শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

আস্থার সংকট কাটাতে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী আগে করোনার টিকা নিন -বিএনপি

গতকাল শুক্রবার পল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী -সংগ্রাম

স্টাফ রিপোর্টার : করোনার টিকা নিয়ে জনমনে অনাগ্রহতা কাটাতে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীকে আগে টিকা নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি। গতকাল শুক্রবার সকালে এক সাংবাদিক সম্মেলনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রাষ্ট্রপ্রধানদের প্রথম টিকা নেয়ার দৃষ্টান্ত তুলে ধরে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এই আহ্বান জানান। তিনি বলেন, আমি রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীকে আহ্বান জানাব, পৃথিবীর দেশে দেশে রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানরা যেভাবে টিকার প্রথম ডোজ নিয়ে মানুষকে আস্থা ও ভরসা দিচ্ছেন, আশ্বস্ত করছেন আপনারাও সেই পথ অনুসরণ করুন। তাদের মতো আপনারাও সাহসী পদক্ষেপ নিন। টিকা নিয়ে ভ্রান্ত ধারনা কাটাতে সহায়ক হবে। অনাগ্রহতা কাটিয়ে দেশবাসীকে টিকায় আগ্রহী করে তুলবে।
সরকারের প্রধানের উদ্দেশ্যে রিজভী বলেন, আপনার স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলছেন, ভিআইপিরা আগে নেবে না, সাধারণ মানুষরা আগে নেবে। এতে মানুষের মনে গভীর সন্দেহ তৈরি হয়েছে। টিকাটা আগে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় যারা আছেন সেখান থেকে শুরু করলে মানুষের মধ্যে আস্থা আসবে। আপনারা আগে টিকা নিলে জনগন ভরসা পাবে। এই টিকা নিতে সাহস পাবে গোটা দেশবাসী। জনগন উপলব্ধি করবে, আপনারা দেশের মানুষের কল্যাণে নিবেদিত। জনগনকে সত্যিকার অর্থে ভালোবাসেন।
তিনি বলেন, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালিক বলেছেন, ভার্চুয়ালি টিকাদান কর্মসূচির উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ঢাকার কূর্মিটোলা হাসপাতালে আনুষ্ঠানিকভাবে তা শুরু হবে। আমরা আশা করব, প্রথম টিকাটি প্রধানমন্ত্রীর গ্রহণ করার দৃশ্য সরাসরি টেলিভিশনে সম্প্রচার করা হবে। আর যদি প্রথম ডোজ টিকা না নেন, জনগন নিশ্চিত হবে আপনাদের সবকিছুই ভন্ডামি ও ছলচাতুরি। জনগনকে কোনো দেশের পরীক্ষাগারের গিনিপিগ বানাবেন-এটা তো জনগন মেনে নেবে না। গরীব মানুষ আম জনতাকে আগে ভ্যাকসিন (টিকা) দিয়ে দেখবেন ওরা মরে না বাঁচে। আপনাদের বিশ্বাসের অগ্নিপরীক্ষা হবে এখন।
ভারতের টিকা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে রুহুল কবির রিজভী বলেন, বৃহস্পতিবার ভারত সরকারের সৌজন্যে বাংলাদেশে ২০ লাখ ডোজ টিকা পাঠানো হয়েছে। এ নিয়ে জনমনে রয়েছে গভীর সন্দেহ-সংশয়। এই কারণে নিশিরাতের সরকারের মন্ত্রী ও কর্মকর্তাদের নানারকম বক্তব্য-মন্তব্য। আমরা যতদূর জানি, এখন পর্যন্ত ভারত তাদের দেশে কোবিড-১৯ মোকাবিলায় দুই ধরনের টিকা অনুমোদন দিয়েছে। একটি হচ্ছে বৃটেনের অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি এবং ঔষধ প্রস্ততকারী সংস্থা অ্যাস্ট্রোজেনেকার মিলিত গবেষণায় তৈরি টিকা ‘কোভিশিল্ড’। অপরটি হচ্ছে ভারত-বায়োটেকের উদ্ভাবিত টিকা ‘কোভ্যাক্সিন’। এই দুইটাই উৎপাদন করছে ভারতের উৎপাদকারী প্রতিষ্ঠান পুণের সিরাম ইনস্টিটিউট। তবে ভারত সরকার কোনটি পাঠিয়েছে? কোভিশিল্ড নাকী কোভ্যাক্সিন’। এটা একটা বড় প্রশ্নবোধক চিহ্ন। তিনি বলেন, ভারতে টিকা গ্রহণের চারদিনে মারা গেছে তিনজন। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে প্রায় ছয়‘শ লোক। এনডিপিঠির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশটির চিকিৎসকরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। বিতর্কিত কোভ্যাক্সিন টিকা নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন দেশটির চিকিৎসকদের বড় অংশ। তারা বলেছেন, কোভ্যাক্সিন নিয়ে আমরা সন্দিহান ও সংশায়িত। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে নানা ধরনের খবর প্রকাশিত হওয়ায় এ নিয়ে ঘোরতর রহস্য তৈরি হয়েছে।
রিজভী বলেন, স্বামী-স্ত্রীর কূটনৈতিক সম্পর্কের জের হিসেবে উপহারের নামে ২০ লাখ ডোজ টিকা দেয়ার পরও মানুষের মনে সন্দেহ-সংশয় সৃষ্টির আরেকটি কারণ হচ্ছে, উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সিরাম ইনস্টিটিউটের কাছ থেকে ভারত সরকার যে দামে কোভিশিল্ড কিনছে তার চেয়ে এক ডলার বেশি দামে তারা বিক্রি করছে বাংলাদেশের কাছে। কেনার সময়ে প্রতিটি টিকায় বাংলাদেশকে এক ডলার করে বেশি দিতে হচ্ছে। শত শত কোটি টাকা অতিরিক্ত মুনাফা নেয়ার পর প্রথমে বাংলাদেশ চায় অগ্রিম নগদ টাকায় কেনা টিকার সরবারহ। সেটি সরবারহ না করে ঢাকঢোল পিটিয়ে বিনা পয়সায় ২০ লক্ষ ডোজ দিয়ে কি বুঝাতে চাইলো? ধরা যাক ৩ হাজার টাকা মূল্যের জিনিস ৫ হাজার টাকা দিয়ে ক্রয় করার পর দোকানি ১ ‘শ উপহার দিলো। সেটাকে আমরা কী বলবো? উপহার ছাড়া কি আর কিছু বলা যাবে। আপনি শাড়ির দোকানে যাবেন কিংবা কাপড় কিনতে যাবেন, র্শাট-টার্ট কিনতে যাবেন কোথাও। আপনি দেখবেন- বিক্রেতারা আপনার সাথে যখন কথা বলবে তখন চা অথবা কোল্ডড্রিংকস আপ্যায়ন করে। এই যে বিনামূল্যে ২০ লাখ ডোজ ওই শাড়ির দোকানের কোল্ডড্রিংকস বা চা আপ্যায়নের মতো ঘটনা।
রিজভী বলেন, স্বাস্থ্যমন্ত্রী গত ৩ জানুয়ারি বলেছেন, সেরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে তিন কোটি টিকা কেনার জন্য ব্যক্সিমকোর চুক্তি হয়েছে। ফেব্রুয়ারির শুরুতেই ৫০ লাখ ডোজ কোভিশিল্ড টিকা পাবে বাংলাদেশ। টিকার জন্য অগ্রিম হিসেবে ৬শ কোটি টাকা সেরাম ইনস্টিটিউটের একাউন্টে জমা দেয়া হয়। এই খবর প্রচারিত হওয়ার পরপরই জানা যায়, সেরাম ইনস্টিটিউটের ওপর টিকা রপ্তানির নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে ভারত সরকার। এখন হঠাৎ করেই আবার জনগন শুনতে পাচ্ছে, ২৫ কিংবা ২৬ জানুয়ারি নাকী বাংলাদেশে কেনা টিকার ৫০ লাখ ডোজ আসবে। ঘোড়ার আগে গাড়ি চালানোর হেতু কি? ‘উপহারের’ আগে বেশি দামে বাংলাদেশের কেনা টিকা সরবারহে কি ক্ষতি ছিলো? এখানেই তো মনে হয়, শুভঙ্করের ফাঁকি। জনগণের টাকা অকাতরে পাঁচার হওয়া।
তিনি বলেন, সরকার শুরু থেকে কোবিড-১৯ পরিস্থিতি মোকাবিলা নিয়ে লেজে গোবরে অবস্থা করে ফেলেছে। করোনা ট্রেস-টেস্ট-ট্রিটমেন্ট নিয়ে কেলেঙ্কারীর পর এবার করোনা ভ্যাকসিন নিয়ে নানা তেলেসমাতির কারণে টিকা গ্রহনের ব্যাপারেও মানুষের মনে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে, অবিশ্বাস দানা বেঁধেছে। সরকার আগে জনগণকে টিকা দিতে চায়। এতে করে মানুষের মনে সন্দেহ ঢুকেছে। বাংলাদেশের প্রচলিত রেওয়াজ হচ্ছে, যখন কোনো সরকারি সুযোগ-সুবিধা এবং সেবা দেয়া হয় শুরুতেই তা ক্ষমতাসীন ও সরকার সমর্থক প্রভাবশালী লোকজনই ভোগ করে থাকে। তিনি বলেন, সরকারের প্রতি আস্থার অভাবের কারণে মানুষ চিন্তিত হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে কোনো কোনো মন্ত্রী যখন বলেন, বিএনপি চাইলে করোনার টিকা তাদেরকে সবার আগে দেয়া হবে। তখন এই টিকার প্রতি মানুষ গভীর ষড়যন্ত্র খুঁজে পায়। টিকা প্রসঙ্গে সরকারের মন্ত্রীদের বক্তব্য সতীনের ছেলেকে বাঘ মারতে পাঠানোর মতো।
নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সাংবাদিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এসময় বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম আজাদ, সেলিমুজ্জামান সেলিম, একরামূল হক বিপ্লব প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ