কবিতা
আহত নিহত ধারাভাষ্য
আবদুল হাই শিকদার
বাম পাশে পাহাড়কে বসালাম।
পাহাড়ের ত্যাড়া ঘাড়, আমি বসবো না,
ডানপাশে দাঁড়িয়ে থাকবো।
কারণ জানার আগেই তরতর করে অজগর।
নেমে এলো ঝর্না, তুমি তো অতো উঁচু নও।
সমুদ্রকে পাশে নিয়ে এবার বিচ ড্রাইভিং।
কিহোলে কী পুশ করার আগেই বিপত্তি,
আপনি তো নন আমার মতো অতোটা ঘন নীল।
গাছের তলে ছায়ার মতো মাঝ দুপুরের ঝিম,
তাই বলে তো আপনি নন সহিষ্ণুতার ভাই।
পাখির উড়াল অনুবাদ করলে ক্লান্ত হতে জানি না,
আর ঘুম তো তোমার পায়ে পায়ে।
পাহাড় সমুদ্র বৃক্ষ ও পাখি
সবাই রাতের পর্দার নীচে জেগে রইল।
কেবল পায়ে পায়ে ঘুম উঠে এলো আমার মাথায়।
ঘুমের মধ্যে আমি নিহত হলাম আহত হলাম।
আহত ও নিহত হলাম।
ফোন দিও না
মুহাম্মদ ইয়াকুব
গভীর রাতে আমার কথা
খুব বেশি মনে পড়লে
ফোন দিও না পত্র দিও
ঝুমবরষার দুপুর বেলায়
আমার কথা শুনতে চাইলে
ফোন চেয়ো না পত্র নিও।
লকডাউনের গ্যাড়াকলে
ডাকপিওন আটকে গেলে
পোস্টবক্সটা ভরে দিও
ফিরতি চিঠি পেতে চাইলে
সময় চিরে আলো এলে
সব আবেগ মেখে নিও।
ফোন দিও না ফোন দিও না
পত্র দিও পত্র দিও
আবেগ ভরা খামটি আমার
খুব গোপনে বুঝে নিও।
ক্ষুধার্তের মিছিল
হাসান ইমতিয়াজ
চারিদিকে এতো সমবেত মানুষ কেন?
রাস্তায় রেস্তোরাঁয় মিরপুর বনানীতে
এই প্রশ্নটা বন্দুকের নলের মতোই আমার
মাথার কাছে উঁচিয়ে আছে -
ফায়ার -
গুলিবিদ্ধ হতে হতে আমি ক্রমশ
শব্দহীন হয়ে পড়ছি!
চারিদিকে এতো সমবেত মানুষ কেন?
এদের কি চাই? ভাত, রুটি, ঢাল?
আহা! নবজাতকের কান্না! চুপসানো
স্তনে তরল দুধ নেই ! কান্নায় মাটি ফেটে রক্ত আসে!
এইসব প্রশ্ন ভায়োলিনের শব্দের মতোই
আমার কানের কাছে চেপে বসে যততত্র!
গ্লানিযুক্ত মেঘ
হারুন আল রাশিদ
অদেখার সাথে যেদিন
হয়ে যাবে দেখা
করে নেবো সোৎসাহে নক্ষত্র বিনিময়
পাকাধান আলাপণে নিরূপণ হবে
ফেলে আসা ধূসর দিগন্ত।
এখন জমিনজুড়ে রোদের ফসল
বোধ ভেঙে দিতে চাই বালিয়াড়ি
গভীর নীলে দৃষ্টি সজাগ
পড়ে থাক পশ্চাতে
গ্লানিযুক্ত আলুথালু মেঘ।
একটি ভোরের বিজ্ঞাপন
সুয়েজ করিম
হাঁসের ডিম পাড়া লঘু শব্দে ঘুম ভাঙে রোজ;
দীঘির শ্বেত শালুকে জাফরি মেলে আমার চোখ
ঘুমের গন্ধ মুছে দেয় বাউল মোরগ
নিখুঁত শিশির হাঁটে ভোরের শিরায়।
চোখের আইল ধরে তোপধ্বনিতে হেঁটে যায়
লাঙলের পাখায় ফসলের শুভ্র পাখির দল;
কমলা রোদে চক-মকে ভোরের চিবুক
খয়েরি শালিক ও ধূসর চড়ুইয়ের দ্বৈত সংগীত ।
পিলপিল প্রভাত-ফেরি; ভাঁটফুলের রূপমঞ্জরি,
মাটির সোঁদা গন্ধে মেঠো পথ
ভাটিয়ালি নদীর কূল
সারি সারি সবুজ পঙক্তিমালা
ধেনুদের বলিষ্ঠ মাইকিং ;
কাঁচা রোদে অধরারঞ্জনী রাঙা টিয়ের ঠোঁট
ধানের সোনালি কেশর আর নিখাদ জলরঙে
শিল্পীর ক্যানভাসে ফুটে উঠি সেঁওতির স্নিগ্ধতায়।
এইতো আমার নিত্য লালন করা
সূর্যের বুকে আঁকা ভোরের বিজ্ঞাপন।
একটি ফুল
এম. এ. শিকদার
একটি ফুল ফুটেছিল ধরার মাঝে
যে ফুল আলোকিত করেছিল
এই জগৎসংসার,
যেই ফুলের সুবাস পেয়ে পেয়ে
মানুষ এসেছিল সত্য ও ন্যায়ের পথে।
যেই ফুলের সুবাস ছড়িয়ে যেত
শান্তি ও মানবতার হাতছানি,
যেই ফুলের সুবাস পেয়ে বন্ধ হয়েছিল
খুন খারাবি রাহাজানি ও পাপকর্ম।
প্রথম দেখা
জেসমিন সুলতানা চৌধুরী
তোমাকে প্রথম যেদিন দেখি
দিব্যি শুয়েছিলে হাত-পা ছড়িয়ে,
কৃষ্ণচূড়া গাছের তলায়
ঝরে পড়া ফুলের লাল গালিচায়।
অবাক বিস্মিত নয়নে তাকাই দু'জনে
একটু লজ্জিত হবার ভানে চাইলে জানতে,
কেন আমি সেখানে?
বলেছিলাম,বসন্ত সাজিয়েছে বাসরসজ্জা
মনে হয়, কেউ যেন সাজিয়েছে নিজ হাতে
এই দুর্লভ লাল গালিচা
তাতেই তুমি করেছ অবগাহন বানিয়ে লাল বাগিচা।
বললে তুমি,অবাক হওয়ার নেই কিছুই, আমি এমনই।
চেয়ে দেখ ফাগুন হাওয়ায় দুলছে
ঝুলে থাকা থোকা থোকা কৃষ্ণচূড়া,
যেন লাল সবুজের ছাউনিতে ঢাকা,
যেন কোন চিত্রকরের রংতুলিতে নিখুঁতভাবে আঁকা।
আমার এই নিঃসঙ্গ জীবনে
প্রকৃতির মায়াবী রূপ আস্বাদনে একাকী এই দূর নির্জনে।
লিখবো না তোমাকে
শিমুল হোসেন
যেদিন ক্লান্ত হবো
অন্ধকারে নিথর রবো,
যেদিন পাথর হবে দু'চোখ
অন্ধকারে জ্বলবে শুধু শোক
সেদিন আর লিখবো না তোমাকে!
যেদিন শান্ত রবো
আঁছড়ে পড়া ঊর্মি হবো,
যেদিন হবে দেহ শূন্য বায়ু
থাকবে শুধু আত্মা দেশের আয়ু
সেদিন আর লিখবো না তোমাকে!
যেদিন অশ্রু হবো
অনুভূতির সঙ্গে রবো,
যেদিন হবো বেওয়ারিশ লাশ
থাকবে না বুকের হঠাৎ নিঃশ্বাস
সেদিন আর লিখবো না তোমাকে!