লকডাউন বাড়লো ঈদের ছুটি পর্যন্ত
স্টাফ রিপোর্টার : করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে ১৬ মে পর্যন্ত লকডাউন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। যেহেতু ঈদুল ফিতর অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ১৩ অথবা ১৪ই মে, তার অর্থ দাঁড়াচ্ছে ঈদের ছুটিও এবার লকডাউনের মধ্যেই পড়তে যাচ্ছে। গত বছরও রমযানের ঈদের সময় লকডাউন চলছিল বাংলাদেশে। এই সময়ে গণ পরিবহন চললেও লঞ্চ ও ট্রেন চলাচল বন্ধই থাকবে। আর স্বাস্থ্যবিধি না মানা হলে বন্ধ করে দেয়া হবে মার্কেট শপিংমল। ঈদে বাড়ি ফেরা নিরুৎসাহিত করতে কোনভাবেই বাড়তি ছুটি না দেয়ার কথা জানানো হয়।
গতকাল সোমবার মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম লকডাউন আরো বাড়ানোর কথা জানান। এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে এসব বিষয়ে আলোচনা হয়।
মন্ত্রী পরিষদ সচিব বলেন, আগামি ৬ই মে থেকে জেলা পর্যায়ে গণপরিবহন চলতে পারবে। তবে চলবে না দূরপাল্লার বাস। আন্তঃজেলা পরিবহন বন্ধই থাকছে, এমনকি ঈদের মধ্যেও। ঈদুল ফিতর বা রমযানের ঈদ বাংলাদেশের সবচাইতে বড় ধর্মীয় উৎসব। এই উৎসবে বাংলাদেশে কমপক্ষে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় ছুটি থাকে। এসময় দেশটির বহু মানুষ ছুটি কাটাতে এক জেলা থেকে আরেক জেলায়, কিংবা বড় শহরগুলো থেকে গ্রামের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমায়।
সাংবাদিক সম্মেলনে জানানো হয়, ঢাকার বাস ঢাকায় আর গাজীপুরের বাস গাজীপুরে চলাচল করতে হবে। অন্য জেলায় যেতে পারবে না। গণপরিবহনে অর্ধেক আসন খালি রাখতে হবে। সচিব বলেন, ‘গণপরিবহন মালিকরা আমাদের কথা দিয়েছেন, কোনোভাবেই গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘন করা হবে না। লঙ্ঘন করা হলে বন্ধ করে দেওয়া হবে। সেই নির্দেশনাও দেয়া আছে। সেটা আমরা দেখব।
লঞ্চ এবং ট্রেন চলাচল বন্ধই থাকবে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এ সিদ্ধান্ত আগামী ১৬ মে পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। মার্কেটে পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসন অভিযান চালাবে। মাস্ক না পরলে, স্বাস্থ্যবিধি না মানা হলে মার্কেট বন্ধ করে দেয়া হবে।
ঈদুল ফিতর ১৪ মে হতে পারে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কোনো বন্ধ দেয়া যাবে না। ঈদের ছুটি তিন দিনের মধ্যে দুটি পড়েছে শুক্র ও শনিবার। শিল্পকারখানাও এ সময়ে বন্ধ দিতে পারবে না। তিনি বলেন, এবার ঈদে পোশাক শ্রমিকদের তিন দিনের বেশি ছুটি দেয়া যাবে না।
সরকারি অফিস বন্ধ, সেগুলোর বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত আছে কিনা- জানতে চাইলে খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘যেগুলো যেভাবে আছে সেভাবেই থাকবে।
করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় প্রথম দফায় ৫ থেকে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত বিধিনিষেধ দেয়া হয়। পরে সেটি ২ দিন বাড়ানো হয়। এ দফায় ভালো ফল না আসায় ১৪ এপ্রিল থেকে শুরু হয় এক সপ্তাহের কঠোর বিধিনিষেধ। এটি বাড়িয়ে পরে ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত করা হয়। যদিও এ দফায় শপিং মল খোলাসহ বেশকিছু বিষয়ে বিধিনিষেধের শর্ত শিথিল করে সরকার। সবশেষ ২৮ এপ্রিল বিধিনিষেধের মেয়াদ ৫ মে পর্যন্ত বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
প্রসঙ্গত, এপ্রিলের শুরুতে করোনা শনাক্তের হার ২৪ শতাংশ পর্যন্ত উঠেছিল। এ অবস্থায় ১৪ই এপ্রিল সর্বাত্মক বিধিনিষেধ দেয় সরকার। ধাপে ধাপে শনাক্তের হার ১০ শতাংশের নিচে চলে আসে। যদিও বিধিনিষেধ চলেছে ঢিলেঢালা।
কোভিড-১৯ সংক্রমণ রোধে গত ১৪ এপ্রিল ভোর ৬টা থেকে ৮ দিনের কঠোর বিধিনিষেধে শুরু হয়। চলমান বিধিনিষেধের মধ্যে পালনের জন্য ১৩টি নির্দেশনা দেয়া হয় সরকারের পক্ষ থেকে। সেই মেয়াদ শেষ হয় গত ২১ এপ্রিল মধ্যরাতে। তবে, করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় বিধিনিষেধের মেয়াদ আগামী ২৮ এপ্রিল মধ্যরাত পর্যন্ত বাড়ানো হয়। এর পর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনে ৫ মে পর্যন্ত কঠোর বিধিনিষেধের সময় বৃদ্ধি করা হয়।