শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

এফডিআরের লাখ লাখ কোটি টাকা পুঁজিবাজারে আসবে -বিএসইসি চেয়ারম্যান

স্টাফ রিপোর্টার : এফডিআরের (ফিক্সড ডিপোজিট রেট) লাখ লাখ কোটি টাকা পুঁজিবাজারে চলে আসবে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। এ মন্তব্যের পক্ষে যুক্তি হিসেবে তিনি বলেন, মানুষ যখন দেখবে এফডিআরের ৫-৬ শতাংশের চেয়ে মিউচুয়াল ফান্ডে ১০ শতাংশ রিটার্ন পাওয়া যাচ্ছে, তখন তারা এদিকে ঝুঁকবে। যাতে করে সামনে বাজারে লেনদেন অনেক বেড়ে যাবে। এজন্য মিউচুয়াল ফান্ডে সুশাসন আনতে হবে। এ খাতটি আগামীতে ভালোভাবে চলার জন্য কাজ শুরু হয়েছে।
‘বিশ্ব বিনিয়োগকারী সপ্তাহ’ উপলক্ষে গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) আয়োজিত এক ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন বিএসইসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম।
তিনি বলেন, আমাদের কমিশনের দায়িত্ব নেয়ার বয়স মাত্র চার মাস। আমাদেরকে আপনারা (বিনিয়োগকারী) একটু সময় দেন। আমরা আগামী এক বছরের মধ্যে দৃশ্যমান পরিবর্তন দেয়ার চেষ্টা করব। দুই বছরের মধ্যে মডার্ন ক্যাপিটাল মার্কেটের ছায়া দেখতে পাবেন। আর তিন বছরের মধ্যে সম্পূর্ণ বাজারের একটি রূপ পাওয়া যাবে।
শিবলী রুবাইয়াত বলেন, বিনিয়োগকারীরা আমাদের শেয়ারবাজারের প্রাণ। তারা না থাকলে পুজিঁ আসত না। তাহলে কোনো ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানও আসত না। আমাদের কথার ওপর বিশ্বাস করে তারা টাকা-পয়সা এনে বিনিয়োগ করেন। তাদের বিনিয়োগকে দুশ্চিন্তামুক্ত রাখতে ও সঠিক ব্যবহারের জন্য আমাদেরকে সঠিক দায়িত্ব পালন করতে হবে। চেয়ারম্যান বলেন, আমাদের ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী এবং ব্যবসায়ীদের দিক বিবেচনা করতে হবে। যারা ব্যবসা করতে আসেন, তাদের যদি আইপিও (প্রাথমিক গণপ্রস্তাব) দেয়া বন্ধ করে দেই, তাহলে তারা কোথায় যাবেন? তাদেরও টাকার দরকার। এই বাজারে বিনিয়োগকারী এবং ব্যবসায়ী উভয়কেই দেখতে হয়। তা না হলে এই বাজার থাকত না।
আমরা দায়িত্ব নেয়ার সময় ২৫-২৬টা আইপিও জমা ছিল। যেগুলো বিগত ১-৩ বছরের পুরোনো আইপিও। যে কোম্পানিগুলো বারবার অ্যাকাউন্টস জমা দিচ্ছিল। এতে করে প্রতিবার ৫-২০ লাখ টাকা খরচ হচ্ছিল। কিন্তু ওই সময়টায় আইপিও দেয়া হয়নি। এখন আমরা আইপিও দেই বা না দেই, সেটাতো কোম্পানিগুলোকে জানাতে হবে। এজন্য আমরা যাদের দেয়ার, তাদের দিয়ে দিচ্ছি। আর অন্যদের বাদ দিয়ে দিচ্ছি। আমরা কোম্পানিগুলোকে আইপিওর জন্য নতুন করে অ্যাকাউন্টস জমা দেয়াতে চাই না। তারা এরইমধ্যে ১-৫ বার অ্যাকাউন্টস জমা দিয়েছেন। আমরা মোটামুটি আইপিও ক্লিয়ার করে নিয়ে আসছি। আশা করছি, এক মাসের মধ্যে পুরোনো সব আইপিও আবেদন ক্লিয়ার করে ফেলব, বলেন বিএসইসির চেয়ারম্যান।
তিনি বলেন, কে কোথায় বিনিয়োগ করবে, সেটা আমাদের ঠিক করা ঠিক না। আমাদের সব জায়গাতে ইন্টারফেয়ার করা ঠিক হবে না। এতে করে বিনিয়োগ করে মজা পাওয়া যাবে না। তবে কোনো অনিয়ম পেলে আপনারা জানান। আমাদের সার্ভেইল্যান্স এগুলো দেখবে। তবে কোন শেয়ার বাড়ল বা কমল, তার জন্য আমাদেরকে দোষ দেয়া ঠিক হবে না।
বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, লেনদেন এক হাজার কোটির আশপাশে ঘুরপাক খাচ্ছে। তবে এটাকে এ বছরের মধ্যে দেড় হাজারে নিয়ে যেতে হবে। এজন্য ডিএসইর (ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ) আইটি বিভাগের সমস্যা সমাধান করতে হবে। তাদের আইটির কারণে মাঝেমধ্যেই সমস্যা দেখা দিচ্ছে। মাঝেমধ্যেই ওয়েবসাইট দেখা যায় না। তিনি বলেন, আইসিবি তার দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে পারছে না। প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজমেন্টের ভেতরে বেশকিছু ঘাটতি দেখতে পেয়েছি। এ নিয়ে আমরা খুবই চিন্তিত। এই সমস্যা কাটিয়ে আইসিবিকে দ্রুত পুনর্গঠন করা হবে। আগামী দুই মাসের মধ্যে কাজ শেষ করে সরকারের কাছে সবকিছু তুলে ধরব।
তিনি বলেন, ‘জেড’ ক্যাটাগরির সব কোম্পানির সঙ্গে আমাদের কমিশন পৃথকভাবে মিটিং করেছে। কেউ কেউ ‘জেড’ থেকে বেরিয়ে এসেছে। আগামী তিন মাসের মধ্যে অনেকেই বেরিয়ে আসবে। যৌথভাবে আলোচনার কারণে অনেকে বেরিয়ে আসছে। তবে ৫-৬টি কোম্পানির অবস্থা বেশি ভালো ছিল না। এগুলোর জন্য আলাদা ব্যবস্থা আছে। এই কাজ শেষে ওটিসি মার্কেট নিয়ে বসব। সেখান বের করে নিয়ে আসার জন্য চেষ্টা করব।
কোম্পানি আইন পরিবর্তন করে ‘বাই ব্যাক’ আইন করার কথাও জানান বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে পাঁচটি কোম্পানি ও দুটি ডিবেঞ্চার ডিলিস্টিং করার কথা স্টক এক্সচেঞ্জকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। এই ডিবেঞ্চার দুটি ২০-২৫ বছরের পুরোনো। এতে বিনিয়োগকারীদের টাকা আটকে ছিল। আমরা এসে সেগুলো খুঁজে ৫৭ কোটি টাকা আদায়ের চেষ্টা করে দিয়েছি।
ডিএসইর চেয়ারম্যান মো. ইউনুসুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রতিষ্ঠানটির সিএফও আব্দুল মতিন পাটোয়ারি। আলোচনায় অংশ নেন ডিএসইর শেয়ারহোল্ডার পরিচালক রকিবুর রহমান।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ