কবিতা
একটা নেড়িকুত্তা আর এক টোকাই
জাহাঙ্গীর অরণ্য
পাঁচতলার জানালা থেকে এঁটো খাবারের একটা পুটলি পড়ল
একটা নেড়িকুত্তা আর এক টোকাই সমান ক্ষীপ্রতায় ঝাঁপিয়ে পড়ল
টোকাই পরাজিত
গ-ড়-র গ-ড়-র গর্জনে তাড়িয়ে দিলো টোকাইকে
দাঁতহীন, নখহীন, শ্রীহীন এই জীবকে
সমীহ করার কোনো মানে খুঁজে পায় না এই কুকুর
যেমনটা সমীহ করে চলে মানুষকে
ওরা দুজনে যে সম-বিছানায় ঘুমায়, খায়, প্রাকৃতিক কাজ সারে
ওরা একই সুবিধাভোগী, স্বার্থান্বেষী- প্রতিদ্বন্দ্বী।
সেদিন সন্ধ্যাবেলা ডাস্টবিনের পাশে
একটা রক্তাক্ত লাশ দেখা গেল
একটা নেড়িকুত্তা অস্থিরতায় লেজ নাড়াচ্ছে-
চোখে বিস্ময়, মায়া, কিংকর্তব্যবিমূঢ়তা।
একটু আগে দামী গাড়ির অভিজাত এক নারীর গলায়
তিন আঙুলের ছোবল ছুঁড়েছিল এই কীট!
নিষিদ্ধ নরকে
সাগর আহমেদ
আমার শহরে এখন আর তুমি নেই
কালের বিবর্তনে তুমি নামের শব্দটি বিলুপ্ত
যন্ত্রণার কষাঘাতে নিজেকে জ্বালিয়ে নিয়েছি
প্রতিটি রাত এখন আমার জন্য বিপদজনক
বিনা নোটিশে ঘুমের সাথে হয় শত্রু শত্রু খেলা।
তোমার অবহেলার তীক্ষè তীর ফলা
বিষাক্ত করে তুলেছে প্রতিনিয়ত আমায়
বেদনার বৃষ্টি দেহটা ভাসিয়ে দিলেও
হৃদয়ের জমিতে পৌঁছাতে অক্ষম।
জলপিঁপাসু তপ্ত হৃদয়টা আজ আকাশকে
চাঁদর বানিয়ে মাটিকে করেছে বিছানা
ঘুমপারানির গানের পরিবর্তনে চারিপাশে
যন্ত্রের কর্কট শব্দে আমি হাঁপিয়ে উঠেছি।
অথচ, যাকে আলো ভেবে পথ হেঁটেছি
সেই আজ আঁধারের ঘুমটা পরিয়ে
ঠেলে দিয়েছে নিষিদ্ধ নরকে।
স্বপ্নের মৃত্যু
জহির সাদাত
একটি স্বপ্নের অপমৃত্যু হল
আমি বিবেকের সুপারিশে
ইন্না-লিল্লাহ পড়ে
মৃত্যু শোকে দায়িদের ডুবিয়ে দিলাম ক্ষমার সাগরে।
দাফন কাফনে অসামর্থ্য আমি
এ লাশ কবরে রাখিনি।
অগনিত উদ্বাস্তু লাশ পড়ে আছে পৃথিবীর আনাচে-কানাচে
লাল নীল কমলা ধূসর রঙ্গের লাশ
চারদিকে শুধু লাশ আর লাশ!
তবুও নয়া স্বপ্ন আসে সবুজ পাতায় পাতায়
বধ্যভূমিতে জেগে ওঠে আশার বৃক্ষ।
স্বপ্নের মৃত্যু হয় তবু
জেগে থাকে আশা
আমরা নতুন চাষাবাদে
বিভোর থাকি সময়ের সিংহাসনে বসে।
একটা বর্ষার প্রতীক্ষা
বিচিত্র কুমার
আকাশ কিংবা মেঘের স্পর্শে
বৃষ্টি তুমি রঙধনুর সাতরঙে সাজো,
শুধু আমার জন্যে আমার জন্যে
হয়তো একটা বর্ষার প্রতীক্ষায় আজো।
যুগযুগ ধরে হয়তো আমিও একীভাবে
শুধু তোমার প্রতীক্ষায় আছি দাঁড়িয়ে,
যতটুকু ভালোবাসা আছে আমার হৃদয়ে
সবটুকু বিলিয়ে দিয়ে তোমাকে জাড়িয়ে।
সারাটা জীবন হৃদয় কারাগারে বন্দি করে রাখব
তোমাকে আমার স্বপ্নিল আকাশের বুকে,
শুধু একবার দু'চোখ খুলে দেখো আমাকে
ভালোবাসার আর স্বর্গ সুখে।
হৃদয় হত্যার ঘটনা
আহমেদ খায়ের
বিকট শব্দে হঠাৎ যেনো কেঁপে উঠি
উৎসলক্ষ্যি দু’চোখ আমার দৃষ্টি ঘুরায়
পড়লো কি বাজ হিমালয়ের পাহাড়চুড়ায়
খোদার জমিন ভাঙলো নাকি যিলযালাতে
আকাশ ফাঁটে নাকি এতো প্রচন্ডতায়!
বিষয়টা না কিছুতেই যে মেপে উঠি।
বুকের ভেতর চিনচিনিয়ে ব্যথার আওয়াজ
বুকের জমিন শক্ত হাতে খামচে ধরি
মনে মনে দোয়া এবং দরুদ পড়ি
ককিয়ে উঠি আহ! নিদারুণ যন্ত্রণাতে
একটু আগের সেই ঘটনা স্মরণ করি
বুঝতে পারি ঘটনাটা হৃদয়ের মাঝ।
হৃদয় আমার হাঁটছিলো যেই ফিলিস্তিনের পথে
একটি শিশুর বুক বরাবর আগ্নেয়াস্ত্র দেখে
বুলেটপ্রুভ হৃদয় আমার আগলে দাঁড়ায় পথ
তারপর এক তুমুল শব্দে হৃদয় হলো বধ।
উদাসীন সে
শফিকুল আলম সবুজ
খাতির জমাতে চেয়েছি।
অথচ, সে ছিলো উদাসীন।
আমি তাকরার করছি তাঁকে।
সে বুঝলো না। বুঝছে বৃক্ষ।
সে আমায় অক্সিজেন দিয়ে
বাঁচিয়ে রাখে তার জন্য,
যে আমায় তাড়িয়ে দিয়েছে
জীবন থেকে।
আমিই ‘আল-আকসা’
আসাদ পারভেজ
আমি মুসলিম
আমি জেরুজালেম
আমিই ‘আল-আকসা’Ñ
আমি যেতে চাই প্রথম কেবলায়
যেতে চাইÑ অলিভ শাখা হাতে
শান্তির পায়রা উড়াতে
পবিত্র ভূমি আল-আকসা চত্বরে।
আমি মুজাহিদ হতে চাই পবিত্র ভূমিরÑ
আমানত রক্ষার ঈমানি দায়িত্বে
আমি জাইয়নবাদী জালিমের রক্তে রঞ্জিত করিব
দুটি হাতÑ এ আমার প্রভুর কসম।
উমরের নীতিতে ক্ষান্ত হওনি এতোদিনে তোমরা
তাই বলে সালাউদ্দিনের তলোয়ার হারিয়ে যায়নিÑ
মহাবীর ছিলো, আছে বীর এখনও
আমরা ঐ বীরের একঝাঁক বিশ্ব শান্তির পায়রা
সময় যে ফুরিয়ে এসেছে আজ
চুরমার হবে তোমাদের সব।
আমার রাষ্ট্র তোমার জন্ম সনদ দেয়নি
আমার দেশ তোমার অস্তিত্ব স্বীকার করেনিÑ
তুমি যাযাবরের অভিশপ্ত জীবন থেকে
মুক্তি পেয়েছ আমার পবিত্র হৃদপিন্ডে আশ্রয় পেয়ে।
তুমি আশ্রিত, তুমি ভুলে গিয়েছ
তোমার জন্ম পথে-ঘাটে
নর্দমার পাশে কীটপতঙ্গের আভরণে
তুমি ভুলে গিয়েছÑ হিটলারের কন্সেন্ট্রেশনের
অগ্নি কুণ্ডুলী থেকে আমার পবিত্র ভূমির সীমানায়
ডিঙ্গিতে করে ভেসে আসার কাহিনীÑ
তুমি মজলুম ছিলে
আমি ছিলাম তোমার
জীবন-যৌবন আর ভ্রষ্ট ইজ্জতের হেফাজতকারী।
আমি মুসলিম
আমি জেরুজালেম
আমিই আল-আকসা।