ঢাকা, বৃহস্পতিবার 28 March 2024, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিজরী
Online Edition

বাংলাদেশ দিয়েছে ৫ লাখ রোহিঙ্গার নাম, মিয়ানমারের শনাক্ত ৪২ হাজার

সংগ্রাম অনলাইন ডেস্ক: মিয়ানমার সরকারের কাছে বাংলাদেশ থেকে ৫ লাখ রোহিঙ্গার তালিকা দিলেও সেখান থেকে ৪১ হাজার ৭১৯ জনকে রোহিঙ্গা হিসেবে শনাক্ত করেছে মিয়ানমার। এই শনাক্তদের ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে ইতিবাচক দেশটির সরকার। এ বিষয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান বলেছেন, আগামী মার্চ-এপ্রিল থেকে প্রত্যাবাসন শুরু হতে পারে।

বুধবার (২০ জানুয়ারি) সচিবালয়ে বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিক রোহিঙ্গাদের জন্য চীন সরকারের ‘ইর্মাজেন্সি রাইস এইড’ হস্তান্তর অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী এ তথ্য তুলে ধরেন।

ডা. এনামুর রহমান বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে ৮ লাখ ২৯ হাজারের তালিকা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে সেখানে থেকে তারা (পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়) ৫ লাখের একটি তালিকা মিয়ানমার সরকারের কাছে পাঠিয়েছে। সেই তালিকা থেকে মিয়ানমার ৪১ হাজার ৭১৯ জনকে শনাক্ত করে ফিরিয়ে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এ তালিকা ধরে আগামী মার্চ-এপ্রিলে প্রত্যাবাসন শুরু হতে পারে বলে আশা করা যায়।’

এর আগে মঙ্গলবার (১৯ জানুয়ারি) বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভাইস মিনিস্টার লু জাওহুই এবং মিয়ানমারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী সচিব উচানের অংশগ্রহণে ত্রিপক্ষীয় সভা হয়। রোহিঙ্গাদের জন্য চাল হস্তান্তরে ভা্র্চুয়াল চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি ঝিমিং অনলাইনে যুক্ত ছিলেন।

চলমান আলোচনা অনুযায়ী রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চাইলে ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘গতকাল (১৯ জানুয়ারি) বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও চীনের সচিব পর্যায়ে বৈঠক হয়েছে। সেখানে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। সব বিষয়ে পজিটিভ আলোচনা হয়েছে। মিয়ানমার রিয়ালাইজ করেছে তাদের ফিরিয়ে নেয়া দরকার। বাংলাদেশও ফিল করে তারা (রোহিঙ্গা) সম্মানের সঙ্গে নাগরিক অধিকার নিয়ে ফিরে যাক। চীন সরকারও চায় বাংলাদেশের উন্নয়নের স্বার্থে তাদের ফিরে যাওয়া উচিত।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের গ্রামভিত্তিক রিপ্যাট্রিয়েশনটা চায়। কিন্তু মিয়ানমার সরকার চায় বাংলাদেশ সরকার যে তালিকা দিয়েছে এবং যে তালিকাটা তারা ভেরিফাই করেছে সেই তালিকা অনুযায়ী ফেরত নিতে চায়। এ জায়গায় গতকালকের মিটিংটি শেষ হয়েছে। আশা করি, পরবর্তী মিটিংয়ে আরও অ্যামিকেবল সলিউশন আসবে। ‘আমরা গতকাল চীন ও মিয়ানমারের যে সদিচ্ছা দেখেছি, সবাই আশা করছে; তিনটি পক্ষই আশা করছে আগামী মার্চ-এপ্রিলের মধ্যে প্রত্যাবাসানটা শুরু হবে। আমরা একটা ভালো ফলাফলের অপেক্ষায় আছি।’

মানবিক কারণে এক মিলিয়নেরও বেশি মায়ানমার নাগরিক রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ সরকার আশ্রয় দিয়েছে। তাদের যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তাদের নিজ দেশে প্রত্যাবর্তন করানো যায় ততই সবার জন্য মঙ্গল।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘এর আওতায় রোহিঙ্গাদের জন্য চীন সরকার ২ হাজার ৫৫৪ মেট্রিক টন চাল দিয়েছে। গত ডিসেম্বরে এই চাল আমরা পেয়েছি। চাল এখনও রোহিঙ্গাদের বিতরণ করা হচ্ছে। এ জন্য আজকে একটি সাইনিং হয়েছে।’

বাংলাদেশের উন্নয়নে চীন পরীক্ষিত ও বিশ্বস্ত বন্ধু উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘পদ্মা সেতুসহ অনেক বড় বড় স্থাপনা নির্মাণে চায়না কারিগরি ও আর্থিক সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে আমাদের পাশে রয়েছে। বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিক রোহিঙ্গাদের তাদের দেশে প্রত্যাবর্তনে চীন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আমরা আশাবাদী।

আরো বলেন, ‘বাংলাদেশের যেমন চীনের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক, একইভাবে মিয়ানমারের সঙ্গেও তাদের (চীনের) বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক, মিয়ানমারের উন্নয়নে চীনের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। সেই জায়গায় চীন যদি সত্যিকারভাবে চায় সেক্ষেত্রে অবশ্যই তারা মিয়ানমার সরকারকে প্রভাবিত করতে পারবে।’

বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জি মিং বলেছেন, তাদের শতভাগ ইচ্ছা বাংলাদেশের সঙ্গে তাদের যে গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক সেই সম্পর্ক তারা বজায় রাখবেন, বাংলাদেশের সব সমস্যা সমাধানের জন্য তারা আমাদের পাশে থাকবেন। স্পেশালি রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে তারা কাজ করে যাবেন।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তৃতা করেন শরণার্থী প্রত্যাবর্তন কমিশনার (অতি সচিব) শাহ রেজওয়ান হায়াত, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের যুগ্মসচিব শাহরিয়ার কাদের সিদ্দিকী এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক দেলোয়ার হোসেন ।

বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোহসিন এবং চীন সরকারের পক্ষে বাংলাদেশে চীনের রাষ্ট্রদূত লি জি মিং স্বাক্ষর করেন।

এস/এএইচ

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ