শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

কৌশল পাল্টে আবারও খুমেক হাসপাতালের বহির্বিভাগ দালালের দখলে

খুলনা অফিস : কৌশল পাল্টেছে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দালালরা। এখন তাদের পকেটেও থাকছে চিকিৎসা নেয়ার টিকিট। একটা বড় অংশের দালাল এখন থাকছেন ডাক্তারদের ব্যক্তিগত লোক হিসাবে। কাজ করছেন বহির্বিভাগের ডাক্তারদের রুমে ও রুমের বাইরে টেবিলে। এতে দূর-দূরান্ত থেকে আসা রোগীরা প্রতিনিয়ত প্রতারিত হচ্ছেন। কর্তব্যরত আনসার বাহিনী চলছে নিজেদের ইচ্ছায়।
সরেজমিন দেখা যায় আবারও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দালালরা। খুলনার বাইরে থেকে আসা রোগীরাই এসব দালালের প্রধান টার্গেট। তবে গ্রেফতার এড়াতে এরা সকালে হাসপাতালে এসেই ১০ টাকা দিয়ে একটি টিকিট কেটে নিজে রোগী সাজে। এরপর দালালদের চলে দিনভর রোগী ভাগিয়ে নেয়ার চেষ্টা। হাসপাতালের অভ্যন্তরে দালাল বিরোধী মাইকিং চললেও কৌশল পাল্টে এসব দালালদের আগের তুলনায় তৎপরতা আরও বেড়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, খুমেক হাসপাতালের সামনে ব্যাঙের ছাতার মত গড়ে উঠেছে ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। কোন নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে স্বাস্থ্য প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই চলছে এসব প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম। রোগী ধরার জন্য শতভাগ দালাল নির্ভর এসব প্রতিষ্ঠানের দালাল চক্র হাসপাতালের মেইন গেট থেকে শুরু করে ভেতর পর্যন্ত চার স্তরের প্রতারণার ফাঁদ পেতেছে। কোন না কোন ফাঁদে পড়ে দূর-দূরান্ত থেকে আসা রোগীরা হচ্ছেন সর্বশান্ত। এদের প্রথম টার্গেট হাসপাতালের মেইন গেট। ঢুকতেই বোরকা পরা মহিলাদের জটলা, সাথে ছোট ছোট ভ্যানিটি ব্যাগ ঝুলানো মহিলাদের দেখলে রোগী মনে হলেও তাদের প্রায় সবাই দালাল। তুলনামূলক দরিদ্র পোশাক ও অসহায় রোগী মনে হলেই হামলে পড়ে বিভিন্ন ধরনের মিথ্যা ও নেতিবাচক তথ্য দিতে থাকে হাসপাতাল সম্পর্কে । সাথে থাকে মাত্র ১শ’ টাকায় বড় ডাক্তার দেখানোর লোভনীয় প্রতিশ্রুতি। তাদের ফাঁদ থেকে বেচে গেলেও দ্বিতীয় স্তরে দালালের ফাঁদ টিকিট কাউন্টারের সামনে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা রোগীদের মাত্র ১শ’ টাকায় বড় ডাক্তার দেখানোর লোভনীয় প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভাগিয়ে নিয়ে যায় তারা। লম্বা লাইন দিয়ে টিকিট কাটার কষ্টের পরে ডাক্তারের রুমের সামনের লাইনের ভয়ে কেউ কেউ দালালের ফাঁদে পা দিলেও অনেকে টিকিট নিয়ে চলে যান ডাক্তারের কাছে।
এসব ফাঁদ উপেক্ষা করে ডাক্তার দেখিয়ে বের হয়েছিলেন গল্লামারী এলাকার মনিকা রাণী বিশ্বাস। অনেকগুলো পরীক্ষা দিয়েছেন চিকিৎসক তাকে। বের হতেই তার হাত থেকে টিকিট নিয়ে নিলেন এক যুবতী। বললেন এখনতো হাসপাতালে এগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা হবে না। আপনি আমার সাথে চলেন। বাইরে থেকে করেও এখানে দেখাতে পারবেন না। আমি এক জায়গায় নিয়ে যাবো হাসপাতালের রেটেই করাবেন। সেখানেই বড় ডাক্তার পাবেন, মাত্র একশ’ টাকায় দেখে দেবেন আপনাকে। উপায় না দেখে তিনি চলে গেলেন ঐ মেয়ের সাথে আর বাসায় ফিরলেন সর্বশান্ত হয়ে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সরকারি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ৫শ’ গজের ভেতরে কোন ধরনের বেসরকারি হাসপাতাল ক্লিনিক ও প্রতিষ্ঠান না করতে নীতিমালা রয়েছে। এসব নীতিমালার তোয়াক্কা না করেই খুমেক হাসপাতালের আশপাশ দিয়ে গড়ে উঠেছে ১৭টি প্রাইভেট ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। এসব প্রতিষ্ঠানের বেশির ভাগের সাথেই কোন চিকিৎসকের সম্পৃক্ততা নেই।
খুমেক হাসপাতালের পরিচালক ডা. রবিউল হাসান বলেন, হাসপাতালের সামনে চিকিৎসার নামে খোলা দোকানগুলোর কারণে দালাল নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। রোগীদের খদ্দের বানিয়ে এসব প্রতিষ্ঠানের দালালরা হাসপাতালের বহির্বিভাগে ঘুরতে থাকে। মাত্র একশ’ টাকায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দেখিয়ে দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন পরীক্ষার-নিরীক্ষার ফাঁদে ফেলে সর্বস্ব লুটে নিচ্ছে এরা। এসব রোধে আনসার বাহিনীকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া আছে। এছাড়া আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে অভিযান পরিচালনা করার অনুরোধ জানান তিনি। এছাড়া কোন চিকিৎসক বা হাসপাতাল কর্মচারীদের দালাল সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ