মাস্ক পরাতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান
স্টাফ রিপোর্টার: রাজধানীতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতার মধ্যে মাস্ক না পরে এখনো রাস্তায় বের হচ্ছেন বহু মানুষ। গতকাল শুক্রবার ছুৃটির দিনও মাস্ক না পরায় অভিযান চালায় ভ্রাম্যমাণ আদালতে।
রাজধানীর জিগাতলা মোড়ে বেলা ১২টার দিকের ব্যবসায়ী রেজওয়ান আলম দুই ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে মোটরসাইকেলে চড়ে যাচ্ছিলেন। তিনজনের মুখেই মাস্ক ছিল না। মোটরসাইকেল দাঁড় করাতেই রেজওয়ান ভ্রাম্যমাণ আদালতকে একবার বললেন, তার একবার করোনা হয়েছিল, এখন তিনি সুস্থ। তাই মাস্ক পরার প্রয়োজন বোধ করেন না। পরে আবার বলেন, একটা কাজের উদ্দেশ্যে দ্রুত বেরিয়েছেন বলে মাস্ক পরতে মনে নেই। এরপর আরও কিছু অজুহাত দিতে থাকেন। একই আদালতের সামনে পড়েন গৃহিণী রাজিয়া বেগম। এক মেয়ে ও এক ছেলেকে নিয়ে তিনি রিকশায় যাচ্ছিলেন। মাস্ক কেন পরেননি, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভুলে গেছেন। তার বাসায় এক বাক্স মাস্ক আছে। সব সময়ই তিনি মাস্ক পরেন। তার মেয়ে আদালতকে বলেন, তাড়াহুড়া করে বেরিয়েছেন বলে মাস্ক পরতে মনে নেই। এ সময় ভ্রাম্যমাণ আদালত তাকে বলেন, ‘আপনি যেহেতু সেজেগুজে বের হয়েছেন, সেহেতু আপনি তাড়াহুড়া করে বের হয়েছেন, এটা ঠিক নয়।’ রাজিয়াকে ২০০ টাকা জরিমানা করা হয় এবং দুই সন্তানসহ তাকে বিনা মূল্যে মাস্ক দেওয়া হয়।
বেলা ১১টা থেকে জিগাতলা এলাকায় মাস্ক পরা নিশ্চিত করতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হয়। এর নেতৃত্ব দেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও লালবাগ রাজস্ব সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফারজানা রহমান। তিনি একটি গণমাধ্যমকে বলেন, মাস্ক পরার বিষয়ে মানুষের যেন অজুহাতের শেষ নেই। তারা যেসব যুক্তি দেন, এসব কোনোভাবেই মানা যায় না। মাস্ক না পরার পেছনে মানুষের উদাসীনতাই মূল কারণ। সরকার স্বাস্থ্যবিধি মেনে বাইরে চলাচল করতে জোর দিচ্ছে।
গত ২৫ অক্টোবর মন্ত্রিসভার বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সেবা পেতে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক। ১৮ নভেম্বর থেকে প্রতিদিন ঢাকা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মহানগরী ও জেলার পাঁচটি উপজেলার বিভিন্ন স্থানে মাস্ক পরার বিষয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান চালানো হচ্ছে। এ ছাড়া র্যাবের পক্ষ থেকেও অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। তবু স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে মানুষের উদাসীনতা দেখা যাচ্ছে। জিগাতলা মোড় এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের প্রায় দেড় ঘণ্টাব্যাপী এই অভিযানে পথচারী, দোকানদার, স্থানীয় বাসিন্দাদের মাস্ক না পরার অপরাধে অর্থদণ্ড দেওয়া হয়। মাস্ক না পরার অপরাধে শিক্ষার্থীসহ কয়েকজনকে সতর্ক করা হয়।
মাস্ক না পরার অপরাধে জিগাতলা এলাকায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের পক্ষ থেকে মোট ১১টি মামলা করা হয়। এ সময় দণ্ড পাওয়া ১১ জনের কাছ থেকে ৬ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। অভিযানের পাশাপাশি ওই এলাকায় মানুষের মধ্যে বিনা মূল্যে মাস্কও দেওয়া হয়। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ফারজানা রহমান বলেন, প্রথম দিকে ২০০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এখন অপরাধের মাত্রা বুঝে হাজার টাকাও জরিমানা করা হচ্ছে। অর্থদণ্ড দিয়ে আসলে মানুষকে মাস্ক ব্যবহারে বাধ্য করা যায় না। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করার উদ্দেশ্য হলো মানুষের মধ্যে মাস্ক পরাবিষয়ক সচেতনতা বাড়ানো।