শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

ইরফানসহ তিন আসামী ডিবিতে ॥ দুই মামলায় আরও ১৪ দিনের রিমান্ড আবেদন

স্টাফ রিপোর্টার : হাজী সেলিমের ছেলে ইরফান ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে নৌবাহিনীর কর্মকর্তাকে মারধরের মামলাটি তদন্তের ভার গোয়েন্দা পুলিশকে (ডিবি) দেয়া হয়েছে। ধানমন্ডি থানার ওই মামলায় বুধবার ইরফান, তার দেহরক্ষী জাহিদুল মোল্লার তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত। এই মামলায় গ্রেফতার আরেক আসামী হাজী সেলিমের প্রটোকল কর্মকর্তা এবি সিদ্দিক দীপুকেও আগের দিন তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর হয়েছিল।

পুলিশের ধানমন্ডি জোনের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার আব্দুল্লাহিল কাফি বলেন, গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে মামলার তিন আসামীসহ মামলাটি গোয়েন্দা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

এদিকে র‌্যাবের দায়ের করা অস্ত্র ও মাদক আইনের মামলায়ও ইরফান ও জাহিদুলকে সাত দিন করে মোট ১৪ দিন রিমান্ডে চেয়ে আবেদন করা হয়েছে বলে চকবাজার থানার ওসি মওদুত হাওলাদার জানিয়েছেন। তিনি বলেন, গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে তাদেরকে এসব মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে ১৪ দিন করে রিমান্ড চেয়ে আবেদন আদালতে পাঠানো হয়েছে।

গত রোববার রাতে ল্যাবএইডের সামনে নৌবাহিনীর লেফটেন্যান্ট মো. ওয়াসিফ আহমেদ খানকে মারধরের ঘটনায় সোমবার ধানমণ্ডি থানায় ইরফান ও তার সঙ্গীদের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ওই দিনই পুরান ঢাকার দেবি দাস লেনে হাজী সেলিমের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ইরফান ও জাহিদুলকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। সেলিমকে মদ্যপান ও ওয়াকিটকি ব্যবহারের অপরাধে দেড় বছর এবং জাহিদুলকে ওয়াকিটকির জন্য ছয় মাসের কারাদ- দেয় র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত।

পুরান ঢাকায় আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য হাজী মোহাম্মদ সেলিমের মেজো ছেলে ইরফান ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর। ভ্রাম্যমাণ আদালতের সাজায় কারাগারে যাওয়ায় ইতোমধ্যে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে স্থানীয় সরকার বিভাগ।

বাড়িতে অভিযানে ইরফানের কাছ থেকে একটি অবৈধ পিস্তল ও একটি এয়ারগান উদ্ধারের ঘটনায় অস্ত্র আইনে এবং কয়েক বোতল মদ পাওয়ায় মাদক আইনে মামলা করা হয়েছে চকবাজার থানায়। একইভাবে জাহিদের কাছ থেকে একটি অবৈধ পিস্তল উদ্ধারের অভিযোগে অস্ত্র আইনে এবং ৪০৬টি ইয়াবা উদ্ধারের অভিযোগে মাদক আইনে মামলা করা হয়েছে। 

ব্যবসায়ীদের সাংবাদিক সম্মেলন

সংসদ সদস্য হাজী মোহাম্মদ সেলিম এবং তার ছেলে ইরফান সেলিমের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ যখন সংবাদমাধ্যমে আসছে, তখন পুরান ঢাকার একদল ব্যবসায়ী সাংবাদিক সম্মেলন করে বলেছেন- সব ‘অপবাদ’। ইরফান সেলিম গ্রেফতার হওয়ার পর উদ্ভূত পরিস্থিতিতে পুরান ঢাকার ব্যবসা-বাণিজ্য ‘ব্যাহত হচ্ছে’ বলেও দাবি করেছেন তারা। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির অফিসে ‘পুরান ঢাকার ব্যবসায়ী ঐক্য ফোরাম’ এর ব্যানারে এই সাংবাদিক সম্মেলন হয়। সেখানে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আবু মোতালেব। তিনি বলেন, পুরান ঢাকার ব্যবসায়িক পরিস্থিতি জানাতে এবং যানজট নিরসনের জন্য এই সাংবাদিক সম্মেলন তারা ডেকেছেন।

লিখিত ওই বক্তব্যের ছয়টি পয়েন্টের মধ্যে প্রথম তিনটিতে যানজট নিরসন, ট্রেড লাইসেন্সে উৎসে কর না কাটা, প্যাকেজ ভ্যাটের হার কমানোর দাবি জানানো হয়। আরেকটি পয়েন্টে ময়লা পরিষ্কারের ফি কমানোয় সন্তোষ প্রকাশ করা হয়।

পঞ্চম পয়েন্টে এসে মোতালেব বলেন, “পুরাতন ঢাকার একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে স্থানীয় সংসদ সদস্য হাজী মোহাম্মদ সেলিম, যিনি সুখে-দুঃখে সর্বাবস্থায় পৃষ্ঠপোষকতা করে আসছেন, বর্তমানে তাকে জড়িয়ে বিভিন্ন অপপ্রচার, যেমন চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে পত্র-পত্রিকা ও মিডিয়াতে সম্প্রচার করা হচ্ছে; যাতে পুরাতন ঢাকার ব্যবসায়ীদের চলমান ব্যবসা দারুণভাবে ব্যাহত হচ্ছে।” এ সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে যে সকল অপবাদ হচ্ছে, আজকের এই সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে আমরা ব্যবসায়ীবৃন্দ হলফ করে ঘোষণা করছি যে, তিনি তিন তিনবার সংসদ সদস্য থাকাকালীন আমাদের কোনো ব্যবসায়িক সমিতি বা সংগঠনে অদ্যাবধি তার এবং তার পরিবারের বিরুদ্ধে উল্লিখিত বিষয়ে কোনো অভিযোগ আজও আমরা পাইনি।” হাজী সেলিম ও তার পরিবারকে ঘিরে এই ঘটনাপ্রবাহে ‘গভীর দুঃখ’ প্রকাশ করা হয় এই ব্যবসায়ী দলটির সাংবাদিক সম্মেলনে।

এদিকে ইরফান গ্রেফতার হওয়ার পর তার এবং সংসদ সদস্য হাজী সেলিমের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগের কথা প্রকাশ্যে আসতে শুরু করেছে। সেসব নিয়ে সংবাদমাধ্যমে প্রতিবেদনও প্রকাশিত হচ্ছে। ‘পুরান ঢাকার ব্যবসায়ী ঐক্য ফোরাম’ এর সাংবাদিক সম্মেলনে বলা হয়, সংসদ সদস্যের মদিনা গ্রুপ ও বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নিয়ে সংবাদমাধ্যমে ‘যেভাবে প্রচার’ চালানো হচ্ছে, তাতে সেসব প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ‘গভীর আতঙ্কে’ রয়েছেন।

আবু মোতালেব বলেন, “কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পরিবারের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে বিষয়টি তদন্ত না হওয়া পর্যন্ত তার (হাজী সেলিম) এবং তার পরিবারের বিরুদ্ধে কোনো প্রকার প্রচার থেকে বিরত থাকার জন্য মিডিয়া পরিবারকে সবিনয় অনুরোধ করছি।”

মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি হাজী মো. এনায়েত উল্লাহ ও সাধারণ সম্পাদক মো. গোলাম মাওলা সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।

 

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ