বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

২৩ সেপ্টেম্বর দেশজুড়ে বিক্ষোভ

স্টাফ রিপোর্টার : দেশের ছয়টি সাংবাদিক সংগঠনের ১১ জন নেতার ব্যাংক হিসাব তলবের প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সাংবাদিকরা। এটি সাংবাদিকদের রাষ্ট্রের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেওয়ার গভীর ষড়যন্ত্র বলে মনে করছেন তারা। এ অবস্থায় এমন সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে চিঠি প্রত্যাহারের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতি দাবি জানানো হয়েছে। অন্যথায় সাংবাদিক সংগঠনগুলো কঠোর থেকে কঠোরতম কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবে। এরই ধারাবাহিকতায় আগামী ২৩ সেপ্টেম্বর বেলা ১১টায় দেশজুড়ে বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দেওয়া হয়েছে।
গতকাল রোববার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাব চত্বরে আয়োজিত এক সমাবেশ থেকে সাংবাদিক নেতারা এসব কথা বলেন। সাংবাদিক নেতাদের ব্যাংক হিসেব তলবের মাধ্যমে পেশার মর্যাদাহানির প্রতিবাদে এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়। সমাবেশে (বিএফইউজে) বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মোল্লা জালাল কর্মসূচি ঘোষণা করে বলেন, ২৩ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার ঢাকাসহ সারাদেশে বেলা ১১টায় বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। দেশের সব সাংবাদিক সংগঠন নিজ নিজ অবস্থান থেকে এই কর্মসূচি পালন করবেন।
এর আগে সমাবেশে বক্তব্য দেন জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন, সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি রিয়াজ উদ্দিন আহমদ, শওকত মাহমুদ, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন বিএফইউজের সভাপতি এম আব্দুল্লাহ, সহসভাপতি মোদাব্বির হোসেন, মহাসচিব নুরুল আমিন রুকন, ডিইউজের সভাপতি কাদের গণি চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক মো. শহিদুল ইসলাম, সাবেক সভাপতি এলাহি নেওয়াজ খান সাজু, বিএফইউজে ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব আব্দুল মজিদ, ডিইউজের একাংশের সাবেক সভাপতি আবু জাফর সূর্য, সম্পাদক ফোরামের সভাপতি রফিকুল ইসলাম রতন, জাতীয় প্রেসক্লাবের যুগ্ম-সম্পাদক মাইনুল আলম ও কোষাধ্যক্ষ শাহেদ চৌধুরী, ডিআরইউর সভাপতি মোরসালীন নোমানী, সাধারণ সম্পাদক মসিউর রহমান খান, ডিআরইউর সাবেক সাধারণ সম্পাদক শুক্কর আলী শুভ, ডিইউজের যুগ্ম সম্পাদক খায়রুল আলম, অপরাধবিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন ক্র্যাবের সাবেক সভাপতি আবুল খায়ের, বর্তমান সভাপতি মিজান মালিক, সাধারণ সম্পাদক আলা উদ্দিন আরিফ, অর্থনৈতিক রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি শারমিন রিনভী প্রমুখ।
সমাবেশে জাতীয় প্রেসক্লাব সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক যে কারো ব্যাংক হিসেব তলব করে চিঠি পাঠাতে পারে, যখন তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকে। আমরা এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে কথা বলেছিলাম, তিনি বলেছেন জানি না। আমাদের তথ্যমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও নাকি জানেন না। তাহলে এই কাজ কে করে?
ব্যাংক হিসেব তলবকে গভীর ষড়যন্ত্র উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা মনে করছি এর মাধ্যমে সাংবাদিকদেরকে সরকারের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিতে ভেতর থেকে একটি ষড়যন্ত্র হচ্ছে। এর মাধ্যমে জনগণের কাছে, পৃথিবীর কাছে একটি ভুল বার্তা যাচ্ছে। তাই রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন সংস্থার কাছে আমাদের দাবি, আপনারা খুঁজে বের করুন এরা কারা?
আমাদের বিরুদ্ধে কী অভিযোগের ভিত্তিতে এই হিসেবের তথ্য চাওয়া হলো? যে প্রক্রিয়ায় চাওয়া হলো, এর মাধ্যমে আমাদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তাকে ঝুঁকির মুখে ফেলে দেওয়া হলো। আমাদের সুনাম ক্ষুণ্ন করা হলো। এর দায় কে নেবে? তাই এর উদ্দেশ্য কী বের করতে হবে। তিনি বলেন, যারা মানি লন্ডারিং করে তাদেরকে ধরেন। সেটা না করে জনগণের দৃষ্টি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করবেন না। কে সাংবাদিকদের তথ্য চেয়েছে এবং কিসের প্রেক্ষিতে চেয়েছে তাও প্রকাশ করতে হবে।
জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি রিয়াজ উদ্দিন আহমদ বলেন, এই চিঠির অর্থ সাংবাদিক সংগঠনগুলোর শক্তি খর্ব করার প্রচেষ্টা। এই আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আন্দোলনের মাধ্যমেই সাংবাদিকদের ঐক্য গড়ে ওঠবে। আর দিন দিন তা সুসংহত হবে। তারা সমস্ত ষড়যন্ত্র রুখে দিবে।
জাতীয় প্রেসক্লাবের আরেক সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদ বলেন, পেশাজীবী সংগঠনগুলোর মধ্যে সাংবাদিকদের সংগঠন এবং সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনে এখনও সুষ্ঠু নির্বাচন হয়। এ কারণেই সাংবাদিকদের টার্গেট করা হয়েছে। সংবাদপত্রের স্বাধীনতাকে ক্ষুণ্ন করতেই এই কাজ। এই মনোবৃত্তির তীব্র নিন্দা জানাই।
জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান বলেন, রাষ্ট্র প্রয়োজনে যে কারো ব্যাংক হিসেব তলব করতেই পারে। কিন্তু যে প্রক্রিয়ায় সংগঠনকে জড়িয়ে ব্যাংক হিসেবের তথ্য চাওয়া হয়েছে এবং এসব মিডিয়ায় প্রকাশ করা হয়েছে, এতে সাংবাদিকদের সম্মানহানি হয়েছে। আমলাতন্ত্রের অভিন্ন শত্রু হয়ে দাঁড়িয়েছে সাংবাদিক সমাজ। তাই এখনই এই আমলাতন্ত্রের লাগাম টেনে ধরার সময় হয়েছে।
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন বিএফইউজের সভাপতি এম আব্দুল্লাহ বলেন, আমরা ১৫ হাজার সাংবাদিকের প্রতিনিধিত্ব করি। কোন একটি চক্রের কাছে হিসেব দিতে দায়বদ্ধ নই। আমাদেরকে হেয় করা মানে গোটা সাংবাদিক সমাজকে হেয় করা।
ডিইউজে সভাপতি কাদের গণি চৌধুরী বলেন, প্রতিদিন সদস্যদের কাছে আয়-ব্যয়ের হিসাব দেওয়া হয়। আমরাতো সরকারি চাকরি করি না যে আমাদের দুর্নীতির সুযোগ আছে। আমার মনে হয় এটি একটি দুষ্টুচক্রের কাজ। তাদের চিহ্নিত করার সময় এসেছে।
ডিইউজে সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বলেন, ১১ সাংবাদিক নেতার হিসাব চাওয়ার মানে হচ্ছে গণমাধ্যমকে দমিয়ে রাখার ষড়যন্ত্র। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, আপনারা ষড়যন্ত্র থেকে ফিরে আসুন নইলে আপনাদের হিসাব সংবাদপত্রে প্রকাশিত হবে। কারা কানাডা, মালয়েশিয়া, ইংল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়াতে বাড়ি কিনেছেন তা আমাদের জানা আছে। আপনারা চক্রান্ত থেকে সরে না আসলে সাংবাদিক সমাজ বসে থাকবে না।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সভাপতি মোরসালিন নোমানী বলেন, আমার কী আছে, কী নেই- সাংবাদিক সমাজ জানে। আপনারা তদন্ত করে যে তথ্য পাবেন সেটিও জনসম্মুখে প্রকাশ করতে হবে। তা না হলে এই দুষ্টু আমলাচক্রের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা চালিয়ে যাওয়ার কথা বলেন তিনি।
এর আগে শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে জাতীয় প্রেস ক্লাব, বিএফইউজে, ডিইউজে এবং ডিআরইউ আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলন থেকে গতকালের সমাবেশের ঘোষণা দেওয়া হয়।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি-সম্পাদকসহ ১১ সাংবাদিক নেতার ব্যাংক হিসাব তলব করে গত ১২ সেপ্টেম্বর ব্যাংকগুলোকে চিঠি পাঠায় বিএফআইইউ। চিঠিতে সাংবাদিক নেতাদের ব্যাংক হিসাবের যাবতীয় তথ্য (অ্যাকাউন্ট খোলার ফরম, কবে খোলা হয়েছে, জমা, উত্তোলনসহ লেনদেন বিবরণী, অ্যাকাউন্টের স্থিতি) আগামী চার কর্মদিবসের মধ্যে ব্যাংকগুলোকে পাঠাতে বলা হয়েছে। চিঠিতে তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্ট নম্বর দেওয়া হয়েছে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ