শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

মৌলভীবাজারের ইকোপার্কে ময়লার ভাগাড়

মৌলভীবাজার ঘুরে এসে, কবির আহমদ, সিলেট ব্যুরো : ১৯১৬ সালের ১৭ নবেম্বর প্রায় ৯০০ একর আয়তনের বর্তমান বর্ষীজুড়া ইকোপার্ককে সংরক্ষিত বন হিসেবে ঘোষণা করা হয়।  

বন্য প্রাণী ও উদ্ভিদবৈচিত্র্য সংরক্ষণ এবং পর্যটকদের আকর্ষণ করতে ২০০৬ সালের জুলাই মাসে সংরক্ষিত এই বনে বর্ষীজুড়া ইকোপার্ক ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু নানা ঘটনায় হুমকির মুখে এই বনভূমি। তবে এই বনকে রক্ষা করতে সরকার বিভিন্ন সময় পরিকল্পনা নিয়েছে। বর্তমানে এই বনে সাফারি পার্ক করা নিয়েও আলোচনা চলছে । তবে এরই মধ্যে বনের মধ্যে বনের প্রায় এক একর জায়গা দখল করে ময়লার ভাগার তৈরি করেছে মৌলভীবাজার পৌরসভা। গত ৪ তারিখ থেকে প্রতিদিন টনেটনে ময়লা ফেলছে পৌরসভা। বনবিভাগ লিখিত আপত্তি দিলেও মানছেন না পৌর কর্তৃপক্ষ। শুধু ময়লার ভাগাড় নয়, ময়লার গাড়ি যেনো বনের ভেতরে নির্দিষ্ট জায়গায় যেতে পারে তাই আশেপাশের উঁচু ভূমিসহ মাটি কেটে তৈরি করা হচ্ছে রাস্তা।

দায়িত্বশীল একটি প্রতিষ্ঠানের এমন কর্মে অবাক পরিবেশবাদীরা। তারা বলছেন, বনের আশেপাশে যেখানে ক্ষতিকর কিছু করা যাবেনা সেখানে একেবারে বনের ভেতরে গিয়ে বনের জমি দখল করে প্লাস্টিকসহ পৌরসভা ময়লা ফেলে এই বনকে চিরতরে ধ্বংস করে দেবার পরিকল্পনা করছে। ইতোমধ্যে ময়লা ফেলার প্রতিবাদে প্রথমে পৌরসভাকে মৌখিকভাবে এবং পরে লিখিতভাবে আপত্তি জানিয়েছেন বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ। তবে তা আমলেই নিচ্ছেন না পৌর মেয়র। লিখিত সেই পত্রে বনবিভাগ উল্লেখ করেছে , “বনে পৌরসভার ময়লা ফেলা হচ্ছে এই বিষয়টি অবগত হয়ে গত ৬ তারিখ সংরক্ষিত বন বর্ষীজুড়া ইকোপার্কের মৌলভীবাজার স্টেডিয়াম সংলগ্ন এলাকা সরজমিনে পরিদর্শন করে বিভাগীয় বন কর্মকর্তা দেখতে পান যে, পৌরসভার ময়লা-আবর্জনা, বর্জ্য পদার্থ বনের মধ্যে ফেলা হচ্ছে এবং ময়লা বনের ভেতর নিয়ে যাওয়ার জন্য রাস্তা তৈরি করা হচ্ছে। পরে এখানে ময়লা না ফেলা এবং যে যে ময়লা ফেলা হয়েছে তা সরিয়ে নেয়ার জন্য পৌর কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করে চিঠি দিয়েছে বনবিভাগ।  

বনবিভাগের চিঠির যে বিবরণ তার সত্যতা মিলেছে সরজমিনে ঘটনাস্থলে গিয়ে। বনবিভাগের আপত্তির পরেও টনের টন ময়লা ফেলা হচ্ছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, মৌলভীবাজার শহরের স্টেডিয়াম সংলগ্ন বর্ষিজোড়া পার্কের এই সংরক্ষিত বনে ফেলা হচ্ছে ময়লা-আবর্জনা ও বোতলজাত প্লাস্টিকসহ সব ধরণের বর্জ্য। এই ময়লার গন্ধ আশেপাশের ছড়িয়ে পড়েছে। বনের ভেতর ময়লা নিয়ে যাওয়ার জন্য এসকেভেটরের মাধ্যমে টিলার পার্শ্ববর্তী লাল মাটি কেটে রাস্তা প্রস্তুত করা হচ্ছে।  

এ বিষয়ে বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, পৌরসভার ময়লা ফেলার কারণে এই এলাকার পরিবেশ নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি এই বর্জ্য খেয়ে বন্যপ্রাণী মারা যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সংরক্ষিত বনে ময়লা আবর্জনা ফেলা এবং গাড়ি চলাচলের জন্য রাস্তা নির্মাণ করা সংরক্ষিত বনাঞ্চল অবৈধ জবর দখলের শামিল। আমরা আপত্তি জানানোর পরেও এখানে ময়লা ফেলা বন্ধ করেনি পৌর কর্তৃপক্ষ।

তিনি আরও জানান, ৪ এপ্রিল তারিখ থেকে এখানে ময়লা ফেলা হচ্ছে, ৬ এপ্রিল তারিখ আমরা আপত্তি জানিয়ে পত্র দিয়েছি কিন্তু আজ সকালেও প্রতিদিনের মত ময়লা ফেলা হয়েছে আমাদের আপত্তি আমলে নেয়া হচ্ছেনা। খুব দ্রত এই ময়লা আবর্জনাসহ প্লাস্টিকের বর্জ্য ফেলা বন্ধ করা এবং যা ফেলা হয়েছে তা এখান থেকে সরিয়ে নেয়ার জন্য মৌলভীবাজার পৌরসভাকে বিশেষভাবে অনুরোধ করেছি এখনো করছি। তবে তারা কোন কথা শুনছেনা।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) মৌলভীবাজারের আহ্বায়ক আ স ম সালে সোহেল জানান, এইভাবে সংরক্ষতি বনে প্লাস্টিকসহ ময়লা ফেলা খুবই খারাপ কাজ। পরিবেশের জন্য মারাত্মক বিপর্যয় হবে বিষয়টি। অতি দ্রুত এই  ময়লা এখান থেকে সরিয়ে আনার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হউক।

এ বিষয় মৌলভীবাজার পৌরসভার মেয়র ফজলুর রহমানের সাথে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে পাওয়া যায়নি তবে তিনি ইতিমধ্যে গণমাধ্যমকে বনবিভাগের আপত্তির বিষয়টি স্বীকার করে বলেছেন, এখানে সাময়িকভাবে ফেলা হচ্ছে। আমাদের ডাম্পিং স্টেশনে কাজ চলছে, কাজ হয়ে গেলে ময়লা ফেলার কোন অসুবিধা হবে না। তবে এই যুক্তি মানতে নারাজ বাপা।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য আব্দুল করিম কিম জানান, একদিনের জন্য কেনো এক মুহূর্তের জন্য হলেও সংরক্ষিত বনে ময়লা ফেলা যাবেনা এবং এটা সুনির্দিষ্টভাবে অপরাধ। এটা কোন ভাবেই কাম্য নয়। আমরা প্রয়োজনে মাঠে নামব।

সার্বিক বিষয়ে মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান বলেন, আমি বিষয়টি জেনেছি এবং বনবিভাগের যে আপত্তি পত্র তার অনুলিপি পেয়েছি। বনবিভাগ এবং পৌরসভাকে আলোচনা করে বিষয়টি মিমাংসা করতে বলেছি। তারা যদি মীমাংসা করতে না পারে আমি ব্যবস্থা নেব।

উল্লেখ্য, নানান গাছপালা আর বন্যপ্রাণীতে সমৃদ্ধ বর্ষীজুড়া ইকোপার্ক। বনের প্রধান উদ্ভিদ শাল আর গর্জন। আরও আছে সেগুন, লোহাকাঠ, জারুল, তেলশুর, চিকরাশি ইত্যাদি। এছাড়া আগর, আমলকি, বহেরাসহ নানান ওষুধি গাছও আছে। নানান বন্যপ্রাণীর বিচরণ এ বনে। উল্লেখযোগ্য হল বানর, হনুমান, কাঠবিড়ালী, মায়া হরিণ, সজারু, বনরুই, মেছোবাঘ, গুইসাপসহ বিভিন্ন ধরনের সাপ ইত্যাদি।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ