শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

ডেল্টা লাইফের বিরুদ্ধে ৩৫ কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকি মামলা

স্টাফ রিপোর্টার: পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠান ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের বিরুদ্ধে ৩৫ কোটি ১৭ লাখ টাকার ভ্যাট ফাঁকির তথ্য উদঘাটন করেছে ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদফতর। এ অভিযোগের প্রমাণ পাওয়ায় গতকাল বৃহস্পতিবার কোম্পানিটির বিরুদ্ধে ভ্যাট আইনে মামলা করা হয়েছে। নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের (মূল্য সংযোজন কর) মহাপরিচালক ড. মইনুল খান এ তথ্য জানিয়েছেন। এদিকে ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সে প্রশাসক নিয়োগ দিয়েছে বীমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। গতকাল আইডিআর’র সাবেক সদস্য সুলতান-উল-আবেদীন মোল্লাকে প্রতিষ্ঠানটির প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তার মাসিক সম্মানী ধরা হয়েছে চার লাখ টাকা।

মামলার বিষয়ে ড. মইনুল খান জানান, ভ্যাট ফাঁকির সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকায় ভ্যাট গোয়েন্দার সহকারী পরিচালক সায়মা পারভীনের নেতৃত্বে একটি দল বীমা কোম্পানিটির ২০১৩ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত লেনদেনের তদন্ত করে। ভ্যাট গোয়েন্দার দল তদন্তের স্বার্থে দলিলপত্র চেয়ে প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষকে তলব করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিষ্ঠানটির দেয়া বার্ষিক সিএ রিপোর্ট, প্রতিবেদন, দাখিলপত্র (মূসক-১৯) এবং বিভিন্ন সময়ে প্রতিষ্ঠান কর্তৃক জমা করা ট্রেজারি চালানের কপি ও অন্যান্য দলিল থেকে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্তের আড়াআড়ি যাচাই করে প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয়।

প্রতিবেদনে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটি স্বাস্থ্য বীমাখাতে ভ্যাট হিসেবে ৪০ লাখ ৫৫ হাজার ৭৩ টাকা পরিশোধ করেছে। কিন্তু তাদের প্রদেয় ভ্যাটের পরিমাণ ছিল ১০ কোটি ২১ লাখ ৩৭ হাজার ৪১১ টাকা। এক্ষেত্রে তারা প্রকৃত বিক্রয় তথ্য গোপন করেছে। এতে অপরিশোধিত ভ্যাট বাবদ ৯ কোটি ৮০ লাখ ৮২ হাজার ৩৩৯ টাকার ফাঁকির বিষয়টি সামনে আসে। এ কারণে ভ্যাট আইন অনুযায়ী মাসিক ২ শতাংশ হারে ডেল্টা লাইফকে ১১ কোটি ৩০ লাখ ৪০ হাজার ৭৭৮ টাকা সুদ দিতে হবে।

তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, নিরীক্ষা মেয়াদে সিএ ফার্মের রিপোর্ট অনুযায়ী উৎসে ৬ কোটি ৩৪ লাখ ৭ হাজার ৮০৩ টাকা ভ্যাট পরিশোধ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু তাদের প্রদেয় ভ্যাটের পরিমাণ ছিল ১১ কোটি ৩ লাখ ১৩ হাজার ২৪৯ টাকা। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটির অপরিশোধিত ভ্যাট বাবদ ৪ কোটি ৬৯ লাখ ৫ হাজার ৪৪৬ টাকার ফাঁকি ধরা পড়ে। উৎসে কর্তনের ওপর প্রযোজ্য এই ফাঁকি দেয়া ভ্যাটের ওপর ভ্যাট আইন অনুসারে মাসিক ২ শতাংশ হারে ৫ কোটি ৫৭ লাখ ৭৫ হাজার ১৬৯ টাকা সুদ টাকা আদায়যোগ্য।

অন্যদিকে, তদন্তের সময়কালে প্রতিষ্ঠানটি স্থান ও স্থাপনার ভাড়ার বিপরীতে ১ কোটি ৪৬ লাখ ১৪ হাজার ৯৮০ টাকা পরিশোধ করেছে। এক্ষেত্রে তাদের প্রদেয় ভ্যাটের পরিমাণ ছিল ৩ কোটি ২০ লাখ ৫৫ হাজার ১০১ টাকা। তারা ফাঁকি দিয়েছে ১ কোটি ৭৪ লাখ ৪০ হাজার ১২০ টাকা। ভ্যাট আইন অনুযায়ী এই ফাঁকির ওপরেও মাসিক ২ শতাংশ হারে ২ কোটি ৪ লাখ ৪৬ হাজার ৮৮১ টাকা সুদ প্রযোজ্য। এই তদন্ত মেয়াদে প্রতিষ্ঠানটির সর্বমোট অপরিশোধিত ভ্যাটের পরিমাণ ১৬ কোটি ২৪ লাখ ২৭ হাজার ৯০৫ টাকা এবং সুদ বাবদ ১৮ কোটি ৯২ লাখ ৬২ হাজার ৮২৮ টাকাসহ ৩৫ কোটি ১৬ লাখ ৯০ হাজার ৭৩৩ টাকা পরিহারের তথ্য উদঘাটিত হয়।

মইনুল খান জানান, প্রতিষ্ঠানটি সরকারের ভ্যাট ফাঁকির উদ্দেশ্যে বিভিন্ন ধরনের জালিয়াতি ও মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছে। ভ্যাট আইন অনুযায়ী যা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। গতকাল (বৃহস্পতিবার) এ সংক্রান্ত একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। তদন্তে উদঘাটিত পরিহার করা ভ্যাট আদায়ে পরবর্তী আইনি কার্যক্রম গ্রহণের জন্য প্রতিবেদনটি ভ্যাট কমিশনারেট ঢাকা উত্তরে পাঠানো হবে।

এদিকে প্রশাসক নিয়োগের বিষয়ে সুলতান-উল-আবেদীন মোল্লাকে পাঠানো চিঠিতে আইডিআরএ বলেছে, বীমা আইন ২০১০ এর ৯৬ ধারার (১) উপধারা অনুযায়ী প্রশাসক হিসেবে চূড়ান্তভাবে দায়িত্ব গ্রহণের চার মাসের মধ্যে কর্তৃপক্ষের কাছে একটি প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে। বীমা আইন ২০১০ এর ধারা ৯৫(৩) এর আলোকে নতুন পলিসি ইস্যু আগের মতো অব্যাহত রাখা এবং কোম্পানির ব্যবসা ও অন্যান্য কার্যক্রম যথারীতি পরিচালনা করতেও বলা হয়েছে এ সংক্রান্ত নির্দেশনায়।

চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, কোম্পানির প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য মো. শাখাওয়াত নবী, (অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব) এবং মো. রফিকুল ইসলামকে (অবসরপ্রাপ্ত যুগ্মসচিব) পরামর্শক (কনসালটেন্ট) হিসেবে শিগগিরই নিয়োগ দিয়ে কোম্পানির প্রশাসনিক কার্যক্রম সুচারুভাবে পরিচালনার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। এতে বলা হয়েছে, আপনার (সুলতান-উল-আবেদীন মোল্লা) মাসিক সম্মানী সর্বমোট ৪ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হলো। তবে উৎসব ভাতা (যদি থাকে) মোট সম্মানীর ৬০ শতাংশ পাবেন।

শিগগিরই সুপ্রতিষ্ঠিত কোনো দেশি বা বিদেশি অডিট ফার্ম দিয়ে কোম্পানির অডিট সম্পন্ন করতেও নির্দেশ দেয়া হয়েছে চিঠিতে। পাশাপাশি ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে যেকোনো সময়, যেকোনো বিষয়ে কর্তৃপক্ষের নির্দেশনার জন্য আবেদন করতে বলা হয়েছে।

এর আগে গত ৭ ফেব্রুয়ারি এক সাংবাদিক সম্মেলনে ডেল্টা লাইফের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, আইডিআরএ চেয়ারম্যান ড. এম মোশাররফ হোসেন তাদের কাছে ঘুষ দাবি করেছেন। সেই সঙ্গে আইডিআরএর চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ‘বিদ্বেষপূর্ণ আচরণেরও’ অভিযোগ আনে প্রতিষ্ঠানটি। এর স্বপক্ষে তারা বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করেন।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ