বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪
Online Edition

দুর্নীতিবাজ রুই-কাতলাদের আইনের আওতায় আনতে হবে -হাইকোর্ট

স্টাফ রিপোর্টার: বিদেশে অর্থ পাচারকারীরা যত বড় রুই-কাতলা হোক না কেন তাদেরকে ছাড় দেয়া হবে না, তাদেরকে আইনের আওতায় আনতে হবে বলে সতর্কবার্তা উচ্চারণ করেছেন হাইকোর্ট। প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা পাচার করার অভিযোগ নিয়ে বিদেশে পালিয়ে থাকা পি কে হালদারের (প্রশান্ত কুমার হালদার) দেশে ফিরিয়ে আনা বিষয়ক শুনানিতে এমন মন্তব্য করেন আদালত। এ সময় পি কে হালদারকে গ্রেফতারে দুই মাস আগে আবেদন করা হলেও পরোয়ানা জারি না হওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করেন আদালত। আদালত পরবর্তী আদেশের জন্য ৯ ডিসেম্বর দিন ধার্য করেছেন। এই সময়ের মধ্যে দুদককে বিচারিক আদালতে পি কে হালদারের গ্রেফতারি পরোয়ানার বিষয়ে প্রতিবেদন, মামলার এফআইআর ও অর্থ-সম্পদ জব্দের আদেশ আদালতে দাখিল করতে বলা হয়েছে।
গতকাল বুধবার হাইকোর্টের বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল বেঞ্চ এসব মন্তব্য করেন। এ সময় আদালতে দুদকের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন অ্যাডভোকেট মো. খুরশীদ আলম খান। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক।
পরে আদালত তার আদেশে পি কে হালদারের বিরুদ্ধে করা এজাহারের ফটোকপি এবং গ্রেফতারি পরোয়ানা আবেদনের কপি দাখিলের নির্দেশ দেন। একইসঙ্গে আগামী ৯ ডিসেম্বরের মধ্যে দুদককে এসব তথ্য-উপাত্ত আদালতে দাখিল করতে নির্দেশ দিয়ে সেদিন মামলার পরবর্তী শুনানির দিন নির্ধারণ করেন। মামলার শুনানিকালে দুদকের আইনজীবীকে উদ্দেশ্য করে আদালত বলেন, অর্থ পাচারকারীরা যত বড় রুই-কাতলা হোক না কেন তাদেরকে ছাড় দেয়া হবে না। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশকে স্বাধীন করেছেন যে লক্ষ্য নিয়ে, তার সে স্বপ্ন বাস্তবায়নে কাজ করা আমাদের সকলের দায়িত্ব ও কর্তব্য। সে লক্ষ্যে আপনারা কাজ করুন। সবাইকে আইনের আওতায় আনতে হবে। কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়।
আদালত আরও বলেন, আমাদের সবার উচিত হলো দেশের প্রোপার্টি রক্ষা করা। ২১ অনুচ্ছেদ অনুসারে এটি আমাদের সাংবিধানিক অধিকার। কাজেই শুধু কোর্ট করবে, অন্যরা করবে, তা তো না, সবাইকে করতে হবে।
আদালত দুর্নীতিবাজদের বিষয়ে বলেন, তারা যাতে আইনের জালে ধরা পড়ে সে দায়িত্ব গ্রহণ করতে হবে। আমাদেরকে সোনার বাংলা গড়ে তুলতে হলে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ করতে হবে।
পি কে হালদার বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বে থেকে অন্তত সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা লোপাট করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
পরে দুই বিনিয়োগকারীর করা আবেদনের শুনানি নিয়ে গত ১৯ জানুয়ারি এক আদেশে পি কে হালদারসহ সংশ্লিষ্ট ২০ জনের ব্যাংক হিসাব ও পাসপোর্ট জব্দের নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট।
এর মধ্যে দেশে ফিরতে পি কে হালদার আদালতের কাছে আবেদন করতে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স সার্ভিস লিমিটেডের (আইএলএফএসএল) কাছে একটি পত্র দিয়েছিলেন। এরপর কোম্পানিটি আদালতে আবেদন করে। ৭ সেপ্টেম্বর আদালত বলেছিলেন, তিনি কখন কিভাবে আসবেন তা জানাতে। পরে ২০ অক্টোবর একটি আবেদন করে কোম্পানিটি। যেখানে নির্বিঘ্নে দেশে আসার কথা বলা হয়েছে এবং ২৫ অক্টোবরের একটি টিকিটের কপিও সংযুক্ত করা হয়েছিল।
গত ২১ অক্টোবর হাইকোর্ট তার দেশে আসার সঙ্গে সঙ্গে গ্রেফতার নিশ্চিত করতে আদেশ দিয়েছিলেন আদালত। পরে তার গ্রেফতারি পরোয়ানা বাস্তবায়ন করতে সংশ্লিষ্ট আদালতে পাঠাতে বলা হয়েছে। পুলিশের মহাপরিদর্শক, ইমিগ্রেশন অথরিটিরি চিফ ও দুদকের প্রতি এ নির্দেশনা দেয়া হয়। কিন্তু ২৪ অক্টোবর আইএলএফএসএল-এর আইনজীবী দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীকে জানিয়েছেন পি কে হালদার ২৫ অক্টোবর দেশে ফিরছেন না।
ইন্টারন্যাশনাল লিজিং থেকেই ১৫০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে পি কে হালদারের বিরুদ্ধে। এছাড়াও সব মিলিয়ে প্রায় ৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা তিনি আত্মসাৎ করেছেন বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে একের পর এক সংবাদ প্রকাশিত হয়। এ সময় গোপনে কানাডায় পাড়ি জমান তিনি।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ