শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

প্রধানমন্ত্রীর ঘর নির্মাণ প্রকল্পে ‘লুটপাটের মহৌৎসব’ চলছে -বিএনপি

স্টাফ রিপোর্টার : প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর নির্মাণ প্রকল্পে ‘লুটপাটের মহৌৎসব’ চলছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি।
গতকাল শনিবার দুপুরে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে কেন্দ্রীয় দফতরের দায়িত্বে থাকা দলের সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স এই অভিযোগ করেন।
তিনি বলেন,  ভুমিহীন গরীব মানুষের জন্য নির্মিত ঘর যা ঢাক-ঢোল পিটিয়ে প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে উল্লেখ করা হচ্ছে সেই ঘর নিয়েও সীমাহীন দুর্নীতি, লুটপাট, স্বেচ্ছাচারিতা ও দলীয়করণ হয়েছে। সেই ঘরগুলো হস্তান্তরের আগেই বা হস্তান্তরের পর দুই-তিন মাস যেতে না যেতেই যেভাবে ধসে পড়তে দেখা গেলো তাতেই প্রমাণিত হয় দেশে উন্নয়নের নামে হরিলুট চলছে, লুটপাটের মহৌৎসব চলছে, এ যেন সীমাহীন লুটপাটের স্বর্গরাজ্য।
তিনি বলেন, জনপ্রিয় একটি প্রবাদ আছে, সর্বাঙ্গে ব্যথা, ঔষধ দিব কোথায়। এই সরকারের আমলে দুর্নীতি, লুটপাট, স্বেচ্ছাচারিতা, দলীয়করণ, আত্মীয়করণ এমন পর্যায় পৌঁছেছে যে, এই প্রবাদটি বর্তমানে বাংলাদেশের বেলা অতি প্রযোজ্য। বিএনপি গরীব ও ভূমিহীন মানুষের ঘর নিয়ে যারা মহাদুর্নীতি, লুটপাট ও চাঁদাবাজী করেছে তাদেরকে অবিলম্বে আইনের আওতায় এনে বিচার দাবি করছে এবং ক্ষতিগ্রস্থ গরীব ভুমিহীনদের ঘর পুনঃনির্মাণ করে পুনর্বাসনের দাবি জানাচ্ছে।
প্রিন্স বলেন, সরকার ঘোষিত মুজিব বর্ষের প্রধানমন্ত্রীর উপহার উল্লেখ করে গৃহহীন, ভূমিহীন, গরীব ও অসহায় মানুষকে দেয়ার জন্য যে ঘর নির্মাণ করা হয়েছে তা শুরু থেকেই অনিয়ম ও দুর্নীতিতে পরিপূর্ণ ছিলো। গরীব মানুষের কাছ থেকে টাকা নিয়ে বরাদ্দ তালিকায় নাম উঠানো হয়েছে। জায়গা-জমি-বাড়ি-ঘরের মালিক এমনকি প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীদের নামও অর্থের বিনিময়ে বরাদ্দের তালিকায় তোলা হয়েছে। এমনকি আওয়ামী সমর্থক ইউপি চেয়ারম্যান-মেম্বার, আওয়ামী লীগ ও তাদের অঙ্গসংগঠনের উপজেলা-ইউনিয়ন কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের কোটা নির্ধারণ রেখে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
বিএনপির এই নেতা বলেন, সরকারি খরচে ঘর নির্মাণের প্রকল্প হলেও অনেক স্থানে ক্ষমতাসীন দলের লোকেরা এই বরাদ্দ দিয়েছে। শুধু তাই নয়, যাদের নামে ঘর বরাদ্দ দেয়া হয়েছে তাদের ঘরের নির্মাণ সামগ্রি ক্রয়, পরিবহন খরচ, নির্মাণ শ্রমিকদের পারিশ্রমিক, নিয়মিত খাবারের খরচ দিতেও বাধ্য করা হয়েছে। গরীব মানুষদেরকে এই ঘর পাবার আশায় উপজেলা প্রশাসন, ক্ষমতাসীন দল ও তাদের অঙ্গসংগঠনের নেতা, তাদের সমর্থক ইউপি চেয়ারম্যান-মেম্বার, ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মী-সমর্থক, ঠিকাদারদের পর্যন্ত দফায় দফায় অর্থ চাঁদা দিতে হয়েছে।
তিনি বলেন, এই ঘর নির্মাণের ইট, বালি, সিমেন্ট, রড. কাঠ,রং ইত্যাদি সরকারি দলের লোকদের কাছ থেকে চড়ামূল্যে নেয়া হয়েছে। তারা নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রি সরবরাহ করায় আজকে প্রকল্পের এই দশা। ঘর প্রতি ৪০ ব্য্গা সিমেন্ট বরাদ্দের স্থলে ব্যবস্থা করা হয়েছে ১০/১২ ব্যাগ সিমেন্ট, বাকিটা বালি ও মাটি দিয়ে করা হয়েছে। ঘর নির্মাণে দুর্নীতি, অনিয়ম, লুটপাট ধরা পড়লেও সরকারের মন্ত্রী ও নেতারা জিরো টলারেন্সের কথা বলেন। কিন্তু দুর্নীতিবাজ, লুটপাটকারীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে জনগণের টাকা আত্মসাত করার সুযোগ করে দিয়ে নিজেরাই যে মহাদুর্নীতি করছে সেটা তারা বেমালুম ভুলে যান। জনগণের ভোট ছাড়াই মহাদুর্নীতির মাধ্যমে অনুগত প্রশাসন দিয়ে দিনের ভোট রাতে করে জোর করে জনগণের কাঁধে চেপে বসেছে যে সরকার, তাদের দ্বারা দুর্নীতি রোধ দুরের কথা, দেশ আজ দুর্নীতিবাজদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে।
সেজানের মালিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থার দাবি :  প্রিন্স বলেন, এই অগ্নিকান্ডের পর সেজান জুস ফ্যাক্টরীর মালিক-কর্তৃপক্ষের রহস্যজনক ভূমিকায় বিভিন্ন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। ফ্যাক্টরীর মালিক মো. আবুল হাসেম আওয়ামী লীগ নেতা বলেই কি প্রশাসন এখন পর্যন্ত মালিক-কর্তৃপক্ষের গাফিলতি, অবহেলা ও উদাসীনতাকে আমলে নিচ্ছে না কিংবা তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ কোনো পদক্ষেপ এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান হচ্ছে না। এই অবহেলা ও উদাসীনতার জন্য দায়ী মালিক-কর্তৃপক্ষকে অবিলম্বে আইনের আওতায় এনে বিচার এবং নিহত ও আহতদের পরিবারকে আজীবন আয়ের সমান ক্ষতিপুরণ ও পুনর্বাসনের দাবি জানাচ্ছে।
রুপগঞ্জের সেজান ফ্যাক্টরীদের অর্ধশতাধিক শ্রমিকের মৃত্যু ও অসংখ্যক মানুষের আহতের ঘটনায়  শোক প্রকাশ করে তিনি বলেন,  রুপগঞ্জে যেন লাশের মিছিল দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। অগ্নিকান্ডে অঙ্গার হওয়া নিরহ শ্রমিকদের এই করুন পরিণতিতে সমগ্র জাতি হতবাক ও বিমূঢ় হয়ে পড়েছে। শুক্রবার  দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গভীর উদ্বেগ ও শোক প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছেন। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশে গতকালই শ্রমিক দলের সভাপতির নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল ঘটনাস্থলে গিয়ে নিহত ও আহতদের পরিবারের সদস্যদের সাথে সাক্ষাত করে তাদের খোঁজ-খবর ও সহমর্মিতা প্রকাশ করেছেন।
নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সাংবাদিক  সম্মেলন অনুষ্ঠিত  হয়। এসময়  বিএনপির আবদুস সালাম আজাদ, তাইফুল ইসলাম টিপু, বেলাল আহমেদ, শ্রমিক দলের আনোয়ার হোসেইন, মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জু, স্বেচ্ছাসেবক দলের রফিকুল ইসলাম, নাজমুল হাসান, ছাত্র দলের আবদুস সাত্তার পাটোয়ারি প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ