শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

বিধিনিষেধ শিথিলের প্রথম দিন যানজটে নাকাল ঢাকা

যানজটে স্থবির রাজধানী। ছবিটি গতকাল বৃহস্পতিবার তেজগাঁও এলাকা থেকে তোলা -সংগ্রাম

স্টাফ রিপোর্টার: বিধিনিষেধ শিথিলের প্রথম দিন ছিল গতকাল বৃহস্পতিবার। আবার সপ্তাহের শেষ দিন। এদিন রাজধানীতে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়। দীর্ঘক্ষণ যানজটে বসে থেকে অতিষ্ট হয়ে পড়ে মানুষ। এসময় অনেকেই লকডাউনের প্রশংসা করেন।  ঘড়িতে দুপুর ২টা বেজে ১১ মিনিট। রাজধানীর মহাখালী হয়ে গুলশান এক নম্বর গোল চত্বরে যাবার পুরো পথটি রুদ্ধ হয়ে থাকে। মহাখালী উড়াল সেতুর নিচ থেকে গুলশান এক নম্বর গোল চত্বরে পৌঁছাতেই চলে যায় ৪০ মিনিট। মোটর সাইকেল চালকরাও সামনে এগোতে পারেননি। বৈশাখী পরিবহনের বাস থেকে নেমে যাত্রীরা একে একে বের হয়ে পড়েন কড়া রোদ মাথায় নিয়েই। 

যাত্রীদের একজন শরীফুল আলম পলাশ বললেন, আজ হাঁটা ছাড়া উপায় নাই। সারি সারি ব্যক্তিগত গাড়ির জটে ট্র্যাফিক পুলিশ সদস্যরা চাপ সামলাতে পারছিলেন না। গুলশানের বড় দুটো মোড়ের প্রতিটিতে আটটি লেনে গাড়ি চলাচল সামাল দিতে গিয়ে তাদের গলদঘর্ম হতে দেখা গেছে। গুলশান-১ নম্বর গোল চত্বরে গরুবাহী ট্রাকও জটে আটকে ছিল।

জানা গেছে, বিধিনিষেধ শিথিলের প্রথম দিনে রাজধানীজুড়ে যানজটের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার কারণ ছিল কোরবানির পশুবাহী ট্রাক চলাচল, অতিরিক্ত গাড়ি রাস্তায় নামা ও ব্যবস্থাপনায় দুর্বলতা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বাভাবিক সময়েই ঢাকা মুমূর্ষু অবস্থায় থাকে। সর্বাত্মক লকডাউন থাকায় গণপরিবহন চলাচল করেনি। ব্যক্তিগত গাড়ির চাপ ছিল। তবে ঢাকার সড়কে গতি ছিল। কিন্তু বিধিনিষেধ শিথিলের পর ঢাকা যেন হাঁটছে। আগে ঢাকায় বাস চলাচলের গতি ছিল ঘণ্টায় ২১ কিলোমিটার। সর্বশেষ হিসাবে তা নেমে এসেছে পাঁচ কিলোমিটারে। এখন হঠাৎ করে বিধিনিষেধ শিথিলের পর গাড়ির চাপ ও একই সঙ্গে বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে সমন্বয়ের অভাবে ঢাকার রাস্তায় গতি আরও কমে গেছে।

বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই রাজধানীর বিজয় সরনি, নিউ মার্কেট, মিরপুর, পল্টন, সায়েদাবাদ, তেজগাঁও, সাতরাস্তা, কাওরান বাজার, শাহবাগ, বংশালসহ বিভিন্ন স্থানে যানজট ছিল। দুপুরে রামপুরা থেকে মালিবাগ চৌধুরীপাড়া পর্যন্ত গাড়ির জটের মধ্যে পড়ে হাঁসফাঁস করছিলেন মোটর সাইকেল চালক সাব্বির হোসেন। বললেন, তীব্র রোদের মধ্যে একেকটি মোড়ে ১৫ থেকে ২০ মিনিট দাঁড়াতে হচ্ছে। গাড়ি যেন চলেই না।

মেট্রোরেল প্রকল্পের কাজের জন্য রাজধানীর মিরপুর-১২ নম্বর থেকে আগারগাঁও অংশ স্থানে স্থানে বন্ধ করে রাখা ছিল। বিধি নিষেধ থাকায় এই সড়কের সংযোগ পথগুলোয় প্রতিবন্ধক রেখে চলাচলে নিয়ন্ত্রণ আনার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। তবে বিধি নিষেধ শিথিল হওয়ার পর থেকে এসব প্রতিবন্ধক সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। ফলে মিরপুর থেকে বিভিন্ন প্রান্তে বাস চলাচল করতে পারছে। তবে বাস ও প্রাইভেট কার বেড়ে যাওয়ায় বিশৃঙ্খলার কারণে এ চলাচল বিঘিœত হতে দেখা গেছে। বাস চালকরা বিভিন্ন স্থানে ইচ্ছেমতো যাত্রীদের তুলছিলেন। ফলে কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, আগারগাঁও, উড়োজাহাজ মোড়, খামার বাড়ি, কারওয়ান বাজার, শাহবাগসহ বিভিন্ন স্থানে গাড়ির গতি ছিল ধীর।

সকালে মিরপুর-১২ নম্বর থেকে বি আরটিসির বাসে উঠে উড়োজাহাজ মোড় অতিক্রম করতেই আল আমীনের দেড় ঘণ্টা লেগেছে। তিনি জানান, যেখানে চালকরা যাত্রী পাচ্ছেন সেখানেই বাস থামিয়ে তাদের তুলেছে। শেওড়াপাড়ার একাধিক স্থানে বিহঙ্গ পরিবহন বার বার বাস দাঁড় করিয়ে যাত্রী তোলা হচ্ছিল। ওই বাসের চালকের সহকারী আবদুর রহমান বলেন, বাস দাঁড়লেই যাত্রীরা উঠছে। যাত্রী পেলে তাদের ওঠাতে হবেই।

এদিকে গতকাল বিধি নিষেধ শিথিল হওয়ায় ট্রেন এবং লঞ্চ চলাচল স্বাভাবিক করা হয়। ট্রেন চলাচল করা শুরু  করে অর্ধেকযাত্রী নিয়ে। তবে অনেকেই অনলাইনে টিকিট পায়নি বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। লঞ্চে অর্ধেক যাত্রী নিয়ে যাওয়ার কথা থাকলে স্বাস্থ্যবিধি কতটুকু মানা হবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। এদিকে সামনে শুক্র- শনি দুইদিন ছুটি থাকায় অনেকেই দুইদিনের ছুটি নিয়ে গ্রামের বাড়ির দিকে ছুটছেন। 

এদিকে বিধিনিষেধ শিথিলের প্রথমদিনে রাজধানীতে প্রবেশের তিন পথ ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক, নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়ক ও আব্দুল্লাহপুর-আশুলিয়া-বাইপাল সড়কের বিভিন্ন স্থানে তীব্র যানজট দেখা দিয়েছে। এ সময় এ তিন সড়কে প্রায় ১৫ কিলোমিটার যানজট সৃষ্টি হয়। 

জানা যায়, ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের রেডিও কলোনি এলাকা থেকে গেন্ডা পর্যন্ত চার কিলোমিটার যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। আশুলিয়ার নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের চক্রবর্তী থেকে বাইপাইল পর্যন্ত নবীনগরগামী লেনে পাঁচ কিলোমিটার যানজট। এছাড়া আব্দুল্লাহপুর-আশুলিয়া-বাইপাল সড়কের বাইপাল থেকে বেরিবাঁধ পর্যন্ত প্রায় আট কিলোমিটার সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ