বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সাকিবের চমক লাগানো প্রত্যাবর্তন

 

স্পোর্টস রিপোর্টার : চমক দিয়েই আবার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরেছেন সাকিব আল হাসান। আইসিসির এক বছরের নিষেষাজ্ঞা ও করোনা ভাইরাসের কারণে বন্ধ থাকার কারণে দীর্ঘ ১৬ মাস পর খেলতে নেমে প্রায় একাই ক্যারিবীয়দের গুঁড়িয়ে দেন সাকিব। প্রথম ওয়ানডেতে ৭.২ ওভারে ৮ রান খরচায় ৪ উইকেট নিয়ে চমক দেখিয়েছেন। সাকিবের কারণেই গতকাল প্রথম ম্যাচে বড় জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ ৬ উইকেটে হারাতে পেরেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে। ফলে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ফেরার ম্যাচেই সাকিবকে পাওয়া গেলো আগের রুপে। লর্ডসে পাকিস্তানের বিপক্ষে সর্বশেষ আন্তর্জাতিক ওয়ানডে খেলেছিলেন সাকিব। বিশ্বকাপে ব্যাট-বলের তাক লাগানো পারফরম্যান্স করেছিলেন সাকিব। গতকাল ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে দীর্ঘ বিরতির পর ফিরলেও পারফরম্যান্সে মোটেও ভাটা পড়েনি তার। করোনার কারণে প্রায় ১০ মাস আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে দূরে ছিল বাংলাদেশ। লম্বা বিরতি কাটিয়ে ফেরা এমন একটি ম্যাচে ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যানদের কোন সুযোগই দেয়নি টাইগার বোলাররা। তবে সব কিছু ছাপিয়ে সাকিবের দিকেই নজর ছিল বেশি। গত অক্টোবরে নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ফেরা সাকিব আল হাসান বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপ দিয়ে মাঠে ফিরেছিলেন। কিন্তু ব্যাটিং-বোলিংয়ে কিছুই করতে পারেননি। ফলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সাকিবের ফেরাটা কেমন হয়, সেটি দেখার অপেক্ষায় ছিলেন অনেকে। ঘরোয়া ক্রিকেটে ব্যর্থ হলেও আন্তর্জাতিক ক্রিকেট দিয়েই সাকিব নিজের অস্তিত্ব বেশ ভালো করে জানান দিয়েছেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম স্পেলে ৭ ওভার বোলিং করে ২ মেডেনে ৮ রান খরচায় নিয়েছেন তিন উইকেট। দ্বিতীয় স্পেলে ২ বল করে নেন এক উইকেট। সবমিলিয়ে ৭.২ ওভার বোলিং করে ৮ রান খরচায় চার উইকেট নিয়ে নিজের প্রত্যাবর্তন ম্যাচটি রাঙিয়ে তুলেছেন বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডার। দলীয় এগারতম ওভারে বল হাতে নেন সাকিব। নিজের প্রথম ওভারে অন্তত তিনবার ব্যাটসম্যানের ব্যাটের কানায় বল লাগান সাকিব, সম্ভাবনা জাগান উইকেটের। প্রথম ওভারে উইকেট না পেলেও, পরে সাকিবের ঘূর্ণিতেই কুপোকাত হয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। প্রথম স্পেলে টানা ৭ ওভার বল করেছেন তিনি। ক্যারিবীয় ইনিংসের ২৩তম ওভারে যখন আক্রমণ থেকে সরানো হয় সাকিবকে, তখন তার নামের পাশে বোলিং ফিগার ৭-২-৮-৩; এই স্পেলে ৩৪টি বলই ছিল ডট। ৩৩তম ওভারে ফের আনা হয় সাকিবকে। দ্বিতীয় বলেই তিনি তুলে নেন ক্যারিবীয়দের শেষ উইকেট। সবমিলিয়ে বোলিং ফিগার দাঁড়ায়ঃ ৭.২-২-৮-৪! বাংলাদেশের সামনে জয়ের লক্ষ্য মাত্র ১২৩ রানের। ইনিংস বিরতিতে সাকিব জানিয়েছেন, এতদিন পর ফেরাটা কঠিন হলেও নিজের পারফরম্যান্সে তিনি খুশি। সাকিবের ৮ রানে ৪ উইকেট নেয়ার ইনিংসে আলো কেড়েছেন অভিষিক্ত হাসানও। পরপর দুই বলে দুই উইকেটসহ মোট ২৮ রানে ৩ উইকেট নিয়েছেন ২১ বছর বয়সী হাসান। তার বোলিংয়ে মুগ্ধ সাকিব। শুধু হাসান নয়, পাইপলাইনে থাকা অন্যান্য তরুণ ফাস্ট বোলারদের ব্যাপারেও আশাবাদী সাবেক বিশ্বসেরা এ অলরাউন্ডার। ২০১৯ বিশ্বকাপে ৮ ইনিংসে ২ সেঞ্চুরি ও ৫ হাফসেঞ্চুরিতে ৬০৬ রান করেছেন সাকিব। ব্যাটিং গড় ছিল ৮৬.৫৭। ইংল্যান্ড বিশ্বকাপের তৃতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকও ছিলেন। তাই বিশ্বকাপের প্রায় দেড় বছর পর ফিরেই এমন পারফরম্যান্সে ভীষণ খুশি তিনি। প্রথম ইনিংস শেষে সাকিব ধারাভাষ্যকারকে জানিয়েছেন নিজের সাফল্যের রহস। সাকিব বলেন, ‘খুব সাধারণ পরিকল্পনা ছিল। লাইন-লেংথ মেনে সঠিক জায়গাতে বোলিং করেছি। উইকেটেরও কিছুটা সহায়তা ছিল।’ অবশ্য লম্বা বিরতির পর এভাবে পারফরম্যান্স করাটা মোটেও সহজ কাজ নয়। সাকিব জানালেন, ‘ভালো লাগছে, ভালো করেছি। কিন্তু ১৬/১৭ মাস পর খেলতে নামাটা খুব সহজ নয়। তার পরেও ভালো লাগছে পারফরম্যান্স করতে পেরে। আমরা দশ মাস কোন আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলিনি। প্রত্যেকেই কিছুটা নার্ভাস ছিল। তারপরও ম্যাচ খেলার রোমাঞ্চে ছিলাম। তাই সবাই খেলার জন্য মুখিয়ে ছিল। শুরুতে সবার মধ্যেই নার্ভাসনেস ছিল, একইসঙ্গে উত্তেজনাও কাজ করেছে।’ বোলিংয়ে সাফল্যের পেছনে সহজ পরিকল্পনার কথা জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘আমার পরিকল্পনা ছিল যে সবকিছু যত সহজ রাখা যায়, যত ভালো জায়গায় বোলিং করা যায় এবং বাকিটা উইকেটের (পিচ) হাতে ছেড়ে দেয়া।’ অন্য বোলারদের নিয়ে সাকিব বলেছেন,‘আমাদের পাইপলাইনে বেশ কয়েকজন ভালো পেসার আছে। তারা সিস্টেমের মধ্যেই তৈরি হচ্ছে। আমি সবশেষ টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট (বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপ) খেলেছি, তখন দেখেছি তরুণ পেসারদের। সবাই নিজেকে উজাড় করে দিয়ে বোলিং করে। আমি আর হাসান মাহমুদ একই দলে ছিলাম। তাকে এমন বোলিং করতে দেখা সত্যিই ভালো লাগার বিষয়।’

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ