শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

নৃত্যশিল্পী ইভান শাহরিয়ার ৭ দিনের রিমান্ডে

স্টাফ রিপোর্টার : নারী পাচারের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে লালবাগ থানার মামলায় গ্রেপ্তার নৃত্যশিল্পী ইভান শাহরিয়ার সোহাগকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের হেফাজতে পেয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। গতকাল সোমবার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির এসআই কামরুজ্জামান তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ঢাকার মহানগর হাকিম বেগম মাহমুদা আক্তারের কাছে সাত দিনের হেফাজতের আবেদন করেন।
আদালত পুলিশের এসআই স্বপন মন্ডল বলেন, আসামীর পক্ষে রিমান্ড বাতিলের আবেদন করেন তার আইনজীবী সুমন কুমার রায় ও অপর ককেজন আইনজীবী। “কাঠগড়ায় দাঁড়ানো ইভানকে শুনানির সময় বিমর্ষ দেখাচ্ছিল; বিচারকের উদ্দেশ্যে তিনি কোনো কথা বলেননি।“ শুনানি শেষে বিচারক তার জামিনের আবেদন নাকচ করে দেন বলে আইনজীবীরা জানান।
শুনানিতে ইভানের আইনজীবী বলেন, মামলাটির এজাহারে ইভানের নাম নেই। তাকে সন্দেহ করে ধরা হয়েছে। তিনি সংস্কৃতিবান, কোনো অপকর্মের কথা তিনি জানেন না।
রাষ্ট্রপক্ষ থেকে বলা হয়, দুই আসামীর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে ইভানের নাম বলেছে। তাই তাকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন।
গত ১০ সেপ্টেম্বর রাতে রাজধানীর নিকেতন থেকে ইভানকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি। পরে তাকে আদালতে হাজির করে লালবাগ থানার মামলায় কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির এসআইকামরুজ্জামান।
গত অগাস্ট মাসে মানবপাচারের অভিযোগে আজম খান ও তার চার সহযোগীকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের তথ্যের ভিত্তিতে সোহাগকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে সিআইডি বলছে।
গত ২ জুলাই লালবাগ থানায় আজম খান ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে মানবপাচার আইনে একটি মামলা দায়ের করেন সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার মৃণাল কান্তি দাশ। ওই মামলায় সোহাগকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। নিজের নামে (সোহাগ ড্যান্স ট্রুপ) একটি প্রতিষ্ঠা চালান ইভান শাহরিয়ার সোহাগ। তার দল বিভিন্ন অনুষ্ঠানের নাচে অংশ নেয়। ২০১৭ সালে ‘ধ্যাততেরিকি’ চলচ্চিত্রে নৃত্য পরিচালনার জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান তিনি।
সিআইডি বলছে, আজম খান সহযোগীদের দুবাইসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে ড্যান্স বারে চাকরি দেওয়ার কথা বলে নারী পাচার করতো। দুবাইয়ে আজম খানের নিজস্ব হোটেল ও ড্যান্স বার আছে। দেশে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যারা নাচ-গান করে তাদের অধিক আয়ের প্রলোভন দেখিয়ে পাচার করা হতো। সেখানে নিয়ে নৃত্যশিল্পীদের যৌন কর্মে বাধ্য করা হতো।
রিমান্ড আবেদনে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উল্লেখ করেন, গত ১১ সেপ্টেম্বর ইভান শাহরিয়ার সোহাগকে গুলশান নিকেতন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরের দিন আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। আসামিরা ভুক্তভোগীদের নাচ শিখিয়ে ভালো বেতনে বিদেশে পাঠানোর প্রস্তাব করেন। তাদের প্রস্তাবে ভুক্তভোগীরা রাজি হলে তাদের থাকা-খাওয়া নিশ্চিত করাসহ ক্লাবে নাচ-গান করার বিনিময় প্রতিমাসে ৫০ হাজার টাকা বেতন প্রদান করবে বলে মৌখিক চুক্তি করেন।
ভুক্তভোগীরা সরল বিশ্বাসে আসামীদের ওপর ভরসা করে দুবাইসহ অন্যান্য দেশে যেতে রাজি হন। আসামী আজম খান, তার ভাই নাজিম ও এরশাদের সহায়তায় ভুক্তভোগী ময়নার পাসপোর্ট ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রস্তুত করে দেন। তারপর ২০১৯ সালের মে মাসে ময়নাকে দুবাইয়ের সারজা নিয়ে যান। পরবর্তীতে আজম খান সেখানে নিয়ে ময়নাকে নিজেসহ বিভিন্ন লোক নিয়ে যৌন নির্যাতন চালান। কিন্তু দুবাই গমনের পর আসামীরা ময়নাকে কোনো বেতন দেননি।
আসামীরা পরস্পর যোগসাজশে বিবাদী নির্মল দান, আলমগীর, আমান ও শুভসহ অজ্ঞাতনামা এজেন্টের সহায়তায় ভুক্তভোগী আলেয়া ও মনি আক্তারদের ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় ড্যান্স ক্লাব থেকে প্রলোভনের মাধ্যমে নির্বাচন করেন। এভাবে বহু বাংলাদেশী নারীর সরলতার সুযোগ নিয়ে আসামীরা দুবাইসহ অন্যান্য দেশে পাচার করেন এবং জোরপূর্বক আটক রেখে যৌন নির্যাতন চালান।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ