বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

একটি জাতির জন্য ১২ বছর কিছু না -প্রধানমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার : আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, একটি জাতির জন্য ১২ বছর কিছু না। কিন্তু তারপরও আমরা যেভাবে এই দেশের জন্য কাজ করে যাচ্ছি, পথ দেখিয়ে যাচ্ছি- যদি এই পথ ধরেই এগুনো যায় তাহলে এদেশ অবশ্যই উন্নত-সমৃদ্ধ হবে।
গতকাল বুধবার দুপুরে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের ৪৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে যুক্ত হয়ে যুবলীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে নির্দেশনামূলক বক্তব্য দেন।
বিশেষ অতিথি হিসেবে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন প্রান্তে উপস্থিত ছিলেন সাবেক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন, সাবেক চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক এবং সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, সাবেক সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতির পিতা সাড়ে তিন বছরের মধ্যে একটি যুদ্ধ বিধস্ত দেশকে স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছিলেন। এরপর ২১ বছর এদেশের মানুষের জীবন থেকে সম্পূর্ণ হারিয়ে যায়। সাধারণ মানুষ হয় বঞ্চনার শিকার। কারণ এই ২১ বছর যারা ক্ষমতায় ছিল তারা নিজেদের ভাগ্য গড়তেই ব্যস্ত ছিল। যদিও তারা ছেঁড়া গেঞ্জি আর ভাঙা সুটকেসের গল্প শুনিয়েছে। কিন্তু ভাঙা সুটকেসই যাদুর বাক্স হয়ে গিয়েছিল আর ছেঁড়া গেঞ্জি তো তখন ফ্রেঞ্চ শিফন।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘জিয়াউর রহমানের কথা বলি, এরশাদের কথা বলি, খালেদা জিয়ার কথা বলি; যারাই ক্ষমতায় এসেছে তারাই নিজেদের ভাগ্য নিয়েই ব্যস্ত ছিল। ব্যস্ত ছিল অর্থ সম্পদ নিয়ে। মানুষের জন্য তারা কিছু করেনি। করলে যে করা যায়, সেটা আমরাই প্রমাণ করেছি।’
বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাসের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সেই সময় থেকে আমরা দেশের মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। দুর্যোগ আসে, দুর্যোগ আসবে। কিন্তু সেই দুর্যোগের সময় আমাদের শক্ত থাকতে হবে। মানুষের পাশে থাকতে হবে। পরিকল্পিতভাবে পদক্ষেপ নিতে হবে, কাজ করতে হবে। তবেই যেকোনো দুর্যোগ মোকাবিলা করা যাবে এবং ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।’ এজন্য দেশের মানুষকে ধন্যবাদ জানিয়ে যুবলীগের করোনাকালীন সময়ে বিভিন্ন ইতিবাচক কর্মকাণ্ডের ভুয়সী প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘আমরা দেখেছি করোনার সময় কেউ অসুস্থ হলে, বাবা-মা অসুস্থ হলে নিজের সন্তানও পাশে দাঁড়ায়নি। কিন্তু আমাদের যুবলীগের কর্মীরা তাদের পাশে গেছে। হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থা তারা করেছে। মৃতদের দাফন এবং সৎকারের ব্যবস্থা করেছে। ঘরে ঘরে খাদ্য সামগ্রী এবং ত্রাণ পৌঁছে দিয়েছে।’
কৃষদের আমন ধান কাটা, বন্যা দুর্গত, আম্পানে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ানো থেকে শুরু করে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালনসহ শীতার্ত মানুষের মধ্যে শীতবস্ত্র বিতরণসহ বিভিন্ন ইতিবাচক কর্মকাণ্ডের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। এজন্য তিনি যুবলীগের নেতাকর্মীদের অভিনন্দন ও ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, ‘তারা মানবতার জন্য এই কাজগুলো যে করেছে, এটাই হচ্ছে সব থেকে বড়। মানুষের পাশে দাঁড়ানো, মানুষকে সাহায্য করে, এটাই সব থেকে বেশি প্রয়োজন।’
করোনার ভ্যাকসিন নিয়ে বিভিন্ন পদক্ষেপের পরও অনেকের সমালোচনার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ইতোমধ্যে আমরা করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন দেয়া শুরু করেছি। অনেকেই তো বলেছে- বাংলাদেশে ভ্যাকসিন আসবে না। অনেক উন্নত দেশও কিন্তু আনতে পারেনি। এসব কানকথায় কান দেওয়া যাবে না। আমি কিন্তু কোনোদিকে তাকাইনি। আমার কাছে মানুষ এবং মানুষের জীবন সবচেয়ে বড়।
দেশের মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিতে বাংলাদেশ যেন ভ্যাকসিন দ্রুত পায় সে লক্ষ্যে সরকারের একান্ত প্রচেষ্টার কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমি ভ্যাকসিনের জন্য এক হাজার কোটি টাকা আলাদা রেখে সঙ্গে সঙ্গে অ্যাডভান্স করে দিয়েছিলাম। এ জন্যই দিয়েছিলাম যে, যখনই ভ্যাকসিন তৈরি হবে এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যখনই অনুমোদন দেবে, সবার আগে যেন বাংলাদেশ পায়। এবং সেটাই আজ প্রমাণিত সত্য।’
ভ্যাকসিন উপহার দেয়ায় ভারত সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এখন আরও অনেকেই উপহার দিতে চাচ্ছেন। কিন্তু আমাদের যেটা প্রয়োজন আমরা সেটা নিয়ে এসেছি ‘ তিনি বলেন, ‘এখানে যুবলীগের একটা দায়িত্ব আছে। বিশেষ করে আমরা বলেছি যে ৪০ বছরের উপরে যারা, আর বিশেষ করে শিক্ষক থেকে শুরু করে যাদের সবসময় মানুষের পাশে কাজ করতে হয়, তাদের আগে দিতে হবে। মানুষের মাঝে এই ভয়টা দূর করতে হবে। সবাই যেন ভ্যকসিনটা নেয়। সেই ব্যবস্থা করে মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে।’
ভ্যাকসিন পাওয়ার পরও সবাইকে মাস্ক ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ভ্যাকসিন নেওয়ার পরও কিন্তু স্বাস্থ্য সুরক্ষার নিয়মগুলো মেনে চলতে হবে। মাস্ক ব্যবহার করতে হবে, হাত পরিষ্কার রাখতে হবে এবং সবসময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। এ ব্যাপারে সবাইকে নজরে রাখতে হবে এবং এটা যুবলীগ করবে, সেটা আমি চাই ‘
যুবলীগের নতুন নেতৃত্বকে অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির পিতার নেতৃত্বে সবসময় সকল আন্দোলনে তরুণরা অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। কাজেই তাদের হাত ধরেই বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা ইনশাল্লাহ আমরা গড়ে তুলব।’
এ ব্যাপারে তরুণদের প্রস্তুত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের তো বয়স হয়ে গেছে। আজকের তরুণরাই আগামী প্রজন্ম এবং প্রজন্মের পর প্রজন্ম এই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। আজকের দিনে এটাই শপথ নিতে হবে, আমরা জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ব।’
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ এবং পরিচালনা করেন সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল। করোনা ভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতি বিবেচনা নিয়ে সংগঠনের সাবেক চেয়ারম্যান ও সাধারণ সম্পাদককের আমন্ত্রণ জানানো হলেও বয়সজনিত জটিলতার কারণে সবাই উপস্থিত ছিলেন না।
তবে সাবেক চেয়ারম্যানদের মধ্যে আলোচনা সভায় আমন্ত্রণ জানানো হয়নি বিতর্কিত ইস্যুতে অব্যাহতিপ্রাপ্ত সাবেক চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীকে। সাবেক চেয়ারম্যান ও সাধারণ সম্পাদকদের মধ্যে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তন প্রান্তে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাবেক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন, সাবেক চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক এবং সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, সাবেক সাধারণ সম্পাদকজ হারুনুর রশীদ।
প্রসঙ্গত, যুবলীগের ৪৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ছিল গত ১১ নভেম্বর। ১৯৭২ সালের ১১ নবেম্বর দেশের প্রথম ও সর্ববৃহৎ এ যুব সংগঠনটি প্রতিষ্ঠিত হয়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক শেখ ফজলুল হক মণি যুবলীগ প্রতিষ্ঠা করেন। সংগঠনটির বর্তমান চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শেখ ফজলুল হক মণির বড় ছেলে শেখ ফজলে শামস পরশ।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ