শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

বিশ্বে দুর্নীতিতে বাংলাদেশের অবস্থান ১২তম --------- টিআইবি

 

স্টাফ রিপোর্টার: বিশ্বের শীর্ষ দুর্নীতিগ্রস্ত দেশগুলোর তালিকায় সর্বনিম্ন দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান এখন ১২তম। ২০১৯ সালের তুলনায় দুর্নীতিতে দুই ধাপ নিচে নেমেছে বাংলাদেশ। সর্বনি¤œ থেকে গণনা অনুযায়ী বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় দ্বিতীয় সর্বনি¤œ অবস্থানে রয়েছে। বাংলাদেশ সিপিআই সূচক অনুয়ায়ী ২০১২ সাল থেকে দক্ষিণ এশিয় দেশগুলোর মধ্যে অষ্টমবারের মত এবারও দ্বিতীয় সর্বনিম্ন অবস্থানে রয়েছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার অনলাইনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ২০২০ সালের সূচক প্রকাশ করেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। প্রতিবছর বিশ্বজুড়ে দুর্নীতির ধারণা সূচক প্রকাশ করে থাকে বার্লিনভিত্তিক ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআই)। এরই ধারাবাহিকতায় এ বছরও প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সংস্থাটি। এ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

টিআইবির তথ্য অনুযায়ী, ১৮০টি দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান নিচের দিক থেকে ১২তম। ২০০১ সাল থেকে বাংলাদেশ এই জরিপের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এই তালিকায় উপরের দিক থেকে ১৪৬তম বাংলাদেশ।

দুর্নীতিমুক্ত দেশ হিসেবে প্রথম হয়েছে ডেনমার্ক ও নিউজিল্যান্ড। পরবর্তী অবস্থানে রয়েছে- ফিনল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড, নরওয়ে, নেদারল্যান্ড, জার্মানি, লুক্সেমবার্গ, অস্ট্রেলিয়া ও কানাডা। সবচেয়ে কম স্কোর ১২ পেয়েছে সাউথ সুদান ও সোমালিয়া। ৬২টি দেশের স্কোর বেড়েছে। ৭০টি দেশের স্কোর আগের মতই রয়েছে। ৪৮টি দেশের স্কোর নেমেছে বলেও জানান ড. ইফতেখারুজ্জামান। তিনি জানান, দুর্নীতির ধারণা সূচকে (করাপশন পারসেপশন ইনডেক্স-সিপিআই ২০২০) বাংলাদেশের স্কোর ২৬, যা গত বছরও একই ছিল। দুর্নীতির তালিকায় সর্বোচ্চ থেকে গণনা করলে বিশ্বের ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৪৬তম।

২০২০ সালের সিপিআই অনুযায়ী, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কম দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ ভুটান। এ দেশটির স্কোর ৬৮ ও সর্বোচ্চ থেকে গণনা অনুযায়ী সূচকে অবস্থান ২৪, যা ২০১৯ সালের সমান স্কোর হলেও অবস্থানে ১ ধাপ এগিয়েছে। সর্বোচ্চ থেকে গণনা অনুযায়ী এবারের সিপিআই-এ দক্ষিণ এশিয়ায় বড় অগ্রগতি অর্জন করেছে মালদ্বীপ। এবার পূর্ববর্তী অবস্থান থেকে বড় ধরনের উল্লম্ফন দিয়ে দ্বিতীয় স্থানে উন্নীত হয়েছে মালদ্বীপ, গতবারের তুলনায় দেশটির স্কোর ১৪ পয়েন্ট বেড়ে এবার হয়েছে ৪৩ এবং ৫৫ ধাপ এগিয়ে উঠে এসেছে ৭৫তম অবস্থানে। গতবারের তুলনায় এবারের তালিকায় দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থান হারিয়ে তৃতীয়তে নেমে আসা ভারতের স্কোর ১ কমে দাঁড়িয়েছে ৪০ এবং অবস্থান ৬ ধাপ নেমে হয়েছে ৮৬। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে এরপরে শ্রীলঙ্কা গতবারের মত ৩৮ স্কোর ধরে রাখতে পারলেও ১ ধাপ পিছিয়ে ৯৪তম অবস্থানে এসেছে। এরপর রয়েছে নেপাল, দেশটি গতবারের চেয়ে ১ পয়েন্ট কম পেয়ে স্কোর অর্জন করেছে ৩৩ ও সর্বোচ্চ থেকে গণনা অনুযায়ী ৪ ধাপ পিছিয়ে ১১৭তম অবস্থানে রয়েছে। গতবারের মত এবারও ১ পয়েন্ট কম, অর্থাৎ ৩১ স্কোর পেয়ে ৪ ধাপ পিছিয়ে ১২৪তম অবস্থানে নেমে গেছে পাকিস্তান।

তৃতীয়বারের মত ২৬ স্কোর অপরিবর্তিত রেখে এবং গতবারের ন্যায় ১৪৬তম অবস্থান অপরিবর্তিত রেখে এর পরের অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর মাঝে বাংলাদেশের পরে ২০১৯ সালের চেয়ে লক্ষ্যণীয়ভাবে ৩ স্কোর বেশি পেয়েও ৮ ধাপ এগিয়ে সিপিআই-২০২০ সূচকে সর্বোচ্চ থেকে গণনা অনুযায়ী ১৬৫তম অবস্থানে উঠে এসেছে আফগানিস্তান। অর্থাৎ সর্বনিম্ন থেকে গণনা অনুযায়ী আফগানিস্তান ও বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় যথাক্রমে প্রথম ও দ্বিতীয় সর্বনিম্ন অবস্থানে রয়েছে। বাংলাদেশ সিপিআই সূচক অনুয়ায়ী ২০১২ সাল থেকে দক্ষিণ এশিয় দেশগুলোর মধ্যে অষ্টমবারের মত এবারও দ্বিতীয় সর্বনিম্ন অবস্থানে রয়েছে।

আন্তর্জাতিক প্রতিবেদনে দুই বছরের চলমান তথ্য ব্যবহার করা হয়। এবার দুর্নীতি ধারণা সূচকে বৈশ্বিকভাবে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে ২০২০ সালের অক্টোবর মাস পর্যন্ত তথ্য নেওয়া হয়েছে। রাষ্ট্রীয় খাতে ঘুষ লেনদেন, সরকারি খাতে নিয়োগে স্বজনপ্রীতি, রাষ্ট্রকাঠামোকে দখল করার প্রবণতাসহ বিভিন্ন বিষয়ের তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। গণতান্ত্রিক জবাবদিহি, আইনের প্রয়োগ, উচ্চপর্যায়ের দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনার সাহস ও চর্চা, গণমাধ্যমের কাজ করার স্বাধীনতাসহ বিভিন্ন বিষয় প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করে। ইফতেখারুজ্জামান জানান, ২০২০ সালের প্রতিবেদনের তথ্যের উৎস ১৩টি আন্তর্জাতিক জরিপ। বাংলাদেশের জন্য আটটি সূত্র থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে।

ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশের ক্ষেত্রে দুর্নীতি দমনে হতাশাজনক চিত্রের জন্য ক্ষমতার অপব্যবহার, গণতন্ত্রের জবাবদিহির কার্যকারিতার অবদমন, বিচারহীনতার সংস্কৃতিসহ বিভিন্ন উপাদান প্রভাব ফেলেছে। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর করোনা মোকাবিলায় নানান দুর্নীতি, উচ্চপর্যায়ের দুর্নীতিগ্রস্ত ‘রুই-কাতলা’দের বিচারের আওতায় আনার ঘাটতি, রাষ্ট্রীয় খাতে কেনাকাটায় রাজনৈতিক প্রভাব ও অনিয়ম, গণমাধ্যমের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব করার বিষয়গুলোও একইভাবে দায়ী। দুর্নীতি দমন কমিশনের কার্যকারিতা নিয়েও প্রশ্ন আছে। ব্যাংক খাতের দুর্নীতি তো আছেই।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ