শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

পাইকগাছায় কপোতাক্ষ নদের ভাঙ্গনে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত

খুলনা অফিস : খুলনার পাইকগাছার কাটিপাড়া নামক স্থানে কপোতাক্ষ নদের ভাংগনে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়ে ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে জোয়ারের পানিতে নদের তীরবর্তী এলাকায় মৎস্য, চিংড়ি ঘের, পানের বরজ, ধানসহ বিভিন্ন ফসলের ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাড়িঘর ও রাস্তাঘাট।
স্থানীয় চিংড়ি ঘের মালিক রমজান আলী জানান, এখানে রয়েছে ১২টি চিংড়ি ঘের। যার জমির পরিমাণ প্রায় ৪শ’ বিঘা জমি। এখন চিংড়ি মওসুমীর প্রথম। আগামী অমাবশ্যাতে সকলেই মাছ ধরার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তার আগেই এ অবস্থার সৃষ্টিতে চরম ক্ষতি হয়েছে তাদের। তার ঘের তলিয়ে যেয়ে ৫/৭ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, কপোতাক্ষ নদের উপর ব্রীজ নির্মাণের কাজ চলছে। দু/তিন মাস আগে ব্রীজের জন্য বিশাল এলাকা খনন করে রাখেন ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। এক পাশে পুকুর ও অন্য পাশে বালি দিয়ে বাঁধ দেয়া হয়। যাকে বলে বালির বাঁধ। যা জোয়ারের পানির তোড়ে ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। তারা আরও বলেন, ৪ বিঘা পানের বরজের ক্ষতি হয়েছে। গরমে ধান ক্ষেত নষ্ট। বাড়িতে জোয়ারের পানি উঠে প্লাবিত।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ গোলদার জানান, ব্রীজের কাজ ধীর গতিতে হওয়ায় ও ঠিকাদারের গাফিলতির কারণে এত ক্ষয় ক্ষতি হলো।
অপরদিকে দাকোপে পৃথক দু’টি স্থানে বেড়িবাঁধে ভাঙন। খলিষা এলাকায় জোয়ারের পানি ঢুকে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৩১ নং পোল্ডারের অধীন পানখালী ইউনিয়নের খলিষা এলাকায় গত সোমবার আনুমানিক ৩শ’ মিটার বেড়িবাঁধে ভয়াবহ ভাঙন দেখা দেয়। বুধবার সকাল পর্যন্ত ওই স্থান দিয়ে নদীর পানি ঢুকে পানখালী ইউনিয়ন এবং চালনা পৌর এলাকার ৪টি গ্রামের ফসলের মাঠ লবণ পানিতে তলিয়ে যায়। এছাড়া ভাঙন এলাকায় বিপুল রায় এবং অনাদী রায় নামের দু’টি পরিবারের বসত বাড়ি নদীর অংশ হয়ে যায়। এ ঘটনায় চাষিদের আনুমানিক এক হাজার বিঘা জমির ধানসহ তরমুজ এবং সব্জির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
জানা যায়, পানি উন্নয়ন বোর্ড ওই এলাকায় বিকল্প বাঁধ নির্মাণের জন্য বেশ আগেই ঠিকাদার নিয়োগ দেয়। কিন্তু যথা সময়ে কাজ শুরু না হওয়ায় এবং স্থানীয়দের অসহযোগীতায় মাটি না পাওয়ায় শেষ পর্যন্ত বাঁধ ভেঙে এলাকায় লবণ পানি ঢুকে ক্ষয়ক্ষতি হয়। বুধবার সকালে দাকোপ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিন্টু বিশ্বাস ঘটনাস্থলে থেকে বাঁধ নির্মাণ কাজ তদারকি করেন। অপরদিকে একই পোল্ডারের অধীন তিলডাঙ্গা ইউনিয়নের ঝালবুনিয়া এলাকায় বেড়িবাঁধ ভেঙে যায়। তবে, সেখানে বড় ধরনের ক্ষতির আগেই পানি আটকানো সম্ভব হয়। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে দকোপ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিন্টু বিশ^াস বলেন, ভেঙে যাওয়া বাঁধ আটকানো সম্ভব হয়েছে। ফলে আপাতত পানি ঢোকার সম্ভাবনা নাই। স্থায়ীভাবে বাঁধটি টেকসই করতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারসহ চাষিদের প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়া হবে।
ডুমুরিয়ার তেলিগাতি নদীর পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ২/৩ ফুট উচ্চতায় :  ডুমুরিয়া উপজেলার শোভনা ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত তেলিগাতি নদীর পাড়ের বাগআঁচড়া ও  বাদুরগাছা গ্রামের প্রায় ৫ হাজার মানুষ বাঁধ ভাঙার আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে। গত সোমবার দুপুরের অস্বাভাবিক  জোয়ারের গোনের পানিতে নদীর পাড়ের গ্রাম রক্ষা বাঁধ ভেঙে এলাকা প্লাবিত হয়। তেলিগাতি নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণে এককালে দেয়া বিশাল আকৃতির বাঁধের এখন মাত্র ২-৩ ফুট বেঁচে আছে। বাকি সব নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
সরেজমিন স্থানীয়দের সাথে আলাপকালে জানা যায়, প্রতিবছর শুষ্ক মওসুমে জোয়ারের পানির উচ্চতা বেড়ে যায়। এ সময় দুর্বল হয়ে যাওয়া গ্রাম রক্ষা বেড়িবাঁধের কোন কোন স্থানে ভেঙে যায়। আবার কোন কোন  স্থানে বাঁধের উপর দিয়ে জোয়ারের পানি উপচে পড়ে গ্রামে প্রবশে করে। ডুমুরয়িা উপজেলার শোভনা ইউনিয়নের বাগআঁচড়া ও বাদুরগাছা গ্রামের জনবসতি প্রায় ৫ হাজার। এই গ্রামের দু’টি বিলে প্রায় তিন হাজার বিঘা জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। ইতোমধ্যে ধানে পাক ধরেছে। বিলে রয়েছে ছোট বড় শত শত মৎস্য ঘের। এছাড়া উপজেলার খর্ণিয়া বাজার, ডুমুরিয়া বাজার, কদমতলা বাজার, শিবপুর গ্রামসহ বেশ কিছু অঞ্চলে  চলতি পূর্ণিমা গোনে অস্বাভাবিকভাবে  জোয়ারের  পানি বৃদ্ধি পাওয়ায়  তলিয়ে গেছে।
বাগআঁচড়া গ্রামের  বাসিন্দা সুকান্ত সরদার বলনে, প্রতি বছর আমাদের গ্রাম রক্ষা বাঁধ একটু একটু করে ভাঙতে ভাঙতে এখন মাত্র এক থেকে দেড় ফুট বেঁচে আছে। কিন্তু তার উপর দিয়েই জোয়ারের পানি প্রবাহিত হচ্ছে। বাঁধের অধিকাংশ জায়গা দিয়ে এমন কি বাঁধের তলদেশ দিয়েও ছিদ্র হয়ে পানি প্রবেশ করে বসতবাড়ির আঙ্গিনা তলিয়ে যাচ্ছে। সোমবার দুপুরে পূর্ণ জোয়ারের সময় বাঁধ রক্ষা কাজে নিয়োজিত এলাকার কিরোণ সরদার, বিকাশ মন্ডল, প্রদীপ সরদার ও গৃহবধূ কবিতা রাণী জানান, গত রোববার রাত থেকে পূর্ণিমার গোন শুরু হলে বাঁধ ভাঙতে শুরু করে। তার পর থেকে জোয়ার শুরু হলে বাঁধের পাশে তারা যারা বসবাসকারী তাদের নির্ঘুম রাত কাটছে। রাত জেগে বাঁধের কোথায় কোন ফাটল দিয়ে পানি ঢুকছে সাথে সাথে তা আটকানোর চেষ্টা করছেন তারা। তারা আরো জানান  ৭/৮ বছর যাবৎ জোয়ারের গোনে তারা বাঁধ নিয়ে খুব টেনশনে রয়েছেন। নদীর তলদেশ ৪/৫ ফুট ভরাট হয়ে উঁচু হয়ে যাওয়ায় এবং গ্রাম রক্ষা বাঁধ সংস্কার না হওয়ায় জোয়ারের গোনে এমন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে তাদের।
এলাকার ইউপি সদস্য দেবব্রত সরকার বলনে, ভেঙ্গে যাওযা বাঁধ মেরামতের কাজ করছে স্থানীয় ভুক্তভোগী এলাকাবাসী। গত অর্থ বছরে প্রায় সাড়ে ১৩ লাখ টাকা সরকারি বরাদ্দে বাঁধের প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকা সংস্কার করা গেলেও বাদুরগাছার দেড় কিলোমিটার এলাকা বরাদ্দের অভাবে সংস্কার সম্ভব হয়নি। দ্রুততম  সময়ের  মধ্যে যাতে টেকসই বাঁধ নির্মাণ করা হয় সে ব্যাপারে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা  একান্ত দরকার।
শোভনা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সরদার আব্দুল গণি বলেন, প্রতিবছর ফাল্গুন-চৈত্র-বৈশাখ মাসের অমাবশ্যা ও পূর্ণিমার গোনে জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বৃদ্ধি পায়। এবারও সোমবার ও মঙ্গলবার দুপুরে জোয়ারে বাগআঁচড়া বাদুরগাছা এলাকার তেলিগাতি নদীর পানির তোড়ে বাঁধ ভেঙে যায়। স্থানীয় এলাকাবাসী নিজেরা স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে আপদকালীন পানি আটকাতে পারলেও চরম আতঙ্কে রয়েছে।
এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (এসডিই) মো. মিজানুর রহমান জানান, চলতি পূর্ণিমার গোনে নদ-নদীর জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে দেড় থেকে দুই ফুট উচ্চতায় প্রবাহিত হচ্ছে। যে কারণে কোন কোন স্থানে বাঁধের উপর দিয়ে জোয়ারের পানি উপচে পড়ছে। দ্রুততম সময়ের  মধ্যে বাঁধ মেরামত করে উচ্চতা বৃদ্ধি করা হবে বলে তিনি জানান।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ