মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

বিশ্বে করোনার দুঃস্বপ্ন ফিরছে

১ জুলাই, এএফপি, দ্য নিউইয়র্ক টাইমস, রয়টার্স : বিশ্বের বিভিন্ন অংশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ আবার বাড়ছে। করোনার সংক্রমণ নতুন করে বৃদ্ধির জন্য অতি সংক্রামক ডেলটাসহ অন্যান্য ধরন ভূমিকা রাখছে। গত ৩০ জুন এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানায়। এই পরিস্থিতি সম্পর্কে পত্রিকাটির ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, দুঃস্বপ্ন ফিরে আসছে।

অনেক দেশ ভেবেছিল, তারা করোনার সবচেয়ে বাজে পরিস্থিতি দেখে ফেলেছে। কিন্তু তারা এখন আবার করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি দেখছে। বিশেষ করে বিভিন্ন দেশে করোনার ডেলটা ধরনের বিস্তার বাড়ছে।

করোনার দুঃস্বপ্ন যে ফিরে আসছে। ইন্দোনেশিয়ায় রাতের বেলাতেও কবর খুঁড়ছেন গোর খোদকেরা। দেশটিতে অক্সিজেনের পাশাপাশি টিকার সংকট প্রকট। ইউরোপের বিভিন্ন দেশ আবার তাদের প্রবেশদ্বার বন্ধ করছে। কেউ-বা কঠোর কোয়ারেন্টিন বিধি আরোপ বা ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছে। বাংলাদেশে করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় ১ জুলাই থেকে আবার লকডাউন দেওয়া হয়েছে।

দক্ষিণ কোরিয়া ও ইসরাইলের মতো দেশ করোনাকে অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণে আনলেও এখন সেখানে নতুন করে এই ভাইরাসের গুচ্ছ সংক্রমণ দেখা যাচ্ছে। চীনের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা গত সোমবার ঘোষণা দিয়েছেন যে তাঁরা আন্তর্জাতিক ভ্রমণকারীদের জন্য পাঁচ হাজার কক্ষের একটা বড় কোয়ারেন্টিন সেন্টার গড়তে যাচ্ছেন। অস্ট্রেলিয়ার কর্তৃপক্ষ দেশটির লাখো অধিবাসীকে ঘরে অবস্থান করতে নির্দেশ দিয়েছে।

করোনা মহামারি শুরুর পর প্রায় দেড় বছর পেরিয়ে গেছে। উৎপত্তির পর করোনা অবিশ্বাস্য দ্রুত গতিতে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। এখন আবার বিশ্বের একটি বিস্তৃত অংশে করোনার সংক্রমণ বাড়ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনার একাধিক নতুন ধরন, বিশেষ করে অতি সংক্রামক ডেলটার কারণে সংক্রমণের এই ঊর্ধ্বগতি। ভারতে প্রথম করোনার ডেলটা ধরন শনাক্ত হয়। ধনী দেশগুলো ব্যাপকভাবে টিকা দিয়ে করোনার বিরুদ্ধে বিপুলসংখ্যক জনগোষ্ঠীর মধ্যে প্রতিরোধক্ষমতা গড়ে তুলেছে। পাশাপাশি তারা বাধ্যতামূলক মাস্ক পরার বিধান জারি রেখেছে। ফলে কোনো কোনো ধনী দেশে জীবনযাত্রায় স্বাভাবিকতা ফিরে আসছে। কিন্তু এশিয়া থেকে আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ করোনায় ধুঁকছে। এসব দেশে রেকর্ডসংখ্যক করোনা রোগী শনাক্ত ও মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে।

বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, মূল ধরনটির চেয়ে করোনা ভাইরাসটির রূপান্তরিত ডেলটা ধরন দ্বিগুণ সংক্রামক হতে পারে। করোনার ডেলটা ধরনে আংশিক টিকা নেওয়া কিছু লোকেরও সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা আছে। এই আশঙ্কার বিষয়টি জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। ভারতের গবেষকেরা ডেলটার পর এখন আবার ডেলটা প্লাস ধরনের সংক্রমণের কথা বলছেন। অন্যান্য দেশেও করোনার নানান ধরন আছে। সেগুলো আবার রূপান্তরিতও হচ্ছে। করোনার নতুন নতুন ধরন যেকোনো সময় হঠাৎ করে বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। এ প্রসঙ্গে দক্ষিণ কোরিয়ার সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ কিম উও-জো বলেন, ‘আমরা করোনা ভাইরাসের নতুন নতুন ধরনের (ভেরিয়েন্ট) বিস্তারের বিরুদ্ধে একটি প্রতিযোগিতার মধ্যে আছি।’ বিদ্যমান অধিকাংশ টিকা করোনার ডেলটা ধরনের বিরুদ্ধে কার্যকর বলেই প্রতীয়মান হয়। প্রাথমিক গবেষণা ইঙ্গিত দিয়েছে যে টিকা নেওয়ার পর যারা সংক্রমিত হয়েছে, তাদের উপসর্গ হালকা বা উপসর্গহীন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনার নতুন নতুন ধরন আসছে, ছড়াচ্ছে। এ অবস্থায় করোনা মহামারিকে নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যাপকভিত্তিক টিকাদানের পাশাপাশি পূর্বসতর্কতা বজায় রাখা দরকার। বর্তমানে বিশ্বের অন্তত ৮৫টি দেশে করোনার ডেলটা ধরন শনাক্ত হয়েছে। বর্তমানে ভাইরাসের এই ধরনটিই এশিয়া, ইউরোপ ও আফ্রিকার বিভিন্ন অংশে প্রাধান্যশীল। ডেলটার ভয়ংকর সংক্রমণ ক্ষমতা ভারতে দেখা গেছে। এখন দেখছে ইন্দোনেশিয়াও।

প্রতিবেদনে গবেষকদের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের ঢাকায় শনাক্ত করোনা রোগীর প্রায় ৭০ শতাংশ ডেলটা ভেরিয়েন্টে সংক্রমিত হয়েছে। ২৫ মে থেকে ৭ জুনের মধ্যে এই নমুনা সংগ্রহ করা হয়। বাংলাদেশে পরীক্ষার বিপরীতে করোনা শনাক্তের হার চলতি সপ্তাহে প্রায় ২৫ শতাংশ দাঁড়িয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র তা ২ শতাংশ।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ