ভাসানচরে ফের রোহিঙ্গা স্থানান্তর সেপ্টেম্বরে
স্টাফ রিপোর্টার: আগামী সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে আবার ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তর করা হবে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ সচিব মো. মোহসীন। গতকাল বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে ভাসানচরে রোহিঙ্গা স্থানান্তর বিষয়ে দেশি-বিদেশি প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত কমিটির সভা শেষে তিনি এই তথ্য জানান।
কক্সবাজারের ক্যাম্প থেকে নোয়াখালীর ভাসানচরে এখন পর্যন্ত ১৮ হাজার ৮৯০ জন রোহিঙ্গাকে স্থানান্তর করা হয়েছে। গত বছর ৪ ডিসেম্বর থেকে তাদের সেখানে নিয়ে যাওয়া শুরু হয়। এক লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গাকে সেখানে স্থানান্তরের প্রকৃত লক্ষ্য থাকলেও সরকার এখন এক লাখ জনকে স্থানান্তর করতে চায় বলে জানিয়েছন ত্রাণ সচিব।
আবার রোহিঙ্গাদের স্থানান্তর শুরুর সময় নির্ধারণ করা হয়েছে জানিয়ে কমিটির প্রধান দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ সচিব বলেন, আগামী ১৭ জুনের মধ্যে একটি পলিসি ডকুমেন্টের ড্রাফট তাদের (কমিটি) তরফ থেকে দেবেন। এর মধ্যেও আমরা ফরমালি, ইনফরমালি আলাপ-আলোচনা করব। কতগুলো বিষয় আছে, এমন কোনো বিষয় না যা সেটেল করার মত নয়। তারপরে আরও একটি মিটিং করে এগুলো শেষ করব। আশা করছি সেপ্টেম্বরের শেষের দিক থেকে আবার (রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে) নেওয়া শুরু করব। ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরের বিষয়ে একটি নীতিমালার খসড়া করতে ত্রাণ সচিবকে প্রধান করে একটি কমিটি করে দিয়েছে সরকার।
কমিটিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব, শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার, পরারষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক, এনএসআই পরিচালক, রিফুজি সেলের প্রধান ছাড়াও আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থার প্রতিনিধিরা রয়েছেন। এই কমিটির প্রথম বৈঠক শেষে ত্রাণ সচিব আরও বলেন, রোহিঙ্গারা যেখানে আছেন সেটি পাহাড়ী এলাকা, কিছুদিন আগেও প্রচুর বৃষ্টি হওয়ায় অনেক জায়গায় ওয়াল ধসে গেছে। সেজন্য গত ৬ জুন মুখ্যসচিবসহ সভা হয়েছে। সেখানে ১০ জন অ্যাম্বাসেডর উপস্থিত ছিলেন, যারা রোহিঙ্গাদের বিষয়ে ফান্ড দিয়ে থাকেন।
যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, জার্মানি, জাপান, তুরস্ক, ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূতরা ওই বৈঠকে ছিলেন জানিয়ে তিনি বলেন, ওই সভায় জানানো হয় ভাসানচরে এই মুহূর্তে ১৮ হাজার ৮৯০ জন আছে। আমাদের টার্গেট হল সেখানে নিয়ে যাবো এক লাখ রোহিঙ্গাকে। সেজন্য এই কমিটি করা হয়েছে। কীভাবে কাজটাকে আমরা বাস্তবে রুপ দিতে পারব। ভৌগোলিকভাবে কক্সবাজারের থেকে ভাসানচরে ভিন্নতা থাকায় আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থার প্রতিনিধিদের কিছু বিষয় জানার আছে বলে জানান ত্রাণ সচিব।
তিনি বলেন, আমাদের পক্ষ থেকে তাদের কিছু বিষয় পরিস্কার করার আছে। আমরা কিভাবে সেখানে অপারেশন চালাব, কিভাবে কী করব, কিভাবে তারা ইনভল্ব হবেন, আমরা কোন ক্ষেত্রে তাদের সহযোগিতা করতে পারব। তাদের কোন কোন প্রেক্ষোপটে আমাদের প্রয়োজন, যাতায়াতের একটি বিষয় আছে, সেখানে আমাদের হেল্প লাগবে। আরও কোথায় কোথায় কী প্রয়োজন। এই বিষয়গুলো নিয়ে পলিসি ড্রাফট হওয়ার পরে ভাসানচরে রোহিঙ্গা স্থানান্তর শুরু করব। মিয়ানমার সরকারের নির্যাতনে বাংলাদেশে পালিয় আসা রোহিঙ্গাদের কক্সবাজারের বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে থেকে গত ৪ ডিসেম্বর ভাসানচরে স্থানান্তর করা শুরু হয়। তাদের নতুন ঠিকানায় প্রতিটি রোহিঙ্গা পরিবার নিজেদের জন্য আলাদা ঘর পাচ্ছেন। আছে রান্নার ব্যবস্থা, বিদ্যুৎ, পানি আর পয়ঃনিষ্কাশন সুবিধা। সেই সঙ্গে আছে খেলার মাঠ, ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র, এমনকি জীবিকা নির্বাহের সুযোগও।