শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

করোনাকালে দেশে ফেরত আসা কর্মীর সংখ্যা আশংকাজনক হয়ে উঠেনি

# প্রবাসীরা মাত্র ১৮ কোটি টাকা লোন নিয়েছে
স্টাফ রিপোর্টার : প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমেদ বলেছেন, গত ১ এপ্রিল থেকে  ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত ৩,২৬,৭৫৮জন প্রবাসী কর্মী দেশে ফেরত এসেছেন। তাদের অনেকে কাজের মেয়াদ শেষে বা কাজ না থাকায় দেশে ফেরত এসেছেন। যদিও আশংকা করা হয়েছিল অর্থনৈতিক মন্দা এবং করোনার প্রভাবে প্রধান কর্মী নিয়োগকারী দেশসমূহের শ্রমবাজার বিপর্যস্ত হওয়ার কারণে অনেক বিদেশী কর্মী বেকার হয়ে পড়বে। কিন্তু আশার কথা হলো, এখন পর্যন্ত ফেরত আসা কর্মীর সংখ্যা আশংকাজনক হয়ে উঠেনি। এক্ষেত্রে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বিদেশস্থ মিশন ও দূতাবাস একযোগে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করেছে।
আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস উপলক্ষে গতকাল শুক্রবার প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, করোনা ভাইরাস সঙ্কটের মধ্যে দেশে ফিরে আসা কর্মীদের সহায়তার পাশাপাশি মহামাীর পরবর্তী পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারের চাহিদা অনুযায়ী দক্ষ কর্মী তৈরিতে গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে কর্মী নিয়োগকারী দেশগুলোর উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে অবশ্যই কর্মী প্রয়োজন হবে এবং শ্রমবাজার আবার স্বাভাবিক হবে। এই প্রত্যাশায় আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারে দক্ষ কর্মী প্রেরণের লক্ষ্যে আমরা আমাদের কর্মীদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য সার্টিফিকেশনের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছি।
তিনি বলেন, আশঙ্কা করা হয়েছিল অর্থনৈতিক মন্দা এবং করোনার প্রভাবে প্রধান কর্মী নিয়োগকারী দেশগুলোর শ্রমবাজার বিপর্যস্ত হওয়ায় অনেক বিদেশি কর্মী বেকার হয়ে পড়বে। কিন্তু আশার কথা হলে, এখন পর্যন্ত ফেরত আসা কর্মীর সংখ্যা আশঙ্কাজনক হয়ে উঠেনি। এক্ষেত্রে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বিদেশে আমাদের মিশন ও দূতাবাস একযোগে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করেছে।
সৌদি আরব থেকে দেশে এসে আটকে পড়া প্রবাসীদের ৭০ থেকে ৭৫ শতাংশ ইতোমধ্যে ফিরে গেছেন বলে জানান মন্ত্রী। এছাড়া ‘কয়েক হাজার’ প্রবাসী সংযুক্ত আরব আমিরাতেও ফিরে গেছেন। বিদেশে কাজ হারিয়ে বিপাকে পড়া এবং দেশে ফিরে আসা কর্মীদের জন্য সরকারের সহায়তার উদ্যোগগুলো তুলে ধরা হয় এ সাংবাদিক সম্মেলনে।
বিদেশফেরত কর্মী এবং বিদেশে মারা যাওয়া কর্মীদের কর্মসংস্থান তৈরির জন্য প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের মাধ্যমে সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করার কাথাও জানানো হয়। ইমরান আহমেদ বলেন, দক্ষ কর্মী তৈরির লক্ষ্যে দেশে ৬৪টি টিটিসি ও ছয়টি আইএমটি চালু রয়েছে। উপজেলা পর্যায়ে ৪০টি টিটিসি নির্মাণের কাজ শেষ পর্যায়ে আছে।
মুজিববর্ষের বিশেষ উদ্যোগ হিসেবে উপজেলা পর্যায়ে আরাও ১০০টি টিটিসি নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। মন্ত্রী বলেন, প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি। ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে রেমিটেন্সের পরিমাণ ছিল ১৬.৪ বিলিয়ন ডলার। ২০১৯-২০ অর্থ বছরে তা বেড়ে ১৮.২ বিলিয়ন ডলার হয়।
মহামারীর মধ্যে চলতি ২০২০-২১ অর্থ বছরের প্রথম পাঁচ মাসেও ১০.৯ বিলিয়ন ডলারের রেমিটেন্স এসেছে যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৪১ শতাংশ বেশি।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন বলেন, মহামারীর মধ্যে লেবাননে আটকে থাকা প্রবাসীদের যারা দেশে ফিরতে চান, তাদের সবাইকে পর্যায়ক্রমে সরকার ফিরিয়ে নিয়ে আসবে।
করোনাকালে এখন পর্যন্ত মোট ৪৪৩ জন বিদেশ ফেরত প্রবাসীকে ১৮ কোটি টাকা ঋণ দেয়া হয়েছে বলে জানান প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন। তিনি বলেন, দেশে ফিরে বিমানবন্দর থেকে ৫ হাজার টাকা নিতে বিদেশ ফেরতরা যতটা না আগ্রহ দেখান প্রবাসী ঋণ নিতে তাদের তেমন কোনো আগ্রহ নেই।
করোনাকালে নানা কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ফেরত আসা প্রবাসীদের জন্য ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড ২০০কোটি টাকা এবং প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে ৫০০কোটি টাকা মোট ৭০০ কোটি টাকা বরাদ্ধ দেয় সরকার। সহজ শর্তে বিদেশ ফেরত কিংবা বিদেশে মারা যাওয়া প্রবাসীর কোনো বৈধ প্রতিনিধিকে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের মাধ্যমে এই টাকা ঋণ দেয়ার কথা। কিন্তু, এই ঋণ বিতরণ নিয়ে বরাবরই সংশ্লিষ্টরা অভিযোগ করে আসছেন প্রবাসী ঋণ পেতে নানা ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে তাদের। শর্তের জালে আটকে আছে প্রবাসী ঋণ বিতরণ প্রক্রিয়া।
প্রবাসী কল্যাণ সচিব, প্রথম দিকে ঋণ পাওয়ার শর্ত নিয়ে কিছু সংশয় ছিল। শাখা অফিসগুলো সিদ্ধান্ত নিতে পারতো না, আরো কিছু জটিলতা ছিল, সেগুলো আমরা দূর করেছি। এখন আশা করছি বিগত ৬ মাসে যা হয়েছে, আগামী ৬ মাসে তার কয়েকগুন লোন নেয়ার পরিমাণ বাড়বে। এখন আর লোন নেওয়ার প্রক্রিয়া জটিল নয় উল্লেখ করে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের চেয়ারম্যান বলেন, শাখা বা স্থানীয় পর্যায়ে যাতে সিদ্ধান্ত দিয়ে ঋণ বিতরণ করতে পারে সে সুযোগ করে দেয়া হয়েছে, যা আগে ছিল না। আগের চেয়ে লোন প্রদান প্রক্রিয়া অনেক সহজ হয়েছে।
চলতি ডিসেম্বরেই জর্ডানে একটি পোশাক কারখানায় বাংলাদেশ থেকে ২ হাজার কর্মী যেতে পারবেন এবং জানুয়ারিতে সে দেশে আরো ১০ হাজার কর্মী যাওয়ার সুযোগ পাবেন বলে জানান তিনি।
প্রতি বছর ১৮ ডিসেম্বর ‘আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস’ পালিত হয়। এ উপলক্ষে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় প্রতিবছরের মতই বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। সাংবাদিক সম্মেলনে জানানো হয়, এবারের অভিবাসী দিবসের প্রতিপাদ্য ঠিক হয়েছে- মুজিববর্ষের আহ্বান, দক্ষ হয়ে বিদেশ যান।
জাতীয়ভাবে এবারের অভিবাসী দিবসের মূল অনুষ্ঠানটি হবে আগামী ৬ জানুয়ারি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ