শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

টিকা নিয়ে সরকার জনগণের সাথে প্রতারণা করছে - ফখরুল

স্টাফ রিপোর্টার : করোনার টিকা সংগ্রহ নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ জনগণের সাথে প্রতারণা করছে বলে অভিযোগ করেছেন মির্জা ইসলাম আলমগীর। দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভার সিদ্ধান্ত জানাতে গিয়ে গতকাল রোববার দুপুরে এক সাংবাদিক সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব এই অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, স্থায়ী কমিটির সভা মনে করে যে, বর্তমান বৈশ্বিক মহামারি করোনা পরিস্থিতি সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছে। করোনা টিকা নিয়ে সরকার যে দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে গোটা পরিস্থিতিকে লেজে গোবরে করে ফেলেছে। এখন পর্যন্ত ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট, চীনের সিনোফার্ম ও কোভ্যাক্স প্ল্যাট ফার্ম থেকে মোট ১ কোটি ১৬ লক্ষ ৬২০ ডোজ টিকা সংগ্রহ করেছে। কিন্ত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ‘আকুল আহবান’ বিজ্ঞাপনে দেড় কোটি ডোজ টিকা সংগ্রহের কথা বলায় প্রমাণিত হয়েছে সরকার করোনার শুরুর প্রথম থেকেই জনগণের সাথে প্রতারণা করছে, টিকা মূল্য নিয়েও মিথ্যাচার করছে। অবিলম্বে টিকা সংগ্রহ ও বিতরণের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ জনগণের সামনে প্রকাশ করতে হবে।

মির্জা ফখরুল বলেন, দেশের জনসংখ্যার ৭০ শতাংশ মানুষকে টিকা দিতে হলে ২৬ কোটি ডোজ টিকা প্রয়োজন। গড়ে প্রতি মাসে ১ কোটি টিকা দিলেও ২ বছর দুই মাস লাগবে। অথচ এখন পর্যন্ত টিকা প্রাপ্তির কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য সরকার দিতে পারছে না অথবা টিকা প্রাপ্তির উৎস সম্পর্কে কোনো নিশ্চয়তা দিতে পারছে না। সরকারের নিজস্ব দুর্নীতি পরায়ন মহলকে সহায়তা করার জন্যই টিকা সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও বিতরণের ক্ষেত্রে সরকার সুনির্দিষ্ট কোনো রোড ম্যাপ প্রদানে ব্যর্থ হয়েছে। উপরন্তু মিথ্যাচারের মাধ্যমে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করা হচ্ছে প্রতিনিয়ত। প্রবাসী শ্রমিকদের ক্ষেত্রেও একই ভাবে প্রতারণা করা হচ্ছে। অযোগ্যতা ও দুর্নীতিপরায়নতা এই ব্যর্থতার জন্য দায়ী। এই সকল দায় সরকারকেই বহন করতে হবে। শুধু মিথ্যাচার করে জনগণের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলার অধিকার সরকারের নেই।

গুলশানে চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ে এই সাংবাদিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। শনিবার দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকের সিদ্ধান্তসমূহ তুলে ধরা হয়।

লকডাউনের সিদ্ধান্ত হেমায়েতপুর থেকে হয় মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকারের লকডাউন লকডাউন খেলা আর মর্মান্তিক তামাশা। প্রথমে লকডাউন, তারপরে কঠোর লকডাউন, পরে শিথিল লকডাউন ঈদের ১ দিন পর থেকে আরো কঠোর লকডাউন, শিল্প কলকারখানা বন্ধ ঘোষণা থেকে মনে হয়, সরকারি সিদ্ধান্ত গুলো সবই পাবনার হেমায়েতপুর থেকে আসছে। এইসব পরিকল্পিত পদক্ষেপের কারণে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশের দিন আনে দিন খায়, অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কর্মরত মানুষ, হকার, ছোট ব্যবসায়ী, রিকশা শ্রমিক, ভ্যান শ্রমিক, মাঝি, বাইকের চালকেরা, পরিবহন শ্রমিকেরা। বিএনপি বার বার এসব মানুষের জন্য এককালীন ১৫ হাজার টাকা অনুদান প্রদানের আহবান জানিয়েছিলো কিন্তু সরকার তাতে কর্ণপাত করেনি। বিএনপি আবারো দাবি জানাচ্ছে এসব মানুষদের জন্য ১৫ হাজার টাকা অনুদান প্রদান করা হোক, ছোট ব্যবসায়ীদের পূঁজির ব্যবস্থা করা এবং দিন আনে দিন খায় মানুষের জন্য পর্যাপ্ত খাদ্য সহায়তা প্রদান করা হোক।

 দেশের জেলা হাসপাতালগুলোতে জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় করোনা বেড,অক্সিজেন, আইসিইউ বেড বৃদ্ধির দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, আক্রান্ত রোগী ও স্বজনদের আহজারিতে বাতাস ভারী হয়ে উঠছে। গাছের তলাঢ, অ্যাম্বুলেন্সে অথবা ভ্যানের ওপর রোগীর চিকিৎসার দৃশ্য কি মধ্য আয়ের বাংলাদেশ বা উন্নয়নের মডেল বাংলাদেশের ছবি দেখায়। করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার জন্য আবারো স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অপসারণ করা উচিত বলে স্থায়ী কমিটির সভা মনে করে বলে জানান মহাসচিব।

গত ১৩ জুলাই  লালমনির হাটের আদিতমারী উপজেজলার বারঘড়ি সীমান্তে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর গুলিতে এক বাংলাদেশী যুবকের হত্যাকান্ডের ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান বিএনপি মহাসচিব।

মির্জা ফখরুল বলেন, এই মামলার এখন পর্যন্ত বিচার কার্য়ক্রম শুরু হয়নি। শুধুমাত্র চার্জসিট দেওয়া হয়েছে কয়েকবছর পূর্বে। ২০১৮ সালের ২৫ নভেম্বর দুইজন অভিযুক্ত ব্যক্তির অভিযোগ থেকে অব্যাহতি প্রাপ্তির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের একটি আদালত উক্ত আবেদন খারিজ করে সংশ্লিষ্ট রায় দেন। প্রায় তিন বছর পর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করে হাইকোর্ট গত ১৩ জুলাই। মামলাটি নিম্ন আদালতে বিবেচনাধীন থাকা অবস্থায় তিন বছর পর প্রকাশিত রায়ের উচ্চ আদালতের এই ধরনের মন্তব্য উদ্দেশ্য বোধগম্য নয় এবং এটা গ্রহনযোগ্যও নয়। এই ধরনের মন্তব্য নিম্ন আদালতকে প্রবাহিত করবে বলে প্রতীয়মান হয়। স্থায়ী কমিটির সভায় এই ধরনের মন্তব্য যে কোনো নাগরিকের ন্যায় বিচার প্রাপ্তির পরিপন্থি বলে মনে করে।

বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, ২০০৭ সালে সেনা সমর্থিত  কেয়ারটেকারের সময়ে গ্যাটকো মামলাটি দায়ের করা হয়েছিলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে। বেগম খালেদা জিয়াসহ তৎকালীন যে মন্ত্রিসভা ছিলো তাকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য। আমি এখানে বলতে চাই, এই মামলার এফআইআর, চার্জসিট দুইটার কোনো জায়গাতেই কোথাও বেগম খালেদা জিয়া বা জিয়া পরিবারের অন্য কোনো সদস্যের বিরুদ্ধে নুন্যতম কোনো ধরনের কোনো অভিযোগ নেই। এই মামলার অন্যতম দুই জন আসামী সৈয়দ তানভীর ও সৈয়দ গালিব তারা ১৬৪ স্বীকারোক্তিমূলক জবাববন্দীতেও বেগম খালেদা জিয়া ও তার পরিবারের কোনো সদস্যের নামে কোনো বিন্দু পরিমাণ কোনো অভিযোগ ছিলো না। বর্তমানে ফ্যাসিস্ট সরকার সেই মামলাকে চলমান রেখেছেন বেগম খালেদা জিয়া ও তার পরিবারকে রাজনৈতিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য। কারণ এই বর্তমান সরকার জানেন তাদের অঙ্গলি হেলনে আদালত আজকে চলছে।

সরকারের চাপে জোট ছেড়েছে জামায়াত : জমিয়তের একাংশের চলে যাওয়া সরকারের প্রচন্ড চাপে অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, পারস্পরিক আস্থা ২০ দলের মধ্যে চমৎকার। 

তিনি বলেন, রাজনীতিতে উনারা (জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের একাংশ) টিকতে পারছেন না, বিরোধী রাজনীতিতে টিকতে পারছেন না সেকারণে উনারা চলে গেছে। এই কথা বললেই তো হয়- প্রচন্ড চাপে আমরা টিকতে পারছি না, মামলা-মোকাদ্দমায় ভীষণ ভাবে আমরা ব্যতিব্যস্ত হয়ে গেছি। সেটা না বলে কোনো ব্যক্তি বা কোনো দলকে দোষারোপ করা- এটা সঠিক কাজ নয়। আমি স্পষ্টভাবে বলতে চাই, আমরা দলের চেয়ারপার্সন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে আমাদের দল ঘোষণাপত্র অনুযায়ী রাজনীতি করছি এবং ২০ দলেও যারা আছেন আমাদের সঙ্গে তারাও সেভাবে রাজনীতি করছেন এবং পারস্পরিক আস্থা আমাদের মধ্যে চমৎকার আছে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ