খুলনা বিভাগে করোনায় আরও ১৪ জনের মৃত্যু
খুলনা অফিস : খুলনায় করোনায় মৃত্যুর মিছিল যেন থামছেই না। খুলনাতে করোনা মহামরি যেন ভয়াবহতা সকল মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। হাসপাতালে বেড সংকট। কারণ করোনার শনাক্তের হার ফের লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে, সেই সাথে মৃত্যুও হচ্ছে। এই অবস্থায় ভয় পাচ্ছেন ডাক্তাররাও। তারাই কোভিডযোদ্ধা। মানুষের পাশে থাকছেন ডাক্তার, নার্স থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য কর্মীরাও। কিন্তু তাঁরাও অসহায় বোধ করছেন। প্রতিদিনই মহানগরীর সরকারি ও বেসরকারী করোনা হাসপাতালে মৃত্যু’র খবর আসছে। হাসপাতালে দেখা যায় স্বজন হারানোর ব্যথায় ব্যথিত অন্য স্বজনদের আহাজারি। এ আহাজারি যেন থামার নয়।
গত ২৪ ঘন্টায় খুলনা বিভাগে কমেছে করোনায় মৃত্যু ও শনাক্তের সংখ্যা। শনিবার (২৬ জুন) সকাল ৮ টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘন্টায় বিভাগে করোনা আক্রান্ত হয়ে ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর নতুন করে শনাক্ত হয়েছে ৮৪৮ জনের। এর একদিন আগে শুক্রবার (২৫ জুন) সকাল ৮টার আগের ২৪ ঘন্টায় অদৃশ্য এই ভাইরাসে রেডর্ক ১ হাজার ৩৩২ জনের শনাক্ত এবং আরও ২৩ জনের মৃত্যু হয়েছিল।
খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক রাশেদা সুলতানা জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় বিভাগের মধ্যে সর্বোচ্চ মৃত্যু হয়েছে কুষ্টিয়া ও যশোরে। কুষ্টিয়ার ৫ জন, যশোরের ৫ জন, খুলনার দুইজন, ঝিনাইদহের একজন ও মেহেরপুরের একজন মারা গেছেন।
খুলনা বিভাগের মধ্যে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় চুয়াডাঙ্গায় গত বছরের ১৯ মার্চ। করোনা সংক্রমণের শুরু থেকে শনিবার সকাল পর্যন্ত বিভাগের ১০ জেলায় মোট শনাক্ত হয়েছে ৫০ হাজার ৯৬৫ জন। আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯৫৩ জনে। এ সময় সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৩৬ হাজার ১২৫ জন।
বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদফতরের জেলাভিত্তিক করোনা-সংক্রান্ত তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, খুলনায় ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত হয়েছে ১৭২ জন। জেলায় এ পর্যন্ত মোট করোনা শনাক্ত হয়েছে ১৪ হাজার ৩৩৩ জনের। মারা গেছেন ২৩৫ জন এবং সুস্থ হয়েছেন ১০ হাজার ৪৩৩ জন।
এদিকে শনিবার (২৬ জুন) সকাল ৮ টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘন্টায় দু’টি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় করোনায় আরও ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এরমধ্যে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ডেডিকেটেড ইউনিটে ৭ জন ও বেসরকারি গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দুই জনের মৃত্যু হয়েছে।
খুলনা করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালের ফোকাল পার্সন ডা. সুহাস রঞ্জন হালদার জানান, গত ২৪ ঘন্টায় খুলনা করোনা হাসপাতালে রেড জোনে ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। তারা হলেন-খুলনা সদরের আনিসুর (৬০) ও পিরোজপুর সদরের লতিফ শেখ (৭৫), নড়াইলের কালিয়ার তাহিরুল (৭০), খুলনা সদরের ইমরান (৪৮), বাগেরহাটের সদরের শহিদুল্লাহ (৭৪), মিঠুন (২৮) ও একই এলাকার কুলসুম (৯০)। খুলনার ১৩০ শয্যার করোনা হাসপাতালে ১৫৬ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন। ২৪ ঘন্টায় নতুন করে ভর্তি হয়েছেন ২৯ জন, আবার সুস্থ হয়ে বাড়ী ফিরেছেন ৪০ জন। আর আইসিইউ’তে রয়েছেন ১৯ জন।
গাজী মেডিকেলের স্বত্বাধিকারী গাজী মিজানুর রহমান জানান, গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। তারা হলেন-যশোরের কেশবপুরের ভরতবায়না এলাকার জিয়াউর রহমান (৪২) ও মনিরামপুরের রামপুর এলাকার মো. ইহসাক সানা (৮০)। এ হাসপাতালে ৯৪জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন, তার মধ্যে আইসিইউতে ৭জন ও এইচডিইউতে ৭জন।
খুলনা ২৫০ জেনারেল হাসপাতালের করোনা ইউনিটের মুখপাত্র ডা. কাজী আবু রাশেদ জানান, ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে গত ২৪ ঘন্টায় মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি। গেল ২৪ ঘন্টায় আরো ৫ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন, আর সুস্থ হয়ে বাড়ী ফিরেছেন ৮জন। মোট চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৬৬জন রোগী।
খুলনা মেডিকেল কলেজের উপাধ্যক্ষ ডা. মেহেদী নেওয়াজ জানান, শুক্রবার (২৫ জনুন) রাতে খুমেকের পিসিআর মেশিনে মোট ৫৫৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে ২১০ জনের করোনা রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে। যার মধ্যে খুলনার ৪২৫ জনের নমুনা পরীক্ষায় নতুন করে ১৭৪ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। এছাড়া বাগেরহাটে ২৫ জন, যশোরে ৭ জন, সাতক্ষীরায় ১ জন, ও নড়াইলের ২ ও পিরোজপুরের ১ জন রয়েছেন।
এদিকে করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে চলছে খুলনায় কঠোর লকডাউন। জারি করা হয়েছে কিছু বিধি-নিষেধ। কিন্তু প্রশাসনের নির্দেশকে বৃদ্ধা্গংুলি দেখিয়ে পাড়া মহল্লায় খোলা আছে চায়ের দোকান। আর সেখানে জম্পেস আড্ডা হচ্ছে সব বয়সী মানুষের। দোলখোলা মোড়ের চায়ের দোকানি গিয়াস জানান, চায়ের দোকান ছাড়া আর কোন ব্যবসা নেই। এটা না থাকলে বাল-বাচ্চাদের নিয়ে না খেয়ে মরতে হবে। কর্ম ব্যস্ততায় এই এলাকার মানুষ দিন পার করে। সন্ধ্যা হলে তারা চা পান করতে আসে। তখন একটু ভিড় হয়। যেখানে স্বাস্থ্যবিধির লেশমাত্র নেই।
মিয়াপাড়া পাইপের মোড়ের মোস্তফা হাওলাদার জানান, সারাদিন দোকান বন্ধ থাকে। সন্ধ্যার পর খোলা হয়। এ সময় সব বয়সের মানুষেরা চা খাওয়ার জন্য ভিড় করতে থাকে তার দোকানে। অস্থায়ী এ চায়ের দোকানে অধিকাংশের মুখে মাক্স দেখা যায়নি।
টুটপাড়া জোড়াকল বাজারে চা পানরত অবস্থায় দিন মজুর মোস্তাফিজ জানান, ‘সারাদিন কাজ করে কুল পাইনে। তাই সন্ধ্যার পর একটু চা পান করতে বাজারে আসি।’ তিনি বলেন, ‘আমরা গরীব মানুষ। ভরসা একমাত্র আল্লাহ। আমাদের করোনা হবেনা।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক খুলনা সদর থানার কর্তব্যরত পুলিশের একজন উপ-পরিদর্শক জানান, চায়ের দোকান বন্ধ করতে গিয়ে তারা ক্লান্ত। যেখানে খোলা পাচ্ছি সেখানে এ্যাকশনে যাচ্ছি। বেশ কিছু চা দোকানিকে থানায় নিয়ে মুচলেকার পর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।