শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

সরকার পতনের আন্দোলনে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে -মির্জা ফখরুল

স্টাফ রিপোর্টার : এক অদৃশ্য শক্তি দেশ চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। দেশের অবস্থার পরিস্থিতি তুলে ধরতে গিয়ে গতকাল শনিবার দুপুরে এক আলোচনা সভায় বিএনপি মহাসচিব এরকম অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, প্রতিমুহূর্তে প্রতিক্ষণে আমাদের উপরে খবরদারি করা হচ্ছে। কিছুক্ষণ আগে আমি নিচে জাতীয় প্রেসক্লাবের লাউঞ্জে চা খাচ্ছিলাম। একজন সাংবাদিক, আওয়ামী ঘরোনার। আজকে আওয়ামী ঘরোনার সাংবাদিকদের একটা নির্বাচন হচ্ছে। উনি বললেন যে, অদ্ভুত কান্ড এই আমরা সবাই তো আওয়ামী ঘরোনার। আমাদের কাছে ম্যাসেজ আসতে শুরু করেছে ‘অদৃশ্য জায়গা’ থেকে যে, অমুককে ভোট দিতে হবে, অমুককে ভোট দিতে হবে। অর্থাৎ সারভিলেন্সটা এবং এই অদৃশ্য শক্তির যারা আসলে এই দেশটাকে চালাচ্ছে তাদের ক্ষমতা, তাদের যাওয়ার রাস্তা এতো গভীরে চলে গেছে যে, তারা এদেশের মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করছে, এদেশের সমাজকে নিয়ন্ত্রণ করছে। এরকম একটা অবস্থার মধ্যে আমরা গণতন্ত্রের লড়াইটা করছি।
জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে রাজনীতিক অলি আহাদের ৯ম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এই আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয় ।
ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে অংশগ্রহণে সকল রাজনৈতিক দলের প্রতি আহ্বান রেখে মির্জা ফখরুল বলেন, সমস্ত রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ এখানে আছেন আমি তাদের কাছে অনুরোধ করবো যে, আমরা আমাদের ছোট-খাটো সমস্যাগুলো ভুলে যাই এই মুহূর্তে। আসুন না আমরা একসাথে এক হয়ে, ঐক্যবদ্ধ হয়ে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে আমাদের আশা-আকাক্সক্ষার যে স্বপ্নগুলো ছিলো সেগুলোকে আবার ফিরিয়ে আনার জন্য যেটা আমরা অর্জন করেছিলাম আমরা এক হয়ে একটা লড়াই করি, সংগ্রাম করি।
আমরা(বিএনপি) তো লড়ছি। আমরা আপনাদের কাছে এইটুকু আশা করবো এই লড়াইয়ে একটা ইস্যুতে অর্থাৎ গণতন্ত্রের জন্য লড়াই, সেই লড়াইয়ে আসুন আমরা একসাথে আসি। লেট আস ফাইট টুগেদার। আমরা একসাথে লড়াইটা করি এবং দেশকে এই ভয়াবহ অবস্থা থেকে বের করে নিয়ে আসি। এই ফ্যাসিস্ট সরকারকে পতন ঘটিয়ে আমরা একটা গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করি। তারপরে যার সেটা বুঝাপড়া তা সেটা করে নেবেন। অন্তত: একটা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় আমরা ফিরে আসি।
গণতন্ত্রের জন্য দলের চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার ত্যাগের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখনো তিনি গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করতে গিয়ে গৃহবন্দী হয়ে আছেন। এই বৃদ্ধ বয়সে অসুস্থ অবস্থায়ও তিনি এখনো লড়াই করছেন। আমাদের নেতা তারেক রহমান সাহেব মিথ্যা মামলাগুলোতে পড়ে নির্বাসিত হয়ে আছেন।
দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ৩৫ লাখ মামলা, সহস্রাধিককে হত্যা ও পাঁচ শতাধিককে গুম করার পর বিএনপি লড়াই করার কথাও তুলে ধরেন মির্জা ফখরুল।
অলি আহাদকে আপাদমস্তক একজন গণতান্ত্রিক নেতা হিসেবে অভিহিত করে তার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন বিএনপি মহাসচিব।
কুমিল্লার ঘটনার ইকবাল হোসেনের গ্রেফতারের প্রসঙ্গ টেনে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, বাংলাদেশে এখন ওরা(সরকার) বলে তাই ইতিহাস হয়। ওই যে, বছর আড়াই আগে কুর্মিটোলার হসপিটালের ওখানে এক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী, মোটামুটি দেখতে ভালো, স্বাস্থ্য-টাস্থ ভালো শক্তিশালী তাকে ধর্ষণ করা হলো। এতো বড় কথা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন নারী এভাবে ধর্ষিত হবে। সবাই মিলে প্রতিবাদে তখন সরকার সেই ধর্ষককে গ্রেফতার করল। তার নাম কি মজনু। ছবিটা কেমন? ওর চেহারা কেমন? দেখলে কী মনে হয় গায়ে কতখানি শক্তি। তারপরে যে হাসবে সামনে ৩/৪টা দাঁতই নাই। সেই লোককে ধর্ষণকারী বলে চালানো হলো। ঠিক এরকম ইকবাল (ইকবাল হোসেন) দেখছেন না এখন। তারপরে এতো বড় ঘটনা। আবার একটা লোক হাজির করে দিলেন। সেই লোক নাকী ভবঘুরে। তার মা বলেছেন, ও নেশাপান করে তো ১০/১২ বছর ধরে, ওর মাথা ঠিক নাই। পুলিশ বলছে, ওকে জিজ্ঞাসা করলে জবাব দেবে কী? বিশ্বাসই করা যাবে না। কারণ তার কথা-বার্তা উল্টা-পাল্টা। অর্থাৎ এমন একটা লোক হাজির করেছেন। সত্যি সত্যি পুলিশ বলছে- এই কিন্তু এই কাজ করেছে।
তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, ভিডিও ফুটেজ দেখি। কাদের? ওরা সাংবাদিকদেরকে দেখিয়েছে, দেখায়নি। সাধারণ কোনো মানুষ দেখেছে, দেখেনি। আমি যদি আজকে দাবি করি ওই ভিডিও ফুটেজ আমি দেখতে চাই, আমি যদি দাবি করি ভিডিও ফুটেজ প্রেসক্লাবে পাঠান। কোন সময় ইকবাল হোসেন ওই কোরআন শরীফ তুলেছে আর গদাটা নিয়েছে- ছবি দেখতে চাই। এই ছবি নাই। বাকী সব নাকী আছে এবং পুলিশ সাহেবরা বলছেন আমরা কি কি আবিষ্কার করেছি।
কৈ মজনু আর ইকবাল হোসেনের মধ্যে কোনো পার্থক্য আছে? এদের ইতিহাস হলো মজনু আর ইকবাল হোসেনেরে ইতিহাস। সেভাবে তারা ইতিহাস তৈরি করবার চেষ্টা করছে, সমস্ত ইতিহাসকে বিকৃত করে একটা পঙ্গু, কুজ্য, ন্যুজ্ব ধর্মবিরোধী ইতিহাস তৈরি করবার চেষ্টা করছে তখন অলি আহাদ আমাদের কাছে প্রাসঙ্গিক। কারণ অলি আহাদ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন, আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় তিনি ২/৩ বার জেল খেটেছেন।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, আমরা কুরআন অবমাননার বিচার চাই। তবে একটা মন্দিরেও কেউ হামলা করতে পারবে না, হিন্দু সম্প্রদায়ের ঘরে কেউ আগুন দিতে পারবে না। এ কথা কি আমরা বলতে পেরেছি, পারি নাই। না পারার অর্থ হচ্ছে ভারত এখানে যেভাবে রাজনীতি চায়, সেভাবে রাজনীতি হচ্ছে। আমরা পরিষ্কার বুঝতে পারছি, সরকার আগুন নিয়ে খেলতে চায়। এ খেলা আপনারা খেলবেন না। বাংলাদেশকে আপনারা বিপদের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন।
শারদীয়া দুর্গাপূজার মধ্যে গত ১৩ অক্টোবর ভোরে নানুয়া দীঘির পাড়ে দর্পন সংঘের পূজামন্ডপে হনুমানের মূর্তির কোলে মুসলমানদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কুরআন রাখা দেখে এলাকায় উত্তেজনা ছড়ায়। হামলা, ভাংচুর চালানো হয়। এই ঘটনায় পুলিশ গত বৃহস্পতিবার কক্সবাজার থেকে গ্রেফতার করে ভবঘুরে ও অপ্রকৃতিস্থ ইকবাল হোসেন এক যুবককে।
মরহুম রাজনীতিক অলি আহাদের মেয়ে বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানার সভাপতিত্বে ও ড. জাহিদ-উর রহমানের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ, রাষ্ট্র বিজ্ঞানী অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণের উদ্যোগে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের প্রতিবাদে গতকাল সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, এই সরকার জনগণের নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের তাদের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। তারা ১০ টাকা দরে চাল খাওয়ানো কথা বলেছিলো। এখন চালের কেজি ৭০ টাকা। তেলের দাম বেড়েছে, চিনির দাম বেড়েছে, ডালের দাম বেড়েছে। তাদের সেদিকে কোনো খেয়াল নাই। তারা নিজেরা লুটপাট করছে, পয়সা বানাচ্ছে, দুর্নীতি করছে। আমাদের স্পষ্ট দাবি চাল, ডাল, তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম কমাতে হবে।
ফখরুল বলেন, এই সরকার নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যেরে মূল্য কমাতে ব্যর্থ হয়েছে, তারা গরীব মানুষকে অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থান দিতে ব্যর্থ হয়েছে। শুধু তাই নয়, তারা জনগণের নিরাপত্তা দিতেও ব্যর্থ হয়েছে, তারা দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি অক্ষুণ্ন রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। এদের আর ক্ষমতায় থাকার কোনো অধিকার নেই।
মহানগর দক্ষিণের সভাপতি আবদুস সালামের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনুর পরিচালনায় মানববন্ধনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, মহানগর উত্তরের সভাপতি আমান উল্লাহ আমান, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, কেন্দ্রীয় নেতা ফজলুল হক মিলন, মীর সরফত আলী সপু, যুবদলের সাইফুল আলম নিরব, স্বেচ্ছাসেবক দলের আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, কৃষক দলের হাসান জাফির তুহিন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের গত নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন, মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হকসহ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ