১ হাজার ৬৪২ জন রোহিঙ্গা ভাসানচরে পৌঁছেছে
* পর্যায়ক্রমে ১ লাখ রোহিঙ্গাকে নেয়া হবে
স্টাফ রিপোর্টার ঢাকা, চট্টগ্রাম ব্যুরো : ভাসানচরের উদ্দেশ্যে গতকাল শুক্রবার সকালে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা এলাকার নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ডের ঘাট থেকে যাত্রা শুরু করে, কয়েকটি জাহাজে মোট ১ হাজার ৬৪২ জন রোহিঙ্গা ভাসানচরে পৌঁছেছে। এদের মধ্যে পুরুষ ৩৬৮ জন, নারী ৪৬৪ জন এবং শিশু ৮১০ জন। সেখানে তারা পৌঁছলে করোনার কারণে সবার শরীরের তাপমাত্রা মাপা হয়। এরপর হাত ধুয়ে জেটি থেকে গাড়িতে করে তাদের আবাসস্থলে দিকে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে শিশুদের চলাচলের জন্য সাহায্য করেন নৌবাহিনীর সদস্যরা। ভাসানচরে পৌঁছে অনেক রোহিঙ্গা স্বস্তি প্রকাশ করেছেন। এরআগে কক্সবাজারের টেকনাফের উখিয়ার বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে ২০টি বাসে করে ১ হাজার ৬৪২ জন রোহিঙ্গাকে চট্টগ্রাম নিয়ে আসা হয়। এদিকে রোহিঙ্গাদের স্বাগত জানাতে প্রস্তুত ভাসানচর। সেখানে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। তাদের জন্যই নোয়াখালীর হাতিয়ার এই ভাসানচরে গড়ে তোলা হয়েছে দৃষ্টিনন্দন আবাসন ব্যবস্থা, যেখানে রয়েছে শহরে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা। গতকাল শুক্রবার সকাল ১০টা ২০ মিনিটে প্রথম জাহাজটি চট্টগ্রাম ছেড়ে যায়। এর আগে সকাল ৯টা থেকে রোহিঙ্গাদের জাহাজে তোলার কার্যক্রম শুরু হয়।
অতিরিক্ত শরনার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ সামছু-দ্দৌজা বলেন, দুপুর দুইটার দিকে নোয়াখালীর ভাসানচরে পৌঁছেছে রোহিঙ্গাদের বহনকারী জাহাজগুলো। ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের জন্য সব ধরনের সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রায় তিন হাজার ১০০ কোটি টাকায় নির্মিত রোহিঙ্গাদের জন্য এই অস্থায়ী আবাসস্থল এখন কর্মমুখর। দ্বীপটি বাসস্থানের উপযোগী করা, অবকাঠামো উন্নয়ন, বনায়ন এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। রোহিঙ্গাদের জন্য আধুনিক বাসস্থান ছাড়াও বেসামরিক প্রশাসনের প্রশাসনিক ও আবাসিক ভবন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ভবন, মসজিদ, স্কুল হিসেবে ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনীয় ভবন, হাসপাতাল, ক্লিনিক ও খেলার মাঠ নির্মাণ করা হয়েছে। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য সেখানে মহিষ, ভেড়া, হাঁস, কবুতর পালন করা হচ্ছে। আবাদ করা হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজি। পরীক্ষামূলকভাবে ধান চাষও করা হচ্ছে এখানে।
জানা গেছে, গতকাল শুক্রবার সকালে চট্টগ্রামের পতেংগার বোট ক্লাব এলাকায় কর্ণফুলী নদীতে স্থানীয় প্রশাসন রোহিঙ্গাদের এসব জাহাজে তুলে দেয়। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে রোহিঙ্গাদের নিয়ে জাহাজগুলো ভাসানচরের উদ্দেশে রওনা হয়। দুপুর ২টার দিকে রোহিঙ্গাবাহী জাহাজগুলো ভাসানচরে পৌঁছায়। সকালে জাহাজে তোলার আগে রোহিঙ্গাদের চট্টগ্রামের মেজবানী খাবার সাদা ভাত ও গরুর মাংস দিয়ে আপ্যায়ন করা হয় বলেও জানা গেছে। এর আগে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের তত্ত্ব্বাবধানে গত বৃহস্পতিবার টেকনাফের কুতুপালংসহ আরও কয়েকটি ক্যাম্প থেকে রোহিঙ্গাদের স্থলপথে আনা হয় চট্টগ্রামে। সেখানে পতেঙ্গায় রোহিঙ্গাদের অস্থায়ী ট্রানজিট পয়েন্ট স্থাপন করা হয় নৌবাহিনীর রেডি রেসপন্স বাথ, বিএফ শাহীন কলেজ গেট ও বোট ক্লাব এলাকায়। রোহিঙ্গাদের সেখান থেকে ভাসানচরে নিয়ে যাওয়ার জন্য পাশেই জেটিতে অপেক্ষমাণ ছিল জাহাজগুলো। গতকাল শুক্রবার সকালে সেই জাহাজগুলো রোহিঙ্গাদের নিয়ে রওনা হয়।
জানা গেছে, পর্যায়ক্রমে ১ লাখ রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে নিয়ে যাওয়া হবে। এর মধ্যে প্রথম পর্যায়ে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার রোহিঙ্গা নেওয়া হবে সেখানে। রোহিঙ্গাদের এই দলটি থাকবে ভাসানচরের অত্যাধুনিক আবাসন প্রকল্পে।এরই মধ্যে ভাসানচরে মজুদ রাখা হয়েছে প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী। ভাসানচরে প্রথম ধাপে যাওয়া রোহিঙ্গাদের রাখা হবে ৫ থেকে ১১ নম্বর ক্লাস্টারে। তিন মাসের মজুদ সক্ষমতার খাদ্য গুদামে প্রস্তুত ৬৬ টন খাদ্যপণ্য। তবে প্রথম দিকে রোহিঙ্গাদের রান্না করা খাবার সরবরাহ করবে বেসরকারি সংস্থাগুলো। ইতোমধ্যে ২২টি এনজিওর প্রতিনিধিরা ভাসানচরে কাজ শুরু করেছেন।
মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের উন্নয়নে সরকারের পাশাপাশি কাজ করছে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও)। বাস্তুচ্যুত এসব মানুষের ভাসানচরে স্থানান্তরের বিষয়ে এনজিওগুলো বিরোধিতা করে আসছিল বলে এতদিন অভিযোগ ওঠে। রোহিঙ্গাদের সহায়তায় সম্প্রতি ২২টি এনজিও নোয়াখালীর হাতিয়ার এই দ্বীপে কাজ শুরু করেছে।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের বুচিদং এলাকার বাসিন্দা আয়শা বেগম। তিন সন্তান, স্বামীসহ আট সদস্যের পরিবার নিয়ে থাকতেন কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালী ক্যাম্পে। প্রথম পর্যায়ে আড়াই হাজার রোহিঙ্গার সঙ্গে আয়শার পরিবারও যাচ্ছে ভাসানচরে। দুই বছর ধরে বালুখালী ক্যাম্পে ছিল আয়শার পরিবার। কেন ভাসানচরে যাচ্ছেন জানতে চাইলে আয়শা বলেন, ভাসানচরে গেলে নাকি আয় রোজগার করা যাবে। সেখানে নাকি বালুখালী ক্যাম্প থেকেও বেশি সুবিধা পাবো। এ জন্য ভাসানচরে যাচ্ছি। তিনি আরও বলেন, ক্যাম্পে এনজিওসহ বিভিন্ন সংস্থার সহায়তায় চলতে হয়। এভাবে আর কতদিন চলা যায়। তাই ভাসানচরে চলে যাচ্ছি।