শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

পুলিশ সদর দপ্তরের তদন্ত টিমের প্রতিবেদন সোমবার

সিলেট ব্যুরো: সিলেটে বহুল আলোচিত রায়হান  হত্যার ঘটনায় পুলিশ সদর দপ্তর কর্তৃক গঠিত টিমের তদন্ত প্রতিবেদন আগামী ২৬ অক্টোবর সোমবার দাখিল করা হবে। বিষয়টি গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন এ টিমের প্রধান, পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (এআইজি- ক্রাইম অ্যানালাইসিস বিভিাগ) মুহাম্মদ আয়ুব। এ টিম সিলেটে কাজ শেষ করে গত বুধবার ঢাকায় চলে যান।

এর আগে গত মঙ্গলবার এআইজি মুহাম্মদ  আয়ুবের নেতৃত্বে পুলিশ সদর দপ্তর গঠিত তদন্তকমিটির সদস্যরা সিলেটে আসেন এবং রাত ৮টার দিকে নগরীর নেহারি পাড়ায় রায়হানের বাড়িতে যান। এসময় তারা রায়হানের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন।

পরে তদন্ত কমিটির প্রধান এআইজি মুহাম্মদ আয়ুব সাংবাদিকদের বলেন, এসআই আকবরের পালিয়ে যাওয়ার সাথে আর কেউ সংশ্লিষ্ট আছেন কি-না সে বিষয়টি তদন্ত করার জন্যই আমাদের সিলেট আসা। এই তদন্তের অংশ হিসেবেই আমরা রায়হানের বাড়িতে এসে তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেছি।

জানা গেছে, সদর দফতরের কমিটি গত বুধবার দুপুর পর্যন্ত এসএমপিতে তাদের তদন্তকাজ চালিয়েছে। আগামী সোমবার এ কমিটির প্রতিবেদন দেয়া হবে।

উল্লেখ্য, সিলেটের বন্দরবাজার ফাঁড়িতে পুলিশি নির্যাতনে রায়হান আহমদের মৃত্যুর একদিন পর পালিয়ে যান মূল অভিযুক্ত ফাঁড়ি  ইনচার্জ এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়া। এ পালানোর ঘটনায় এসএমপির আরও কেউ জড়িত আছে কিনা- তা খতিয়ে দেখতে পুলিশ সদর দফতরের পক্ষ থেকে গত গত সোমবার একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

সাব ইন্সপেক্টর হাসান ও এক সাংবাদিক

মিলে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পাল্টায়

এদিকে গত ১১ অক্টোবর সিলেটের বন্দরবাজার ফাঁড়িতে পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনে রায়হানের মৃত্যুর পর সারা দেশে তোলপাড় শুরু হলে পালিয়ে যান নির্যাতনের মূলহোতা বন্দর বাজার ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই  আকবর হোসেন। তাকে পালিয়ে যেতে  সহযোগিতা করেন বন্দরবাজার ফাঁড়ির টু-আইসি এসআই  হাসান উদ্দিন।

একই সঙ্গে বন্দরবাজার ফাঁড়ির সিসি ক্যামেরার ফুটেজও নষ্ট করার অভিযোগ রয়েছে হাসান উদ্দিন ও এক স্থানীয় সাংবাদিকের বিরুদ্ধে।

এ ঘটনায় এসআই  হাসান উদ্দিনকে বরখাস্ত করে পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়েছে। গত বুধবার সন্ধ্যায় সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার (উত্তর) আজবাহার আলী শেখ তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে পুলিশ হেফাজতে নেয়ার নির্দেশ দেন।

এসএমপির উপকমিশনার (গণমাধ্যম) বিএম আশরাফ উল্লাহ তাহের  দৈনিক সংগ্রামকে জানান, বরখাস্ত হওয়া হাসান উদ্দিনকে কড়া পুলিশ প্রহরায় রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

তাকে গ্রেফতার করা হবে কিনা- তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, মামলাটির তদন্তভার পিবিআইয়ের কাছে। গ্রেফতারের বিষয়ে তারা সিদ্ধান্ত নেবেন। তারা চাইলেই এসএমপি তাদের কাছে হস্তান্তর করবে এসআই হাসানকে ।

গত ১১ অক্টোবর পুলিশি নির্যাতনে রায়হান নিহতের পর ১২ অক্টোবর পালিয়ে যায় প্রধান সন্দেহভাজন বন্দরবাজার ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আকবর। তার পালিয়ে যাওয়া নিয়ে পরবর্তীতে আরও একটি তদন্ত কমিটি করে এসএমপি।

তদন্ত কমিটির একটি সূত্র জানায়, এসআই হাসান উদ্দিন ও স্থানীয় পত্রিকার এক সাংবাদিক মিলে ১১ অক্টোবর বন্দরবাজার ফাঁড়ির সিসি ক্যামেরার হার্ডডিস্ক পরিবর্তন করে নতুন হার্ডডিস্ক সংযোজন করে। স্থানীয় একটি পত্রিকার সেই সাংবাদিক গ্যালারিয়া শপিং সিটির ফ্রেন্ডস কম্পিউটার নামের এক দোকান থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায় ৫০০ গিগাবাইটের একটি হার্ডডিস্ক ক্রয় করে, যার ইনভয়েস নম্বর ২৪৬০২। সেই মার্কেটের সিসি টিভির ফুটেজও সংগ্রহ করে তদন্ত কমিটি। এরপর সেই সাংবাদিক কম্পিউটারের দোকান থেকেই একজনকে নিয়ে যান সেই হার্ডডিস্ক পরিবর্তনের জন্য।

তদন্ত কমিটির মতে, এসআই  হাসান উদ্দিন ওই কাজে সহায়তা করেছেন। এর পাশাপাশি এসআই  হাসান উদ্দিন ঘটনার দিন সেই সাংবাদিকের সঙ্গে ৪০ বার এবং এর আগের দিন ১৯ বার কথা বলেছেন। এছাড়া হাসান উদ্দিনের বিরুদ্ধে এসআই  আকবরকে পালানোর সহায়তার অভিযোগও পেয়েছে তদন্ত কমিটি।

তদন্ত কমিটির সূত্রমতে, গত ১২ অক্টোবর বিকাল ৩টায় আকবরসহ ৪ জনকে বরখাস্ত করা হয়। বিকাল ৩টা ৫৬ মিনিট পর্যন্ত সে বন্দরবাজার ফাঁড়িতে ছিল। তার কাছ থেকে অস্ত্র বুঝে নেয় এসআই  হাসান। সেখান থেকেই আকবর পালিয়ে যায়; কিন্তু ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি তিনি জানাননি।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ