শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

এক মাসের মধ্যে ‘সংগ্রাম পরিষদের’ ব্যানারে আন্দোলনের ঘোষণা

স্টাফ রিপোর্টার: আগামী এক মাসের মধ্যে সাংবাদিকদের সব সংগঠনের সঙ্গে সমন্বয় করে ‘সংগ্রাম পরিষদ’ গঠনের মাধ্যমে সাগর-রুনী হত্যার বিচারের আন্দোলনকে বেগবান করার ঘোষণা দিয়েছে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি। ডিআরইউ সদস্য সাংবাদিক দম্পতি মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সারওয়ার ও এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন রুনী হত্যার প্রতিবাদ ও বিচারের দাবিতে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে ডিআরইউ চত্বরে আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে এই ঘোষণা দেন সংগঠনের সভাপতি মুরসালিন নোমানী। 

ডিআরইউ’র সভাপতি মুরসালিন নোমানীর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মসিউর রহমান খানের সঞ্চালনায় প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) একাংশের সভাপতি এম আবদুল্লাহ, অপর অংশের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব আবদুল মজিদ, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সহ সভাপতি রেজওয়ানুল হক রাজা, ডিআরইউ’র সাবেক সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন বাদশা, সাইফুল ইসলাম, ইলিয়াস হোসেন ও রফিকুল ইসলাম আজাদ, বিএফইউজে একাংশের সাবেক মহাসচিব ওমর ফারুক, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) একাংশের সভাপতি কুদ্দুস আফ্রাদ, সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান তপু, অপর অংশের সাধারণ সম্পাদক মো: শহিদুল ইসলাম, ডিআরইউ’র সহ-সভাপতি ওসমান গনি বাবুল, সাবেক সাধারণ সম্পাদক রাজু আহমেদ ও সৈয়দ শুকুর আলী শুভ, ডিআরইউর সাবেক সহ সভাপতি আজমল হক হেলাল, বর্তমান অর্থ সম্পাদক শাহ আলম নূর, কার্যনির্বাহী সদস্য এম এম জসিম প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। এছাড়া মেহেরুন রুনীর ছোট ভাই নওশের আলম রোমান বক্তব্য রাখেন। সাগর-রুনী দম্পতির একমাত্র সন্তান মাহির সারওয়ার মেঘ প্রতিবাদ সমাবেশে অংশ নেন।

প্রতিবাদ সমাবেশে ডিআরইউ’র দপ্তর সম্পাদক মো: জাফর ইকবাল, নারী বিষয়ক সম্পাদক রীতা নাহার, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মাইদুর রহমান রুবেল, আপ্যায়ণ সম্পাদক মোহাম্মদ নঈমুদ্দীন, কার্যনির্বাহী সদস্য এম এম জসিম, রহমান আজিজ, রুমানা জামান, মো: মাহবুবুর রহমানসহ সাবেক কর্মকর্তা ও সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। সমাবেশের শুরুতে সাংবাদিক দম্পতির রুহের মাগফিরাত কামনায় দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।  

নেতৃবৃন্দ বলেন, ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারী সাংবাদিক দম্পতি সাগর সারওয়ার ও মেহেরুন রুনীকে নৃশংসভাবে নিজ বাসায় হত্যা করা হয়। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, হত্যাকাণ্ডের পর নয় বছর পেরিয়ে গেলেও হত্যাকারীদের আজও শনাক্ত কিংবা গ্রেপ্তার করা হয়নি। বিচার প্রক্রিয়াও থমকে আছে। এমনকি ৭৮ বার মামলার চাজশীর্ট প্রদানের তারিখ নেয়া হয়েছে। নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে চাঞ্চল্যকর এই মামলার খুনীদের গ্রেপ্তারের দাবি করে বলেন, এভাবে সভা-সমাবেশ করলে সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টনক নড়বে না। এজন্য প্রয়োজন সাংবাদিকদের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন। 

সভাপতির বক্তৃতায় ডিআরইউ সভাপতি মুরসালিন নোমানী বলেন, গত প্রায় এক দশক ধরে ডিআরইউসহ সাংবাদিক সমাজ সাগর-রুনী দম্পতির খুনীদের বিচারের দাবিতে আন্দোলন করে যাচ্ছে। অথচ হত্যাকাণ্ডের পর তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ সরকারের উর্ধ্বতন কর্তারা বলেছিলেন, ৪৮ ঘন্টার মধ্যেই খুনীদের গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনা হবে। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, ৭৮ হাজার ৬০০ ঘন্টা পার হয়ে গেলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের বিচারের কোনো উদ্যোগই গ্রহণ করেনি। বরং তারা তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নামে এ পর্যন্ত ৭৮ বার তারিখ পিছিয়েছে। এখন সেটি সেঞ্চুরীর দিকে যাচ্ছে। 

ডিআরইউ’র সভাপতি বলেন, সাগর-রুনী পরিবারের কাছে, তাদের সন্তানের কাছে আমরা লজ্জিত। আমাদের বুকটা ফেটে যায়। যখন দেখি অন্য হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়, তদন্ত হয়, কিন্তু সাগর-রুনী হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়না। এমনকি তদন্ত রিপোর্ট দিতেও গড়িমসি। মুরসালিন নোমানী বলেন, এভাবে আর চলতে দেয়া যায় না। আগামী এক মাসের মধ্যে ডিআরইউ সকল সাংবাদিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সাথে আলোচনা করে ‘সংগ্রাম পরিষদ’ গঠন করবে। এই সংগ্রাম পরিষদ রাজপথে আন্দোলনের মধ্যদিয়েই সাংবাদিক দম্পতির খুনীদের বিচারের ব্যবস্থা করবে ইনশাআল্লাহ। ডিআরইউ সভাপতি আন্দোলনের আগেই সাগর-রুনী হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবি জানান। অন্যথায় সকল সাংবাদিক সংগঠনকে সাথে নিয়ে ডিআরইউ আবারো বিচারের দাবিতে রাস্তায় নামতে বাধ্য হবে বলে তিনি ঘোষণা দেন।

ডিআরইউ’র সাধারণ সম্পাদক মসিউর রহমান খান বলেন, সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনী হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবীতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন হচ্ছে। সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে বারবার বিচারের আশ্বাসও দেয়া হচ্ছে। কিন্তু কোন এক অজানা কারণে এই নৃশংস হত্যার বিচার কাজ শুরুই হয়নি। তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার তারিখ ৭৮ বার পেছানো হয়েছে। 

উল্লেখ্য, ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনীকে রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের বাসায় হত্যা করা হয়। পরের দিন রুনীর ভাই নওশের আলম রোমান শেরেবাংলা নগর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। চারদিন পর মামলার তদন্তভার ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কাছে হস্তান্তর করা হয়। দুই মাসেরও বেশি সময় তদন্ত করে ডিবি পুলিশ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনে ব্যর্থ হয়। পরে হাইকোর্টের নির্দেশে ২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল হত্যা মামলাটির তদন্তভার র‌্যাবের কাছে হস্তান্তর করা হয়। কিন্তু গত নয় বছরেও মামলার তদন্তে অগ্রগতির কোনও তথ্য পাওয়া যায়নি। 

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ