বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪
Online Edition

সবুজ শিল্পবিপ্লবের পথে বাংলাদেশ

মুহাম্মদ নূরে আলম : সবুজ শিল্পবিপ্লব ঘটতে যাচ্ছে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ে। দুটি ব্লকে প্রায় এক  হাজার একর জায়গাজুড়ে পরিবেশবান্ধব সবুজ শিল্প কারখানা (গ্রিন ইন্ডাস্ট্রি) গড়ে তোলার মাধ্যমে এই বিপ্লব ঘটাতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ইকোনমিক জোন অথরিটি (বেজা)। একইসঙ্গে এটিই হবে দেশের সবচেয়ে বড় ইকোনমিক জোন, যার মোট আয়তন ৩০ হাজার একর। এতে কর্মসংস্থান হবে অন্তত ১৫ লাখ মানুষের। উন্নয়নের মোহনায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর করোনাবাধা ডিঙিয়ে শতাধিক প্রতিষ্ঠানের এক লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ প্রস্তাব অনুমোদন ৩১ হাজার একর বিস্তীর্ণ জমিতে ৪০ বিলিয়ন ডলারের বিশাল এলাকায় যতদূর চোখ যায় কর্মমুখর চারদিক। জনমানুষের কোলাহল। নির্মাণ সামগ্রী যন্ত্রপাতি বোঝাই ট্রাক-লরি-ভ্যানগাড়ির আসা-যাওয়ার ব্যস্ততা, মহা স্বপ্ন গড়ার মহাআয়োজন। এক সময় এলাকাটি ছিল প্রায় জনশূন্য পরিত্যক্ত ধূ ধূ বালুচর, উলুবন আর গো-চারণ ভূমি। সেখানেই আজ এক অনন্য বাংলাদেশের ছবি ফুটে উঠছে দিনে দিনে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর। উত্তর চট্টগ্রামের মীরসরাই, সীতাকুন্ড ও ফেনী জেলার সোনাগাজী উপজেলা মিলিয়ে ৩০ হাজার একর বিস্তীর্ণ জমিতে গড়ে উঠছে এই অর্থনৈতিক ও শিল্পাঞ্চল।
এদিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর’র আশপাশে অপরিকল্পিত শিল্পায়ন ও আবাসিক এলাকা গড়ে তোলা নিষিদ্ধসহ ১১ দফা অনুশাসন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ শিল্পনগরীর ‘মাস্টার প্ল্যানকে’ সংশোধনের মাধ্যমে এসব অনুশাসনকে অন্তর্ভুক্ত করতে বলা হয়। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এই শিল্পনগরের মাস্টার প্ল্যান সংক্রান্ত সভায় এসব অনুশাসন দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকের কার্যবিবরণী থেকে পাওয়া গেছে এসব তথ্য। আরও জানা গেছে, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ, জলধারা, স্টেডিয়াম, খেলার মাঠ ও উন্মুক্ত এলাকা রাখাসহ পর্যাপ্ত বৃক্ষরোপণের ব্যবস্থা করতেও অনুশসান দেয়া হয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরে প্রতিদিন পানির চাহিদা হবে ১১২ কোটি ৫০ লাখ লিটার। সেখানে ‘পানি শোধনাগার ও গভীর নলকূপ স্থাপন’ নামে একটি প্রকল্প হাতে নিচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়।
প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৩৪৭ কোটি টাকা। প্রকল্পে বিশ্বব্যাংক ঋণ ৩ হাজার ৯৬৭ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। প্রকল্পে সরকারি অর্থায়ন ৩৭৯ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। অর্থনৈতিক জোন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরী (বিএসএমএসএন) সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এটি দেশের শিল্প খাতের জন্য মডেল হিসেবে কাজ করবে। একইসঙ্গে এটিই হবে দেশের সবচেয়ে বড় ইকোনমিক জোন, যার মোট আয়তন ৩০ হাজার একর। এতে কর্মসংস্থান হবে অন্তত ১৫ লাখ মানুষের। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীন বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) দেশে একশ’টি অর্থনৈতিক জোন বা অঞ্চল গড়ে তুলছে। তবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর সর্ববৃহৎ এবং বহুমাত্রিক বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন। দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ অর্থনৈতিক ও শিল্পজোন। দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের প্রবেশদ্বারে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ, শিল্পায়ন ও অর্থনীতির এক মহাজংশন। করোনাবাধা-বিপত্তি ডিঙিয়ে এ মুহূর্তে অবকাঠামো সুযোগ-সুবিধা ও উন্নয়নের মোহনায় দাঁড়িয়ে। জোরদার গতিতে এগিয়ে চলেছে অবকাঠামো উন্নয়ন। সেই সঙ্গে বিনিয়োগ ও শিল্প-কারখানা স্থাপনের প্রক্রিয়া।
পরিকল্পনা কমিশন ও বেজা সূত্র জানায়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর উন্নয়ন প্রকল্প উঠছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায়। আগামীকাল মঙ্গলবার ১৯ জানুয়ারি রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে একনেক সভায় চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য এ প্রকল্পটি উপস্থাপন করা হবে। সভায় সভাপতিত্ব করবেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী গণমাধ্যমকে জানান, করোনার সময়েও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরে ৩ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ প্রস্তাব পেয়েছি। অনুমোদনও সম্পন্ন হয়েছে। দৃশ্যমান অবকাঠামো উন্নয়ন এবং ভূ-কৌশলগত সবচেয়ে সুবিধাজনক অবস্থানের ফলে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বেড়েই চলেছে। এখানে জমির দাম, বিনিয়োগকারীদের চাহিদা ও চাপ প্রতিযোগিতামূলক বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিনি বলেন, দেশি-বিদেশি নামিদামী কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানগুলো বিনিয়োগ ও শিল্পায়নে এগিয়ে এসেছে। এরমধ্যে রয়েছে-বার্জার, এশিয়ান পেইন্টস, টিকে গ্রুপ, ওয়ালটন, সামিট, বসুন্ধরা, জিপিএইচ, হেলথকেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস ইত্যাদি। আশাকরি ২০২১ সালে ২০ থেকে ২৫টি নতুন কোম্পানি কাজ শুরু করবে।
বেজার নির্বাহী সদস্য (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) মোহাম্মদ ইরফান শরীফ গণমাধ্যমকে বলেন, প্রকল্পটি বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে স্বপ্নের। বাংলাদেশে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির ক্ষেত্রে নতুন দ্বার উন্মোচন হবে। সকল সুযোগ সুবিধা সৃষ্টির মাধ্যমেই সবুজ শিল্পবিপ্লব ঘটাতে যাচ্ছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর উন্নয়ন প্রকল্প।
এই শিল্পনগরের পুরো অংশে পানির প্রাপ্যতার বিষয়ে ইন্সটিটিউট অব ওয়াটার মডেলিং (আইডব্লিউএম) একটি সম্ভাব্যতা সমীক্ষার কাজ চলমান রয়েছে। আইডব্লিউএম এর মধ্যে ইনটার্ম রিপোর্ট-১ এবং ইনটার্ম রিপোর্ট-২ দাখিল করেছে। এই শিল্পনগরের ২এ, ২বি, ৩, ৪ এবং ৫ জোনগুলোর প্রায় ২ হাজার একর এলাকায় শিগগিরই শিল্প ইউনিট স্থাপনের কাজ শুরু হবে। উন্নয়ন নিশ্চিতকল্পে সরকার বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) মাধ্যমে বিভিন্ন স্থানে ২০১৫ থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে ১৫ বছরে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গঠনের পরিকল্পনা নিয়েছে। এর মধ্যে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট ৮৮টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার অনুমোদন দেয়া হয়েছে। অনুমোদনপ্রাপ্ত অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোর মধ্যে ৫৯টি সরকারি ও ২৯টি বেসরকারি।
প্রকল্পটি ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের ডিসেম্বর মেয়াদে বাস্তবায়ন করা হবে। ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইওয়ে করিডোর ও বঙ্গোপসাগর উপকূলের নিকটবর্তী স্থানে চট্টগ্রামের মীরসরাই ও সীতাকুন্ড এবং ফেনী সোনাগাজী উপজেলায় যোগাযোগ সুবিধা থাকায় অভিবাসন বা সেটেলমেন্টর প্রয়োজন না থাকায় উক্ত এলাকায় সর্ববৃহৎ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। শিল্প নগরের জোন ‘২এ’ এবং জোন ২বি’সহ অন্যান্য জোনসমূহে অবকাঠামো উন্নয়ন ও ইউটিলিটি সুবিধা সৃষ্টি করে অত্যাধুনিক অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার লক্ষ্যে মীরসরাই ও সোনাগাজী উপজেলায় প্রস্তাবিত প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। প্রকল্প এলাকায় অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে বেসরকারি বিনিয়োগের উপযোগী পরিবেশ তৈরি করা হবে। শিল্পনগরকে পরিবেশ সহনশীল গ্রিন অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসেবে প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে লক্ষ্য হচ্ছে টেকসইকরণ এবং পরিবেশ সহনশীলতা নীতি ব্যবহারের উপকারিতাসমূহ প্রদর্শন করা। অর্থনৈতিক অঞ্চলসমূহে বিনিয়োগ আকৃষ্টকরণপূর্বক নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা হবে। প্রকল্পটি তিনটি অর্থনৈতিক অঞ্চলের আওতায় প্রায় ৩০টি জোনে বিভক্ত।  
শিল্পনগরের জোন-১ (মীরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল) এর আওতাভুক্ত ৫৪৮ একর ভূমি উন্নয়নসহ অন্যান্য জোনের অবকাঠামো উন্নয়ন এবং ইউটিলিটি সেবা সৃষ্টি করা হবে। জোন ২এ-তে ৯৩৯ একর ও জোন ২বি-তে ৪৭৪ একরেরও উন্নয়ন করা হবে। শিল্পনগরে ৩০ কিলোমিটার চারলেন সড়ক, পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা, বিদ্যুৎ ও গ্যাস নেটওয়ার্ক, নিরাপত্তা বেষ্টনী, প্রশাসনিক ব্যবস্থা উন্নয়ন, ডিস্যালাইনেশন প্ল্যান্ট, স্টিম নেটওয়ার্ক, বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট, সোলার প্যানেল ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা স্থাপনের মাধ্যমে ‘গ্রিন ইকোনোমিক জোন’ হিসেবে গড়ে তোলা হবে। এ শিল্পনগরী ঘিরে আশপাশের এলাকাগুলোতেও গড়ে উঠছে বিভিন্ন শিল্প-কারখানা। বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরীর সঙ্গে যুক্ত হবে চট্টগ্রামে নির্মিতব্য বে-টার্মিনাল। এতে সহজ হবে পণ্য আমদানি-রপ্তানি। বিশেষ করে এই শিল্পনগরীতে উৎপাদিত পণ্য সরাসরি রপ্তানি হবে বে-টার্মিনাল দিয়ে। এখন পর্যন্ত এ শিল্পনগরীতে দেশের বিভিন্ন কোম্পানির পাশাপাশি বিদেশি বিনিয়োগকারী হিসেবে এগিয়ে এসেছে জাপান, চীন, ভারত, যুক্তরাজ্য, সিঙ্গাপুর, কোরিয়া, মালয়েশিয়া ও অস্ট্রেলিয়া।
জানা যায়, আর এতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে যাচ্ছে দেশের বৃহত্তম শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপ।  বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরীর সবুজ অংশে ৫০০ একর জায়গাজুড়ে নির্মিত হচ্ছে বসুন্ধরা শিল্পাঞ্চল। এই শিল্পনগরীতে জমি বরাদ্দ পাওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে বসুন্ধরাই সর্বপ্রথম ভারী শিল্প স্থাপনের কাজ শুরু করেছে। এ লক্ষ্যে দ্রুত এগিয়ে চলেছে শিল্প-কারখানা স্থাপনের অবকাঠামো নির্মাণের কাজ। ইতোমধ্যে প্রশাসনিক ভবনের বেইজমেন্টের কাজ প্রায় শেষ হয়েছে। সম্পন্ন হয়েছে ডরমেটরি ভবনের দোতলার ছাদ। আর বসুন্ধরা কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজের কাজ শুরু হবে আগামী মাসেই। সব ঠিক থাকলে আগামী বছরের ডিসেম্বরে উৎপাদন শুরু হবে এই কারখানায়। বসুন্ধরা মাল্টি স্টিল মিলস নির্মাণকাজ উদ্বোধনের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। এটিরও ২০২১ সালের মধ্যে উৎপাদনে যাওয়ার কথা। আর বসুন্ধরা প্রি-ফেবরিকেটেড কোম্পানির কারখানা নির্মাণকাজের সব প্রস্তুতিও সম্পন্ন হয়েছে। এমনকি এ শিল্পনগরীতে বসুন্ধরা ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইকোনমিক জোন নিয়মিত দাফতরিক কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছে আগামী মাস থেকেই। শুধু বসুন্ধরা ইকোনমিক জোনেই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অন্তত ৪০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে। এছাড়া সবুজ শিল্পাঞ্চল অংশে এশিয়ান পেইন্ট, মডার্ন সিনটেক্সের শিল্প-কারখানার অবকাঠামোর নির্মাণযজ্ঞ চলছে দ্রুতগতিতে। শুধু বসুন্ধরা ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইকোনমিক জোনকে ৫০০ একর জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।  
বেজার তথ্য অনুযায়ী, গত নভেম্বর পর্যন্ত দেশি-বিদেশি মিলিয়ে অন্তত ১৯ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছে এই শিল্পনগরীর অনুকূলে, যার ১০ বিলিয়ন ডলারই বিদেশি বিনিয়োগ।
সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে এখন পর্যন্ত সোয়া একশ’ প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানিকে প্রায় এক লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের জন্য সরকারি অনুমোদন দেয়া হয়েছে। অন্তত ২৬টি শিল্প প্রতিষ্ঠান উৎপাদন শুরুর প্রক্রিয়ায় রয়েছে। আরও ৩৭টি প্রতিষ্ঠান নির্মাণাধীন। চলতি বছরেই উৎপাদন ও রফতানিতে যাচ্ছে অনেক প্রতিষ্ঠান। চীন, জাপান, মালয়েশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, সিঙ্গাপুর, কোরিয়া, ভারত, থাইল্যান্ডসহ দেশি-বিদেশি অনেক ব্যবসায়ী-শিল্পোদ্যোক্তা এবং বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের কাছে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর।
সরাসরি শতভাগ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই), বেসরকারি উদ্যোগ এবং যৌথ বিনিয়োগ প্রস্তাব আসছে অব্যাহতভাবে। এখানে ৩১ হাজার একর জমিতে পর্যায়ক্রমে ৩০ থেকে ৪০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ এবং ধাপে ধাপে ১৫ লাখ লোকের কর্মসংস্থানের টার্গেট রাখা হয়েছে। শিল্পনগরকে ঘিরে সীতাকুন্ড, মীরসরাই, ফেনীসহ আশপাশের বিশাল এলাকা কর্মচঞ্চল হয়ে উঠছে। স্থানীয় লোকজন ঠিকাদার, উপ-ঠিকাদারদের মাধ্যমে নানামুখী কাজে ব্যস্ত। তরুণ-যুবকদের বেকারত্ব ঘুচে আয়-রোজগার আসছে ভালোই। বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে উদ্যোক্তারা একক অথবা যৌথ উদ্যোগে গার্মেন্টস ও নীটওয়্যার, ইস্পাত ও লোহাজাত শিল্প, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত, রাসায়নিক দ্রব্য, বৈদ্যুতিক ও ইলেকট্রনিক্স সরঞ্জাম, ওষুধ, টেক্সটাইল, কন্টেইনার ম্যানুফ্যাকচারিং, ভোজ্যতেল, খাদ্য প্রক্রিয়াজাত, মোটরযান বা অটোমোবাইল, আইটি, বিভিন্ন সেবাখাতে বিনিয়োগ ও শিল্প, কল-কারখানা স্থাপন করছে।
বিশাল ব্যাপ্তি নিয়ে বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে শিল্প-কারখানা ছাড়াও মীরসরাই-সীতাকুন্ড ঘেঁষে প্রকৃতির অপার দান বঙ্গোপসাগর উপকূলভাগের সুবিধা কাজে লাগিয়ে নির্মাণ করা হবে কন্টেইনার বন্দর। শিল্পে উৎপাদিত পণ্য রফতানি ও কাঁচামাল আমদানি হবে সহজ। গড়ে উঠবে উপশহর, বিশ্বমানের পর্যটন কেন্দ্র। শিল্পনগর থেকে বন্দরনগরীতে কর্ণফুলী বঙ্গবন্ধু টানেল হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত সুপার ডাইক কাম মেরিন ড্রাইভওয়ের সঙ্গে যুক্ত হবে। তাছাড়া শিল্পনগরের কাছেই দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার লাইফ লাইন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক এবং রেলপথ। ভবিষ্যতে পাশেই নির্মিত হবে হাইস্পিড রেললাইন। মিশছে নোয়াখালী-চট্টগ্রাম বাইপাস মহাসড়কে। সব মিলিয়ে এ শিল্পনগর দেশের আধুনিক অর্থনৈতিক হাব বা প্রাণকেন্দ্রে রূপ নিচ্ছে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে মীরসরাই থেকে ১০ কিলোমিটার, বন্দরনগরী বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রাম থেকে ৬০ কি.মি. দূরত্বে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর বন্দরের সুবিধা পেতে সহজ হবে। শিল্প স্থাপনে বিনিয়োগকারীদের অবকাঠামো সুবিধা হিসেবে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র, গ্যাস ও পানির সংযোগ, কেন্দ্রীয় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, পানি শোধনাগার, আবাসন, হাসপাতাল, প্রশাসনিক ভবন নির্মাণসহ বিভিন্ন ব্যবস্থা রয়েছে। উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ১৯ দশমিক ৫ কি.মি. সামুদ্রিক বেড়িবাঁধের কাজ শেষের পথে। ২৩০ কেভিএ গ্রিড স্টেশন, শেখ হাসিনা সরণি নির্মাণ, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে ১৮টি কালভার্ট, দুই লেনের ১০ কি.মি. সড়ক নির্মাণ কাজ শেষ পর্যায়ে। ইতোমধ্যে ১৭ কি.মি. গ্যাস পাইপ লাইন নির্মিত হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে বিনিয়োগ-শিল্পায়ন, ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সম্ভাবনা প্রসঙ্গে জোরালো আশাবাদ ব্যক্ত করেন চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাষ্ট্রির সভাপতি মাহবুবুল আলম। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, এটি দক্ষিণ এশিয়ায় সর্ববৃহৎ অর্থনৈতিক ও শিল্প জোন। মহাসড়ক, নদী, সমুদ্র ও রেলপথে বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরের সাথে সংযোগের অপূর্ব সুযোগ রয়েছে। তবে এর অবকাঠামো এখন পযন্ত পূর্ণতা লাভ করেনি। শিল্প স্থাপনের জন্য পুরোপুরি উপযোগী করতে অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ অবকাঠামো সুবিধাসমূহ সৃজন, উন্নয়ন প্রয়োজন। চট্টগ্রাম বন্দরের সঙ্গে সংযোগ দ্রুতায়িত হওয়া অপরিহার্য।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ