শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

আ’লীগ প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে নিহত ১

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের প্রচারণার সময় চট্টগ্রাম মহানগরীর ২৮ নং পাঠানটুলী ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ সমর্থিত ও বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছেন। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে আরো ২ জন। গত  মঙ্গলবার সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে পাঠানটুলী মগপুকুর পাড় এলাকায় এই ঘটনা ঘটে।
 নিহতের নাম আজগর আলী বাবুল (৫৫)। তিনি মোগলটুলির কাটা বটগাছ এলাকার বাসিন্দা ও চার সন্তানের জনক। এদিকে আজগর আলী বাবুলের পরিবারে এখন চলছে শোকের মাতম। তার স্ত্রী-সন্তান সহ পরিবারের লোকজন এ ঘটনা মেনে নিতে পারছেন না। তাদের সান্ত্বনা দিতে এসেছেন আত্মীয়-স্বজনরা।
এদিকে  সংঘর্ষে একজন নিহত হওয়ার ঘটনায় এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। পুনরায় সংঘাত এড়াতে ওই এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, গত মংগলবার সšধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে চট্টগ্রাম মহানগরীর ডবলমুরিং থানাধীন ২৮ নং পাঠানটুলী ওয়ার্ডের নজীর ভান্ডার লেন মগপুকুর এলাকায় চসিক নির্বাচনের আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাহাদুর ও বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থী মো: আবদুল কাদের সমর্থকদের নিয়ে প্রচারনা চালাচিছলেন।এসময় উভয় গ্রুপের লোকজন শ্লোগান পাল্টা শ্লোগান দিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে যায়।এক পর্যায়ে গোলাগুলি শুরু হয়। এসময় সবাই প্রানভয়ে পালাতে থাকে।ব্যাপক এাসের সৃষ্টি হয় ঘটনাস্থলে।এ সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে আজগর আলী বাবুল (৫৫) নিহত হয়। আরও কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হয়। এদিকে  ঘটনার পর নজরুল ইসলাম বাহাদুরের বিক্ষুদ্ধ কর্মী-সমর্থকদের তোপের মুখে বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থী মো. আবদুল কাদেরসহ তার অনুসারীরা মগপুকুর পাড়ার আজিম ম্যানসনে ঢুকে পড়েন। বিক্ষুদ্ধ কর্মী-সমর্থকরা ওই ভবন ঘিরে রাখে। এছাড়া কাদেরের পোস্টারে আগুন ধরিয়ে দেয়। পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়নএনে আনে। পরে পুলিশ ভবনের চারদিকে অবস্থান নেয়। রাত ১২টা ২০ মিনিটে ভবনের বিভিন্ন ফ্লোরে অভিযান চালিয়ে প্রার্থী কাদেরসহ ২৬ জনকে গ্রেপ্তার করে। আবদুল কাদেরসহ তার অনুসারীদের গ্রেপ্তারের সময় এডিসি (দক্ষিণ) পলাশ কান্তি নাথ, এসি কোতোয়ালী নোবেল চাকমা, ডবলমুরিং থানার ওসি সদীপ কুমার দাশ, সদরঘাট থানার ওসি, ডিবি, ডবলমুরিং থানা পুলিশসহ বিপুল সংখ্যক পুলিশ উপস্থিত ছিল।এই ব্যাপারে ডবলমুরিং থানার ওসি সদীপ কুমার দাশ জানান, মগপুকুর পাড়স্থ আজিম ম্যানসন নামক একটি ভবন থেকে কাউন্সিলর প্রার্থী আবদুল কাদেরসহ ২৬ জনকে আটক করা হয়েছে। এদের মধ্যে ঘটনায় সম্পৃক্ত কারা আছেন তা যাচাই-বাছাই করে দেখা হবে।  
 সিএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার ফারুক উল হক গনমাধ্যমকে জানান, পাঠানটুলি ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাহাদুর এবং বিদ্রোহী আবদুল কাদেরের সমর্থকদের মধ্যে সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে সংঘর্ষ ও গোলাগুলি শুরু হয়। এক পর্যায়ে দুজন গুলিবিদ্ধ হন। একজন মারা যান। ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন আছে। পরিস্থিতি বর্তমানে নিয়ন্ত্রণে আছে।
 স্থানীয়রা জানান, আওয়ামী লীগের দলীয় কাউন্সিলর প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাহাদুর মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য এবং পাঠানটুলি ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি। তিনি নগর আওয়ামী লীগের প্রয়াত সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী। অপরদিকে বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থী আবদুল কাদের নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী। বাহাদুর ২০১৫ সালের সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আবদুল কাদেরের কাছে পরাজিত হয়েছিলেন। ঘটনার বিষয়ে আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাহাদুর বলেন, আমি মোগলটুলি এলাকায় গণসংযোগ করছিলাম। সেখানে মেয়র প্রার্থী রেজাউল ভাইয়ের নির্বাচনী কার্যালয়ে কিছুক্ষণ বসি। পরে নজির ভান্ডার লেইনে গণসংযোগ করতে যাই। হঠাৎ করে বৃষ্টির মতো গুলি শুরু করে সন্ত্রাসীরা। আবদুল কাদেরের উপস্থিতিতে সন্ত্রাসীরা আমাদের ওপর হামলার পাশাপাশি গুলিবর্ষণ করে। আমাকে বাঁচাতে গিয়ে বাবুল নামে আমার একজন কর্মী নিহত হয়েছেন। মাহবুব নামে আমার আরেকজন কর্মী আহত হয়েছেন।
 হত্যা মামলা দায়ের-গত মংগলবার রাতে পাঠানটুলীতে সংঘটিত সংঘর্ষ ও হত্যাকান্ডের ঘটনায় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী সাবেক কাউন্সিলর মো: আবদুল কাদেরকে প্রধান আসামী করে মামলা  হয়েছে।গতকাল বুধবার  ভোরে নিহত আজগর আলী বাবুলের ছেলে সেজান মাহমুদ সেতু বাদি হয়ে ডবলমুরিং থানায় মামলাটি দায়ের করেন। মামলা নম্বর: ১০। মামলায় ‘বিদ্রোহী’ কাউন্সিলর প্রার্থী মো. আবদুল কাদেরকে এক নম্বর আসামি করে মোট ১৩ জনকে এজাহারনামীয় আসামি করা হয়েছে। এছাড়া অজ্ঞাত ৩০-৪০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
আসামিরা হলেন- মো. আবদুল কাদের (৫০), হেলাল উদ্দিন প্রকাশ হেলাল (৪০), ওবাইদুল করিম মিন্টু (৪৫), আবদুল ওয়াদুদ রিপন (৪২), আবদুর রহিম রাজু (৪৫), আসাদ রায়হান (৩৫), আলাউদ্দিন আলো (৩৫), ইমরান হোসেন ডলার (২৪), দিদার উল্লাহ (৪৮), সালাউদ্দিন সরকার (৪৫), দেলোয়ার রশিদ (৪২), মো. আলমগীর (৪৫) ও আবদুন নবী (৪৭)।
ডবলমুরিং থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মাসুদ রানা বলেন, নিহত আজগর আলী বাবুলের ছেলে সেজান মাহমুদ সেতু বাদি হয়ে ১৩ জনকে এজাহারনামীয় ও অজ্ঞাত ৩০-৪০ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন। মামলাটি গোয়েন্দা পুলিশ তদন্ত করবে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ