শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

চট্টগ্রামের পাইকারী ও খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়ছে

চট্টগ্রাম ব্যুরো : ভারতের পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের সিদ্ধান্তে চট্টগ্রামের পাইকারী ও খুচরা বাজারে  পেঁয়াজের দাম বেড়ে গেছে। চট্টগ্রামের বৃহত্তম পাইকারী বাজার খাতুনগঞ্জের আড়তে একদিনের ব্যবধানে  প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ১৫ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে গেছে।
গতকাল  মঙ্গলবার  প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে মানভেদে ৬০ থেকে ৬৫ টাকায়। গত সোমবার এ দর ছিল ৪০ থেকে ৪৫ টাকা। এদিকে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় খুচরায় পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকায় কেজি দরে। সোমবার এ দর ছিল ৪৫ থেকে ৫০ টাকা।
এদিকে   পেঁয়াজ এর দাম মাত্রাতিরিক্ত বাড়বে এমন আশঙ্কায় খুচরা বিক্রেতা ও মুদির দোকানিরা ভিড় করছেন খাতুনগঞ্জের আড়তে। সপ্তাহখানেকের মধ্যে বিয়ে, মেজবান, মেজবান ফাতেহার দিন নির্ধারিত আছে এমন অনেক গ্রাহকও আড়ত থেকে পেঁয়াজ কিনে রাখছেন।  
খাতুনগঞ্জের হামিদুল্লাহ মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইদ্রিস জানান, ভারত বন্ধ করে দেয়ায় পেঁয়াজের দাম বাড়তি। দেশের বাইরে থেকে কিছু পেঁয়াজ অল্প কয়েকদিনের মধ্যে বাজারে আসার কথা রয়েছে। তখন দাম কিছুটা স্থিতিশীল হতে পারে।
এদিকে  ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) চট্টগ্রামে ১০টি ট্রাকে পেঁয়াজ, চিনি, মশুর ডাল ও সয়াবিন তেল বিক্রি করছে। টিসিবির চট্টগ্রাম আঞ্চলিক  প্রধান জামাল উদ্দিন আহমেদ  জানান,  প্রতি ট্রাকে ৩০০ কেজি করে পেঁয়াজ দেওয়া হয়েছে। জন প্রতি ২ কেজি থেকে কমিয়ে ১ কেজি করে দিতে বলেছি। আগামী ১ অক্টোবর পর্যন্ত ট্রাক সেলের সিদ্ধান্ত রয়েছে। এরপর কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।  
এদিকে গত কয়েক দিনে হঠাৎ করে দেশের বাজারে পেঁয়াজের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন দি চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রি’র সভাপতি মাহবুবুল আলম।১৫ সেপ্টেম্বর এক বিবৃতিতে তিনি বলেন-হঠাৎ করে পেঁয়াজের মূল্য খুচরা পর্যায়ে যথেষ্ট বৃদ্ধি পেয়েছে। আতংকিত হয়ে ভোক্তাসাধারণ প্রয়োজনের অতিরিক্ত পেঁয়াজ কেনার জন্য খুচরা দোকানগুলোতে ভিড় করছে। ফলে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি হচ্ছে। এ সুযোগে কিছু পাইকারী ও খুচরা ব্যবসায়ী অযথা পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি করছে। কিন্তু পূর্বের আমদানিকৃত পেঁয়াজের হঠাৎ করে মূল্য বৃদ্ধির কোন যৌক্তিকতা নেই।
এ প্রেক্ষিতে চিটাগাং চেম্বার সভাপতি বলেন- দেশে পর্যাপ্ত পরিমাণ পেঁয়াজের মজুদ রয়েছে। তিনি আগামী দিনের চাহিদা পূরণে চীন, মিশর, মিয়ানমার, পাকিস্তান ও তুরস্ক থেকে অতি শীঘ্রই পেঁয়াজ আমদানি করার জন্য সংশ্লিষ্ট আমদানিকারকদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন। এছাড়া সড়ক পথেও মিয়ানমার হতে পেঁয়াজ আমদানি করে বর্তমান চাহিদা পূরণ করা সম্ভব বলে তিনি মনে করেন। এমতাবস্থায়, চেম্বার সভাপতি পেঁয়াজের বাজার অস্থিতিশীল হওয়ার কোন কারণ নেই মন্তব্য করে জনসাধারণকে বিভ্রান্ত না হয়ে পেঁয়াজের বাজার স্থিতিশীল রাখতে এবং কৃত্রিম সংকটরোধে প্রয়োজনের অতিরিক্ত পেঁয়াজ না কেনার অনুরোধ জানিয়েছেন। পাশাপাশি টিসিবির মজুদকৃত পেঁয়াজ আরো বেশী আউটলেটের মাধ্যমে বিক্রয়ের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানান মাহবুবুল আলম
এদিকে ভারত রপ্তানি বন্ধের সিদ্ধান্তে বিকল্প দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির  প্রক্রিয়া শুরু করেছেন ব্যবসায়ীরা। চট্টগ্রাম থেকে এ পর্যন্ত ১২ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি নিয়েছেন তারা। বিশ্বের পাঁচটি দেশ থেকে এসব পেঁয়াজ আমদানি হবে। চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের উদ্ভিদ সংঘনিরোধ কেন্দ্র ও সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী সূত্রে এই তথ্য পাওয়া গেছে।
জানা গেছে,গত বছর ভারত রপ্তানি বন্ধের সপ্তাহ দু-এক পর ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজ আমদানিতে সক্রিয় হয়েছিলেন। এবার অবশ্য রপ্তানি বন্ধের ১১ দিন আগে থেকেই আমদানির উদ্যোগ নেন তারা। রপ্তানি বন্ধের বিষয়টি আঁচ করতে পেরে আগেভাগেই ব্যবসায়ীরা আমদানির  প্রক্রিয়া শুরু করেন। গত ৩ সেপ্টেম্বর থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি নিতে শুরু করেন ব্যবসায়ীরা। চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের উদ্ভিদ সংঘনিরোধ কেন্দ্র জানায়, গত ৩ সেপ্টেম্বর থেকে গতকাল মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত বিশ্বের পাঁচটি দেশ থেকে ১০ হাজার ৯১ টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি নিয়েছে ২৪টি  প্রতিষ্ঠান। এই পাঁচটি দেশ হলো চীন, মিয়ানমার, পাকিস্তান, মিশর ও তুরস্ক। এর বাইরে চট্টগ্রামের ট্রেড ইমপ্যাক্স নামের একটি  প্রতিষ্ঠান ঢাকার উদ্ভিদ সংঘনিরোধ কেন্দ্র থেকে ২ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি নিয়েছে। সব মিলিয়ে এ মাসের শেষ থেকে ১২ হাজার টন পেঁয়াজ দেশে আসতে শুরু করবে।
জানা গেছে,ট্রেড ইমপ্যাক্স ছাড়াও বকশিরহাটে ট্রেডলিংক  প্রতিষ্ঠান গত বৃহস্পতিবার মিশর থেকে ১ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির জন্য চট্টগ্রামের উদ্ভিদ সংঘনিরোধ কেন্দ্র থেকে অনুমতি নিয়েছে। মিয়ানমার থেকে ৫০০ টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি নিয়েছে খাতুনগঞ্জ ট্রেডিং। আবুল বাশার অ্যান্ড সন্স নিয়েছে ৫০০ টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতিপত্র। মেসার্স জিয়াউর রহমান পাকিস্তান থেকে ৫০০ টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি নিয়েছে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ