শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

প্রথম টিকা নেবেন ২৫ জন ॥ উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার : আজ বুধবার করোনার টিকা প্রদানের উদ্বোধন করা হবে। আর এ কার্যক্রমের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল। এদিকে, ভারত থেকে আনা বেক্সিমকোর টিকায় কোনো সমস্যা না থাকায় ছাড়পত্র দিয়েছে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর। কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের একজন নার্সসহ ২৫ জনকে টিকা দেওয়ার মধ্য দিয়ে সারাদেশে করোনাভাইরাসের টিকাদান কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেলা সাড়ে ৩টায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে টিকাদান কার্যক্রমের উদ্বোধন করবেন। তিনি ভিডিও কনফারেন্সেই প্রথম ৫ জনের ওপর টিকার প্রয়োগ সরাসরি প্রত্যক্ষ করবেন।
গতকাল মঙ্গলবার  রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল ও ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে। রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জামিল আহমেদ সাংবাদিকদের জানান, আমরা আমাদের প্রস্তুতির শেষ পর্যায়ে আছি। বুধবারের যে মূল অনুষ্ঠান হবে সেটির জন্য আমরা পুরোপুরি প্রস্তুত।
রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের একজন নার্সকে টিকা দেয়ার মাধ্যমে এই কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হবে। প্রথম দিন ২৪ জনকে টিকা দেয়া হবে যাদের মধ্যে বেশিরভাগই সম্মুখযোদ্ধা। পরদিন অর্থাৎ ২৮ জানুয়ারি ৫টি হাসপাতালের ১শ’ জনকে করে মোট ৫শ’ জনকে টিকা দেয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে টিকা কার্যক্রম ও এর অ্যাপসের উদ্বোধন করবেন।
এদিকে, ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে বেক্সিমকোর আমদানি করা করোনার ভ্যাকসিন মানবদেহে প্রয়োগের জন্য উপযুক্ত হওয়ায় ছাড়পত্র দিয়েছে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর। ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমান সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, টিকার প্রতিটি লটের নমুনা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরীক্ষা করা হয়েছে। তারপর ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। বুধবার এ টিকা দিয়েই শুরু হবে করোনাভাইরাসের টিকাদান কর্মসূচি।
এর আগে, ২০ জানুয়ারি ভারতের দেয়া উপহারের ২০ লাখ ডোজ করোনার টিকা দেশে আসে। এছাড়া, ভারতের সেরাম থেকে কেনা অক্সফোর্ড অ্যাসট্রাজেনেকার থেকে তিন কোটি ডোজের প্রথম পর্যায়ের ৫০ লাখ ডোজ করোনার টিকা দেশে এসেছে। আগামী মাসের শুরুতে করোনার টিকার দ্বিতীয় চালান দেশে আসার কথা রয়েছে।
এদিকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের একজন নার্সসহ ২৫ জনকে টিকা দেয়ার মধ্য দিয়ে সারাদেশে করোনাভাইরাসের টিকাদান কার্যক্রম শুরু হচ্ছে আজ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেলা সাড়ে ৩টায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে টিকাদান কার্যক্রমের উদ্বোধন করবেন। তিনি ভিডিও কনফারেন্সেই প্রথম ৫ জনের ওপর টিকার প্রয়োগ সরাসরি প্রত্যক্ষ করবেন।
গতকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে টিকাদান কার্যক্রম শুরুর প্রস্তুতি দেখতে এসে সাংবাদিকদের এসব জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনি বলেন, এই হাসপাতালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনাভাইরাসের টিকাদান কর্মসূচি উদ্বোধন করবেন। এর মাধ্যমেই দেশে টিকা দেওয়া শুরু হয়ে যাবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যুক্ত হয়ে প্রথম পাঁচজনকে টিকা দেয়া দেখবেন।
মন্ত্রী জানান, প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের সঙ্গে সঙ্গে সুরক্ষা অ্যাপের মাধ্যমে করোনাভাইরাসের টিকার জন্য নিবন্ধন কার্যক্রমও চালু হয়ে যাবে। বৃহস্পতিবার ঢাকার পাঁচটি হাসপাতালের ৪০০ থেকে ৫০০ জনকে টিকা দেয়া হবে। সারাদেশে টিকাদান কার্যক্রম শুরু হবে আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি।
প্রথম যারা টিকা পাবেন, তাদের মধ্যে ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী ছাড়াও পুলিশ, সেনাবাহিনী, গণমাধ্যমকর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ থাকবে বলে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী। মঙ্গলবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালও পরিদর্শন করার কথা রয়েছে তার।
ঢাকার মুগদা জেনারেল হাসপাতালে কোভিড-১৯ টিকা সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহের কক্ষ। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভিভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনাভাইরাসের টিকা বাংলাদেশে দেওয়া হবে। সরকার সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে যে তিন কোটি ডোজ টিকা কিনছে, তার প্রথম চালানে ৫০ লাখ ডোজ সোমবার দেশে পৌঁছেছে। পরীক্ষা নিরীক্ষা করে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর প্রথম চালানের টিকা মানবদেহে প্রয়োগের অনুমতিও দিয়েছে।
এছাড়া সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত আরও ২০ লাখ ডোজ টিকা ভারত সরকারের উপহার হিসেবে পেয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশে যেহেতু এ টিকার ক্লিনিক্যাল ট্রায়ল হয়নি, তাই প্রথম দফায় ঢাকার পাঁচটি হাসপাতালে নির্দিষ্ট ব্যক্তিদের ওপর প্রয়োগ করে দেখা হবে। সব ঠিক থাকলে ৭ ফেব্রুয়ারি শুরু হবে সারা দেশে টিকাদান। সেজন্য হাতে থাকা ওই ৭০ লাখ টিকার বেশিরভাগ অংশ বিভিন্ন জেলা উপজেলা পর্যায়ে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, এর আগে ৮ ফেব্রুয়ারির কথা বলা হলেও আমরা ৭ তারিখেই সারা দেশে শুরু করার চিন্তা করছি। যারা এই টিকা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে ‘বিভ্রান্তিকর’ কথা বলছেন, তাদের উদ্দেশে জাহিদ মালেক বলেন, টিকা আনা হয়েছে বাংলাদেশের মানুষকে রক্ষা করতে, শরীরে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে। এজন্য গত ৯ মাস ধরে কাজ করে যাচ্ছে সরকার। কাজেই করোনাভাইরাসের টিকা সরকারের কাছে কোনো রাজনীতি নয়। এটা মানুষের জীবনরক্ষা করতে আনা হয়েছে। যারা এই টিকা নিয়ে বিরূপ প্রচার চালাচ্ছেন, তারা ভালো কাজ করছেন না। তারা এদেশের মানুষের মঙ্গল কামনা করলে এটা নিয়ে বিরূপ প্রচারণা চালাবেন না।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ