মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

ক্রেতা-বিক্রেতাদের পদচারণায় মুখরিত বইমেলা

ইবরাহীম খলিল : দিন যতই যাচ্ছে, বইমেলায় ভিড় ততই বাড়ছে। প্রকাশক ও বিক্রেতারা বলছেন, শুরুর দিকের খরা কাটিয়ে মেলা প্রাঙ্গণে ফিরছে প্রাণ। বয়সের গণ্ডি পেরিয়ে সব বয়সী মানুষের ঢল নামছে। মুখরিত হয়ে উঠছে পাঠক, দর্শনার্থী, ক্রেতা-বিক্রেতাদের পদচারণায়। করোনাকালেও মেলায় ভিড় বাড়ায় হাসি ফুটছে লেখক-প্রকাশকদের মুখে।
গতকাল টিএসসি সংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ফটক দিয়ে বিভিন্ন বয়সের মানুষ সারিবদ্ধভাবে প্রবেশ করে বইমেলায়। মানুষের সঙ্গে মেলায় আসছে নতুন বইও। আর বইয়ের সঙ্গে লেখকদের উপস্থিতিও বাড়ছে। সঙ্গে তাদের শুভাকাক্সক্ষীরাও। সব মিলিয়ে আড্ডা, ঘোরাঘুরি আর বই পড়ে-দেখে কাটছে সময়।
‘প্রিয় মুখ প্রকাশনী’ এর এক বিক্রেতা বলেন, ‘গতকালও আমরা দুশ্চিন্তায় ছিলাম। আজকে মানুষের উপস্থিতি দেখে আশা জেগেছে। বিক্রিও বেড়েছে। এভাবে শেষ পর্যন্ত চললে আমরা সবাই ভাল থাকব। ভাল একটি অভিজ্ঞতা নিয়ে মেলা শেষ করতে পারব।’
ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী ইব্রাহিম খান বলেন, এবারের বইমেলা অনেক বড় পরিসরে হচ্ছে। হাঁটাহাঁটি করা লাগছে। তবে এবার বিজ্ঞানবিষয়ক নতুন নতুন বই এসেছে। যার জন্য ভাল লাগছে। এছাড়া ধুলাবালিমুক্ত করাসহ আর কিছু ব্যবস্থা থাকলে ভাল লাগত।
এদিকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা বই বেশি আসছে বলে জানা গেছে। গত বারের তুলনায় এবার বঙ্গবন্ধুর মহাকাব্যিক জীবন, কর্ম ও রাজনৈতিক দর্শন নিয়ে মেলায় এসেছে শতাধিক বই।
এবারের মেলায় বেশ কিছু স্টল সাজানো হয়েছে বঙ্গবন্ধুর ছবি দিয়ে। কৌতূহলী পাঠক আর বইপ্রেমীরা সেসব স্টলে গিয়ে খোঁজ নিচ্ছেন বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা বইয়ের। কেউ কেউ পছন্দের সেসব বই কিনছেনও।
এবারের বাংলা একাডেমি মেলায় বঙ্গবন্ধুর লেখা ‘আমার দেখা নয়াচীন’ এবং এর ইংরেজি অনুবাদ ‘নিউ চায়না ১৯৫২’ প্রকাশ করেছে। এছাড়া তাদের প্রকাশিত বইয়ের মধ্যে মেলায় বঙ্গবন্ধুর উপর নতুন নয়টি বই প্রকাশ করেছে। এগুলো হলো হাবীবুল্লাহ সিরাজী সম্পাদিত ‘বঙ্গবন্ধুকে নিবেদিত কবিতা’, ‘বঙ্গবন্ধুকে নিবেদিত ছড়া’, ‘একুশের প্রবন্ধ ২০২০: বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ শ্রদ্ধাঞ্জলি’, হাবীবুল্লাহ সিরাজীর মৌলিক গ্রন্থ ‘বঙ্গবন্ধুকে নিবেদিত গল্প’, আবু মো. দেলোয়ার হোসেনের ‘বঙ্গবন্ধু-বিষয়ক গ্রন্থপঞ্জি’, সুভাষ সিংহ রায়ের ‘বঙ্গবন্ধু ও অসাম্প্রদায়িকতা’, সাজেদুল আউয়ালের ‘বঙ্গবন্ধুর সংস্কৃতি ভাবনা’, নূরুন নবীর ‘বঙ্গবন্ধু অ্যান্ড ট্রুবুলেন্ট বাংলাদেশ’ এবং সৈয়দ শাসসুল হকের ‘ব্যালেড অব আওয়ার হিরো: বঙ্গবন্ধু’।
আগামী প্রকাশনী থেকে এসেছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার লেখা ‘মাই ফাদার মাই বাংলাদেশ’, আব্দুল গাফফার চৌধুরীর ‘আমার বঙ্গবন্ধু আমার বাংলাদেশ’, আনিসুজ্জামান, সৈয়দ শামসুল হক, আনোয়ারা সৈয়দ হক, হাসনাত আব্দুল হাই এবং বেলাল চৌধুরীর পৃথক পৃথক গ্রন্থ ‘বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধ’, এবং অসীম সাহার ‘বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধ’। পাঠক সমাবেশ থেকে প্রকাশিক হয়েছে ফরিদুর রেজা সাগরের ‘বঙ্গবন্ধুর ভাষণ ও সুমনের গল্প’, ড. সুনীল কান্তি দে’র ‘বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধ ও ভারত’ এবং কামাল হোসেনের সম্পাদনায় ‘মৃত্যুঞ্জয়ী মহানায়ক’।
অন্য প্রকাশ থেকে প্রকাশিত হয়েছে সেলিনা হোসেন সম্পাদিত ‘নির্বাচিত গল্পে বঙ্গবন্ধু’, হাসানাত আব্দুল হাইয়ের জনকের গল্প’, মোস্তফা কামালের ‘১৯৭৫’। শুধু বই প্রকাশ নয়, অন্য প্রকাশ তাদের স্টলে বঙ্গবন্ধুর বিশাল ছবি টাঙিয়ে দিয়েছে। যেখানে সাতই মার্চের স্বাধীনতার সেই অমর বাণী লেখা- এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। এছাড়া তারা বঙ্গবন্ধুর ৩২ নম্বর বাড়ির আদলেই তৈরি করেছে প্যাভেলিয়ন।
অনন্যা থেকে প্রকাশিত হয়েছে অধ্যাপক আবু সাইয়িদ’র ‘দিনলিপি: বঙ্গবন্ধুর শাসন সময়’, মুনতাসীর মামুনের ‘বঙ্গবন্ধুর জীবন’, হুমায়ূন কবীর ঢালীর ‘আমাদের বঙ্গবন্ধু, আমাদের জাতির পিতা’।
অন্বেষা থেকে এসেছে সুরমা জাহিদের ‘বহির্বিশ্বে গণমাধ্যমে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ’, মোফাজ্জের হকের ‘আওয়ামী লীগের আত্মত্যাগী নেতাদের সংগ্রামী জীবন’, শামস সাইদের ‘ধানমন্ডি ৩২ নম্বর’।
এদিকে পাঠকের আগ্রহের দিকটা লক্ষ্য রেখে অনেক প্রকাশক এবার বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্মের ওপর বই প্রকাশ করেছেন। সেসব বইয়ের চাহিদাও অনেক। বিক্রিকর্মীরা জানান, বঙ্গবন্ধুর ওপর লেখা বই নিয়ে পাঠকের আগ্রহ বেড়েছে। অনেকেই কিনতে শুরু করেছেন। মেলায় এবার এমন প্রকাশনী খুব কমই খুঁজে পাওয়া যাবে, যারা বঙ্গবন্ধুর ওপর কোনো বই প্রকাশ করেননি।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ