই করেও নিতে পারলাম। তিন বছরের শিশু সন্তান নিয়ে আসা হাফিজুর রহমান ও ময়না আক্তার দম্পতি বলেন, ষাটগম্বুজ এসে অনেক ভাল লেগেছে। তবে এই কমপ্লেক্সের মধ্যে শিশুদের জন্য আরও কিছু রাইডস এবং খাওয়া দাওয়ার জন্য কোন বিশেষ জায়গা থাকলে খুব ভাল হতো।
ঢাকা থেকে পরিবার পরিজন নিয়ে আসা ব্যবসায়ী খালিদ হোসেন বলেন, ষাটগম্বুজের আশপাশে উন্নতমানের কোন আবাসিক হোটেল-মোটেল নেই। ভালমানের খাবার হোটেলও নেই এখানে। সুপেয় পানিরও সংকট রয়েছে কমপ্লেক্সের মধ্যে। এসব সংকট সমাধান করতে পারলে আরও স্বাচ্ছন্দ্যে বেড়ানো যেত ষাটগম্বুজে।
আইনজীবী তুষার কান্তি বসু বলেন, ছুটির দিনে পরিবার পরিজন নিয়ে এসেছি এখানে। ষাটগম্বুজ মসজিদ দেখে আমাদের সবার খুবই ভাল লেগেছে। তবে বাগেরহাট যাদুঘরটিকে আরও সমৃদ্ধ করা প্রয়োজন।
মাওলানা ফারুক হোসাইন নামের আরেক দর্শনার্থী বলেন, ষাটগম্বুজ মসজিদে আসলে বোঝা যায়, জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় মুসলিমদের কি পরিমাণ দখল ছিল। যে আমলে ষাটগম্বুজ মসজিদের স্থাপত্য শৈলী যে কত উঁচুমানের তা অভিজ্ঞ স্থাপত্যবিদ ছাড়া বোঝার উপায় নেই। আমরা চাই যুগ যুগ ধরে টিকে থাকুক মুসলিম ঐতিহ্যের ধারক-বাহক ষাটগম্বুজ মসজিদ।
ট্যুরিস্ট পুলিশ বাগেরহাট জোনের উপ-পরিদর্শক ওয়ালিউর রহমান বলেন, বাগেরহাটের দর্শনীয় স্থানগুলোতে দর্শনার্থীরা যাতে নিরাপদে ভ্রমণ করতে পারে সেজন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। কেউ যাতে কোন রকম হেনস্তা বা হয়রানির শিকার না হয় সেজন্য ট্যুরিস্ট পুলিশ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে বলে জানান এই কর্মকর্তা।
বাগেরহাট জাদুঘরে কাস্টোডিয়ান মো. যায়েদ বলেন, ষাটগম্বুজ মসজিদ একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন স্থাপনা। এই স্থাপনার প্রতি দেশি-বিদেশী দর্শনার্থী ও গবেষকদের আগ্রহের কমতি নেই। যার ফলে প্রতিনিয়ত এখানে প্রচুর দর্শনার্থী আসেন। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় আমাদের জনবল অনেক কম। যার ফলে দর্শনার্থীদের চাপ সামলাতে আমাদের কিছুটা হিমশিম খেতে হয়। তারপরে আমরা সব সময় চেষ্টা করি দর্শনার্থীদের সব ধরনের সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করতে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ