কবিতা
বিপদের বান্ধব
আকিব শিকদার
পথে পা বাড়াতেই পড়লো চোখে
টিনের বিবর্ণ থালা, ভিখারি এক করছে কোরআন পাঠ
নারকেলের চিরল পাতার ছায়ায়। প্রভাতের চকচকে সোনারোদ
খেলা করে তার মুখে পিচকিরি ছোড়া রঙিন জলের মতো।
দুটি ঘুঘু পালা করে ডাকছে কোথাও...
বড়ো সকরুণ সেই ডাক। তারচেয়েও সুমধুর সকরুণ
আফ্রিকান কৃষ্ণকায় পুুরুষের কণ্ঠে
অমন অপূর্ব কোরআন পাঠ, শুনিনি আগে।
সেদিন প্রথম রমজান, মিশরের মাটিতেÑ
সংবেদনশীল সংযমের মৌসুম। বিভুঁই বিদেশে
রাস্তা ঝাড়–র কাজে নিয়োজিত বাঙালি আমি
আর তিলাওয়াতরত অই আফ্রিকান নিগ্রো (গালে কাটা আঁচড়ের দাগ
উচ্চতা সাত ফুট, গায়ে অসুরের বল) আমাদের মাঝে পরিচয়
শুধু চোখাচোখিÑ এর থেকে বেশি কিছু নয়।
তবু কেনো যেন মনে হলো
আমাদের পরিচয় বহু যুগের। সে আমার আত্মীয়, নিরাশায় ভরসা।
নিরাপত্তাহীন শহরের নির্জন অন্ধকারে-
অন্তত অচেনা পথের দিশা দিতে তো সে পারে।
কালো কাঁচ আটা জমকালো একটা গাড়ি
ঘোঁৎ করে থামলো এসে কোরআনের বুলি আওড়ানো
ভিখেরির পায়ের পাশে। মিশরীয় ধবধবে ফর্সা নারীর হাত
কাঁচের জানালা গলে বেরিয়ে এলো এবং টুংটাং কিছু খুচরো পয়সা
টিনের থালায় ঝনঝনিয়ে জানিয়ে দিলো-
পৃথিবীতে বর্ণ বৈষম্য যতোই থাকুক টিকে, শ্বেত-কৃষ্ণ-তামাটে
একে অপরের বিপদের বান্ধব।
বিকেলে এসো
সোমা মুৎসুদ্দী
বিকেলে বাড়িতে এসো, গল্প হবে
পাহাড় নয়তো, নদীর জলের
বাড়িতে এসো, মায়ের হাতের তৈরি আচার খাওয়ার
কোনও এক ফাঁকে হয়ে যাবে
দার্জিলিং বেড়ানোর গল্প
বিকেলে ঠিক এসো কিন্তু, আমাদের জানালা দিয়ে
দূরের পাহাড় দেখা হবে
বিকেলে আসতেই হবে, পুরনো এ্যালবাম খুলে স্কুলের
সেই ফেলে আসা বার্ষিক অনুষ্ঠানের
ছবি দেখবো।
বিকেলে এসো কিন্তু, ঠিক এসো।
এই রমজানে
খালীদ শাহাদাৎ হোসেন
বোনাস সোয়াব নিয়ে এলো রমজান
নিগূঢ় সংযমী হই পেতে প্রতিদান,
নাজাত লাভের তরে করি উপবাস
ইবাদতে মশগুল থাকি পুরো মাস।
রমজানে ধ্যান হোক রহমত ক্ষমা
বিগত জীবনে যত গুনাখাতা জমা,
অনুনয় অনুরাগে ভরে যাক দেশ
সবাই সবার তরে গড়ি পরিবেশ।
অনাথ-এতিম আর পাড়া প্রতিবেশি
মহামারি করোনায় গুরুতর ক্ষতি,
এদের রয়েছে হক পেতে সহযোগ
বিতরণ করি ত্রাণ রোজা উপযোগ।
কাতর হৃদয়ে যাচ্ঞি প্রভু রহমান
রোজার কদরে রোধ বালা-বহমান,
রোজা শেষে আসে ঈদ খোশ পয়গাম
অবসান চাই আগে করোনার নাম।
প্রার্থনা সংগীত
সুমন রায়হান
সুন্দর সাজানো পৃথিবী তোমার
মৃত্যুর মিছিলে আজ কান্নারত
মানুষের কোলাহলে পৃথিবী আবার
মুখরিত করে দাও আগের মত
ক্ষমা চাই কেঁদে কেঁদে ওগো দয়াময়
ক্ষমা করো আমাদের গুনাহ যত।।
সৃষ্টির সেরা জীব মানুষ তুমি
মনোনীত করেছ সৃষ্টিকূলে
চেয়ে দেখ আজ তারা কত অসহায়
ডাকে শুধু তোমাকে দুহাত তুলে।
তুমি ছাড়া কেউ নাই প্রভু আমাদের
পাপী তবু -তোমারই অনুগত
ক্ষমা চাই কেঁদে কেঁদে ওগো দয়াময়
ক্ষমা করো আমাদের গুনাহ যত।
আমাদের বিজ্ঞান জ্ঞান গরিমা
সবই গেছে মাটিতে মিশে
তোমার করুনা ছাড়া আর কিছুতেই
পাই নাকো কোন দিশে।
বাঁচার সুযোগ দাও করোনা থেকে
গোস্বা করে আর থাকবে কত?
ক্ষমা করো আমাদের গুনাহ যত।
প্রাণে প্রাণ মিলাই
সৈয়দ আসাদুজ্জামান সুহান
জীবন এখন থমকে আছে, থমকে আছে বিশ্ব
কিছু মানুষ থমকে গিয়ে, যাচ্ছে হয়ে নিঃস্ব।
কবে আবার আসবে সুদিন, কেউ তো জানে না
অকারণে বাইরে যেতে তাই তো আছে মানা।
কেমন করে জুটবে আহার, খোঁজ রাখে না কেউ
কুকুরগুলোও অনাহারে, করেছে ঘেউ ঘেউ।
ত্রাণের খোঁজে ঘুরছে গরিব, কেউবা করছে চুরি
এমন কথা শুনলে তখন, মাথায় পড়ে বাড়ি।
চোরে চোরে মাসতুতো ভাই, লজ্জা-শরম নাই
গলা সমান খাবার খেয়েও করে যে খাই খাই।
সময়মতো সঠিকভাবে জাকাত দিও ভাই
ধনী-গরিব সবাই মিলে প্রাণটাকে বাঁচাই।
স্মরণীয়
আসাদুজ্জামান সম্রাট
ক্ষণস্থায়ী জীবনের আমাদের বর্তমান অস্তিত্ব,
প্রত্যেকের দেহ দিন দিন হচ্ছে বিলুপ্ত।
জাতির সুনির্মাণে যাদের ভূমিকা ছিল অগ্রণীয়,
সেই ব্যক্তিগণ আজ প্রত্যেকের কাছে স্মরণীয়।
মানবীয় গুনে পরিপূর্ণ ছিল যাদের জীবন,
মরণের পরও মানুষ তাদের করছে স্মরণ।
উদার মনচিত্ত ব্যক্তিগণের দেহ আজ হারিয়ে,
কিন্তু তাদের নাম গচ্ছিত আছে প্রত্যেকের হৃদয়ে ।
এইভাবে মনুষ্যত্ববোধের বিপুল জাগরণ যে ঘটাবে,
ভবিষ্যতেও সে পৃথিবীতে অমর থাকবে।
আমাদের মুক্তি দাও
সা'দ সাইফ
অরণ্যের চিড়িয়া সব থমকে গেছে
হরিৎ ছায়াও আজ চলন্ত বিভীষিকা।
নির্ঝরের শব্দও যেন দুর্বিষহ ;
ওই যে কঙ্করধ্বনি শোনা যায়।
নেমে আসা লহরি কী ভীষণ স্যাঁতসেঁতে!
অথচ ছিল মায়াবতী।
ফাল্গুনে ঝরে যাওয়া গাছপাতাগুলোর
পুনর্জন্মেও অনাগ্রহ।
ওরা কী জানে না মরুময় প্রাঙ্গণ কী?
চিড়িয়াধ্বনির কোলাহল আজ কই?
নাকি সব ভস্ম!
পরাগ পরশের ঠিক শিয়রে;
থমকে গেছে কপির ঝাঁপ
কিংবা শেরে গর্জন।
দিগভ্রান্ত কেশরী মস্ত নীলিমায়,
মায়াবী মৃগের চোখের পাতায়ঃ
’ এ পৃথিবী ছেড়ে দাও,
কোলাহল অথবা পশুশব!'
নিবৃত্ত পৃথিবীর বুকজুড়ে কান্না।
নেপথ্যের সংলাপ
শ্যামল বণিক অঞ্জন
অসীম কষ্ট, নষ্ট আবেগ, পথভ্রষ্ট স্বপ্নগুলো।
ভুল পথে-
ভ্রান্ত রথে সীমাহীন পদচারণ।
ফুলের কাঁটা-
রক্ত ঝরায় নিশিদিন,
স্বার্থের ভালোবাসা অর্থহীন।
ব্যর্থতায় আগামীর মহাপরিকল্পনা-
প্রিয়তমার বুকে আবিষ্কার বিষের সাগর,
শ্রীমুখে দৃশ্যমান হায়েনার কুৎসিত প্রতিচ্ছবি,
হরিণীর চোখে জ্বলন্ত অগ্নিগিরির মুখচ্ছবি!
নেপথ্যের সংলাপ-
নির্বাক স্তব্ধ হৃদযন্ত্র, ক্ষণে ক্ষণে আত্মবিলাপ
স্বপ্নভঙ্গ! নির্বাসিত সকল গচ্ছিত সংলাপ।
ক্ষুদে কবিতা
এরফান আলী এনাফ্
(এক)
তোমার দু'চোখ শুধুই কি চোখ
কেবলি কি চেয়ে থাকা ?
আমি তো দেখি দুই পৃথিবীর
সমুদয় ছবি আঁকা ।
(দুই)
অজস্র চাঁদের জ্যোৎস্না মাখানো
তোমার সে অবয়বে
কখন সহসা বিলীন হয়েছি
হারিয়েছি সেই কবে !
(তিন)
জল হলে তার তল পাওয়া যায়
মন যে অতল গহন
ভালোবাসায় সুধা না হয়
হৃদ পোড়ানো দহন ।