বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪
Online Edition

নারীর সম্ভ্রম রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে

সচেতন নাগরিক ফোরাম, উত্তরা শাখার উদ্যোগে গৃহবধূ ধর্ষণ, সিলেটে গণধর্ষণসহ সারাদেশে নারী ও শিশু নির্যাতনের প্রতিবাদে এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে গতকাল সোমবার রাজধানীর উত্তরায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিক্ষোভ মিছিলটি উত্তরা বাজার থেকে শুরু হয়ে নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন যুবনেতা তারেকুর রহমান। উপস্থিত ছিলেন যুবনেতা ফিরোজ আলম, রুহুল আমীন, আব্দুর রাকীব, আব্দুল্লাহ ও আব্দুর রহীম প্রমূখ।
সমাবেশে তারেকুর রহমান বলেন, মূলত সুশাসনের অভাবেই সারাদেশে নারী নির্যাতনসহ অপরাধ প্রবণতা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। আর নারীর প্রতি সহিংসতাও বেড়েছে উদ্বেগজনকভাবে। ফলে দেশের নারী সমাজ তাদের ইজ্জত-সম্ভ্রম নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। এমতাবস্থায় নারীর সম্ভ্রম রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। তিনি ক্রমবর্ধমান নারী নির্যাতনের ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান এবং দায়িদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে।
তিনি  বলেন, মূলত সরকারের উদাসীনতার কারণেই সারাদেশেই নারী নির্যাতন সহ নারীর প্রতি সহিংসতা সহ অপরাধ প্রবণতা বেড়েছে। আর সিলেটের এমসি কলেজের ঘটনা জাতির বিবেককে স্তম্ভিত করে দিয়েছে। নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে নারীকে বিবস্ত্র করে সম্ভ্রমহানীর পুরো জাতিই আজ বিব্রত। তাই এই বর্বরতার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। অন্যথায় দেশে নারী নিগ্রহের ঘটনা বন্ধ হবে না। প্রেস বিজ্ঞপ্তি।
রাস্তায় শিক্ষার্থীরা
এদিকে রাজধানীর উত্তরায় বৃষ্টি উপেক্ষা করে ধর্ষণকারীদের বিচার ও সাত দফা দাবিতে গতকাল সোমবারও রাস্তায় নেমেছেন শিক্ষার্থীরা। বেলা একটা থেকে প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে উত্তরার বিএনএস সেন্টারের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেন তাঁরা। ধর্ষণকারীদের বিচারের দাবিতে ষষ্ঠ দিনের মতো রাস্তায় নামলেন শিক্ষার্থীরা।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলছেন, দেশে ধর্ষণ রোধে তাঁরা যে সাত দফা দাবি উত্থাপন করেছেন, তার বাস্তবায়ন জরুরি। তাই রাস্তায় নেমেছেন। আন্দোলনে অংশ নেওয়া একজন লাবিব মুহান্নাদ বলেন, ‘আমাদের দাবিগুলো সারা দেশের মানুষ স্বাগত জানিয়েছে। আমরাও দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাব।’
শিক্ষার্থীদের দেওয়া দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে ৬০ কার্যদিবসের মধ্যে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড ও সর্বনিম্ন শাস্তি যাবজ্জীবন নিশ্চিত করা; ধর্ষণের মামলায় লিঙ্গভেদে নারী-পুরুষ কর্মকর্তা নিয়োগ করা; সালিশি পদ্ধতিতে ধর্ষণের বিচারপ্রক্রিয়া বন্ধ করা ও বাদীর নিরাপত্তা-চিকিৎসা নিশ্চিত করা; আগের সব মামলা ছয় মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করা; ইভটিজিং, সাইবার বুলিংসহ সব যৌন নির্যাতন বন্ধে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যৌন শিক্ষা ও আত্মরক্ষামূলক শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করা; দলীয় বা প্রশাসনের কেউ ধর্ষণের সঙ্গে জড়িত থাকলে তাঁর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া এবং মিথ্যা মামলার মাধ্যমে নারী, শিশু বা কাউকে হয়রানি করা হলে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া। সর্বোপরি দাবিগুলো নিশ্চিতকরণে সরকারকে লিখিত দিতে হবে এবং এ ব্যাপারে কমিটি গঠন করতে হবে। কমিটিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের একাংশকে রাখতে হবে।
এরই মধ্যে ধর্ষণের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদন্ডের বিধান রেখে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের খসড়া অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। গতকাল  সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে আইনের এই খসড়াটির চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয় বলে  জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। আজ এটি অধ্যাদেশ আকারে জারি করা হবে। অর্থাৎ আজ থেকে এটি আইনে পরিণত হবে।
এর আগে পূর্বঘোষণা অনুযায়ী বেলা ১১টার দিকে বিএনএস সেন্টারের সামনে জড়ো হতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। কিন্তু হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হলে তাঁদের আন্দোলন কিছুটা ব্যাহত হয়। পরে বৃষ্টি আর মেঘলা আকাশ উপেক্ষা করেই বেলা একটার দিকে রাস্তায় নামেন তাঁরা।
শিক্ষার্থীদের হাতে থাকা বিভিন্ন প্ল্যাকার্ডে লেখা ‘ধর্ষণমুক্ত দেশ চাই, ধর্ষকের ফাঁসি চাই’, ‘নারী কোনো পণ্য নয়, নারী কোনো ভোগ্য নয়’ প্রভৃতি। শিক্ষার্থীরা শ্লোগান দেন, ‘মানুষ তুমি চুপ কেন?’, ‘আমার সোনার বাংলায়, ধর্ষকের ঠাঁই নাই’ প্রভৃতি।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ