বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪
Online Edition

করোনায় এবার প্রথম থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত ভর্তি লটারিতে -শিক্ষামন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার: করোনা ভাইরাস মহামারির মধ্যে এবার মাধ্যমিক স্তরের প্রথম থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত লটারির মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। করোনার কারণে এ বছর প্রথম শ্রেণি থেকে নবম শ্রেণিতে অনলাইনে শিক্ষার্থীদের ভর্তি চলবে। তবে করোনার পর স্বাভাবিক অবস্থাতেও অনলাইনে লটারিতে ভর্তি প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। তিনি আরও বলেন, আগামী বছরের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা নির্ধারিত সময়ে নেয়া সম্ভব হবে না।
মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থী ভর্তি নিয়ে গতকাল বুধবার ভার্চুয়াল প্রেস ব্রিফিংয়ে এ কথা জানান তিনি। প্রেস ব্রিফিংয়ে সংযুক্ত ছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খান, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সৈয়দ মো. গোলাম ফারুকসহ কর্মকর্তারা সংযুক্ত ছিলেন।
শিক্ষামন্ত্রী বলন, আগামী বছর যাদের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা দেয়ার কথা তাদের জন্য তিন মাসে শেষ করা যায় এমন একটি সংক্ষিপ্ত সিলেবাস প্রণয়ন করা হয়েছে। তাদের তিন মাস ক্লাস করিয়ে পরীক্ষা নেয়া হবে। সংক্ষিপ্ত সিলেবাসের আলোকে আমরা তাদের তিন মাস ক্লাস করাতে চাই। সে কারণে হয়তো এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা দুই-এক মাস পিছিয়ে যাবে। প্রসঙ্গত, গত বছরগুলোয় ১ ফেব্রুয়ারি থেকে এসএসসি ও সমমান এবং ১ এপ্রিল থেকে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা হয়ে আসছে। এবার এসএসসি পরীক্ষা নির্ধারিত সময়ে নেয়া গেলেও করোনার কারণে এইচএসসি পরীক্ষা নেয়া সম্ভব হয়নি।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে প্রতি শ্রেণিতে লটারির মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তির সিদ্ধান্ত নিয়েছি। যোগ্যতার চাইতে ভাগ্যকে প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। আমরা বাধ্য হয়েই এ পদ্ধতি বেছে নিয়েছি। রাজধানীর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থী ভর্তিতে ক্যাচমেন্ট কোটা ৪০ থেকে বাড়িয়ে ৫০ শতাংশ করা হয়েছে। এছাড়া ক্লাস্টারভিত্তিক লটারিতে ঢাকার শিক্ষার্থীরা একটির জায়গায় পাঁচটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বাছাই করার সুযোগ পাবে বলেও জানান শিক্ষামন্ত্রী।
প্রতিবছর প্রথম শ্রেণিতে লটারির মাধ্যমে এবং দ্বিতীয় থেকে অষ্টম শ্রেণিতে ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হতো। আর জেএসসি-জেডিসির ফলের ভিত্তিতে নবম শ্রেণিতে শিক্ষার্থীরা ভর্তি হয়। করোনার কারণে অষ্টমের সমাপনী পরীক্ষা বাতিল করায় এবার সেই সুযোগ নেই উল্লেখ করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমরা তিনটি বিকল্প খতিয়ে দেখেছি। এর একটি হচ্ছে স্কুলে ভর্তি পরীক্ষা নেয়া। কিন্তু শিক্ষার্থীদের স্কুলে এনে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার ঝুঁকি নিতে চাচ্ছি না। এমসিকিউ পদ্ধতির কথা চিন্তা করেছি, কিন্তু তাতেও শিক্ষার্থীদের স্কুলে আসতে হতো। অনলাইনে ভর্তি পরীক্ষা নিলে সবার জন্য নিরাপদ হলেও সব শিক্ষার্থীর অনলাইনে ভর্তি পরীক্ষা নিশ্চিত করা কঠিন হবে, তাই এটি যুক্তিযুক্ত মনে হয়নি। সবার ইন্টারনেট অ্যাকসেস নেই, আবার সংযোগেও সমস্যা আছে। আগামী ৭ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রথম থেকে নবম শ্রেণিতে ভর্তির সামগ্রিক প্রক্রিয়া জানিয়ে দেয়া হবে বলে জানান শিক্ষামন্ত্রী।
মহামারির কারণে গত ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয়। কওমি মাদ্রাসা বাদে অন্যসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আগামী ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করা আছে। করোনার কারণে পঞ্চম ও অষ্টমের সমাপনী পরীক্ষা এবং প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের বার্ষিক পরীক্ষা না নিয়ে পরবর্তী ক্লাসে তুলে দেয়া হবে। অন্যদিকে অষ্টমের সমাপনী এবং এসএসসি-সমমানের ফলফলের ভিত্তিতে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল ঘোষণা করা হবে। ডিসেম্বরে এ ফল ঘোষণার কথা রয়েছে।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, এবার বাধ্য হয়েই এই প্রক্রিয়ায় গেলেও প্রক্রিয়াটি যুক্তিযুক্ত। এই প্রক্রিয়াটি আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় সাম্য আনবে। আমরা ভবিষ্যতেও হয়তো চালাতে পারবো।  তবে নির্ভর করবে এবছর কতটা সাফল্যের সঙ্গে আমরা বাস্তবায়ন পারি। যদিও একটি বছরেই  ফলতো সঙ্গে সঙ্গে দেখতে পাওয়া যায় না।  তবে আমরা যে শিক্ষার মানের চিন্তা-ভাবনা করছি, তাতে ভবিষ্যতেও রাখবো আরও উন্নত করবো।
দীপু মনি বলেন, আমাদের পাঠ্যক্রম পদ্ধতিতে যে পরিবর্তন আসছে, তাতে কোন স্কুলে পড়ছি তা নিয়ে খুব বেশি একটা তফাৎ থাকবে না।  যে স্কুলেই পড়ুক না কেন টেলিভিশনে যে ক্লাসগুলো হচ্ছে তা সবার জন্য সমান মানের। ২০২২ সালে যে শিক্ষাক্রম আসছে, কোন স্কুল কতটা নামি, আর বাকি শিক্ষার্থীরা কতটা মেধাবী, সেটার চেয়ে প্রত্যেক শিক্ষার্থী নিজে নিজে দলগতভাবে, কমিউনিটির সঙ্গে হাতে-কলমে কীভাবে কাজ করবে, সেটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।
তিনি বলেন, যেসব শিক্ষার্থী ভিকারুননিসা, রাজউক, আইডিয়ালসহ এরকম আরও যেকটি স্কুলে ভর্তি হতে পারছে না, অধিকাংশই তার বাইরে। সেই অসংখ্য শিক্ষার্থীকে আমরা কী বলছি? তাদের বাবা মা পরিবার ও শিক্ষার্থীদের মনের কষ্টটাও তো আমাদের দেখতে হবে।  সেই সব অসংখ্য শিক্ষার্থীরা ভাবছে-আমাদের আর ভালো করার সুযোগ নেই। তাহলে আমরা কী বলবো তারা মেধাবি নয়? এটা হতে পারে না।
নামি স্কুলগুলো সর্বোচ্চ মেধাবি বাছাই করে নিচ্ছে। কিন্তু সবার ফল কী ভালো হচ্ছে? তাতো না, সেখানেও হেরফের হচ্ছে। এসব বিদ্যালয়গুলো যদি এতই ভালো হয়, তাহলে তাদের নিজস্বতা কোথায়। তারা তো নিচ্ছেই ভালোগুলো।  যদি তারা সব রকমের শিক্ষার্থী নিয়ে অধিকাংশ শিক্ষার্থীর ফল ভালো করতে পারে, তাহলে বলবো এই বিদ্যালয়গুলোর কৃতিত্ব রয়েছে। তারা অনেক ভালো করে শেখাতে পারছে।  ১০, ১১ বছর বয়সের একটি শিশুর যখন মেধার স্ফুরণ ঘটছে, তখন মেধাবী আর মেধাবী নয়, দুই ভাগে ভাগ করে ফেলবো, এটিকে একপেশে ভ্রান্তই বলবো। এতে কারও জন্য পথ খুলে দিচ্ছি, আর প্রকারন্তরে কারও জন্য পথ বন্ধ করে দিচ্ছি, এটা অমানবিক। তাছাড়া আমাদের শিক্ষাক্রমে পরিবর্তন আসছে।
শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, ‘পৃথিবীর কোনও দেশে জাতীয় শিক্ষাক্রমের মধ্যে এত বৈষম্যমূলক পদ্ধতি থাকে না। বিদ্যালয় থেকে বিদ্যালয়ে এত বৈষম্য থাকে না। যাতে সাম্য নিশ্চিত হয়, পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীরাও যাতে ভালো প্রতিষ্ঠানে আসতে পারে। শুধু বেছে বেছে ভালো শিক্ষা নিয়ে প্রতিষ্ঠান ভালো থাকবে। এটি অসুস্থ প্রতিযোগিতা। অসুস্থ প্রতিযোগিতা যদি উঠে যায়, তাহলে প্রতিষ্ঠানগুলো আরও বেশি সচেতন হবে বলে আমরা মনে করি।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ