মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

পর্যাপ্ত স্থিতি থাকা সাপেক্ষে রফতানিকারকরা বিদেশে বিনিয়োগ করতে পারবে

স্টাফ রিপোর্টার: পর্যাপ্ত স্থিতি থাকা সাপেক্ষে এক্সপোর্ট রিটেনশন কোটায় (ইআরকিউ) রফতানিকারকদের বিদেশে বিনিয়োগের সুযোগ দিতে যাচ্ছে সরকার। কোনো রফতানিকারক তার পাঁচ বছরের বার্ষিক গড় রফতানি আয়ের ২০ শতাংশ বা সর্বশেষ নিরীক্ষিত বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদনে প্রদর্শিত নিট সম্পদের ২৫ শতাংশের মধ্যে যেটি কম, সে পরিমাণ অর্থ বিদেশে ইক্যুইটি হিসেবে বিনিয়োগ করতে পারবেন। 

রফতানিকারকদের জন্য বিদেশে বিনিয়োগের সুবিধা দিতে বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ আইনের আওতায় খসড়া বিধিমালা তৈরি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ডেপুটি গভর্নর আহমেদ জামাল স্বাক্ষরিত এ খসড়ার কপি অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর পর গত মঙ্গলবার তা ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ (এফআইডি)।

খসড়া বিধিমালায় বলা হয়েছে, এক্সপোর্ট রিটেনশন কোটায় পর্যাপ্ত স্থিতিসম্পন্ন রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান বিদেশে বিনিয়োগের জন্য উপযুক্ত বলে বিবেচিত হবে। পাঁচ বছরের নিরীক্ষিত হিসাব বিবরণী অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানটিকে আর্থিকভাবে স্বচ্ছল হতে হবে। কোনো খেলাপি ঋণ বা অসমন্বিত পুনঃগঠিত বৃহৎ ঋণ না থাকার সনদ দিতে হবে। কোনো ধরনের শুল্ক, ভ্যাট বা কর অপরিশোধিত না থাকার সনদও দিতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক জারি করা ব্যাসেল-৩ নীতিমালায় নির্ধারিত ম্যাপিং অনুযায়ী আবেদনকারীর ক্রেডিট রেটিং কমপক্ষে ২ হতে হবে।

এতে আরও বলা হয়েছে, আবেদনকারী প্রতিষ্ঠানে আন্তর্জাতিক ব্যবসা পরিচালনা, অর্থায়ন ও বিনিয়োগে দক্ষ এবং অভিজ্ঞ জনবল থাকতে হবে। ভবিষ্যতে বৈদেশিক মুদ্রায় আয় অর্জনের সম্ভাবনার পাশাপাশি বাংলাদেশ হতে রফতানি বৃদ্ধি, বিদেশে বাংলাদেশিদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির সম্ভাবনা থাকতে হবে।

খসড়া বিধিমালা অনুযায়ী, সেসব দেশে বিনিয়োগ করা যাবে যেসব দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক পুঁজি বিনিয়োগ, উন্নয়ন, সম্প্রসারণ ও সংরক্ষণ চুক্তি রয়েছে এবং যেসব দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বৈত কর পরিহার চুক্তি রয়েছে সেসব দেশে বিনিয়োগ করা যাবে। তবে জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও বৈদেশিক সম্পদ নিয়ন্ত্রকের দফতরের নিষেধাজ্ঞা রয়েছেন, এমন দেশে বিনিয়োগ করা যাবে না।

বিধিমালার খসড়ায় আরও বলা হয়েছে, বিদেশে ইক্যুইটি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ও কোম্পানি অধিগ্রহণের জন্য প্রস্তাবিত সহযোগী প্রতিষ্ঠানটির সম্পূর্ণ মালিকানা বা পরিচালনা নিয়ন্ত্রণ করার মতো শেয়ার ধারণ করতে হবে।

বিদেশে বিনিয়োগ থেকে হওয়া আয়, লভ্যাংশ বা শেয়ার বিক্রির অর্থ বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্বানুমোদন ছাড়া পুনঃবিনিয়োগ করা যাবে না। বিদেশে অবস্থিত সহযোগী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে প্রাপ্য সকল পাওনা-লভ্যাংশ, বেতন, রয়্যালটি, পরামর্শ ফি, কমিশন ইত্যাদি অর্জিত হওয়ার ৯০ দিন বা বাংলাদেশ ব্যাংক নির্ধারিত সময়ের মধ্যে দেশে প্রত্যাবাসন করতে হবে। সকল পর্যায়ে কর্মী নিয়োগে বাংলাদেশি জনবলের সংখ্যা কমপক্ষে ৩০ শতাংশ হতে হবে।

তহবিল অপব্যবহার করলে বিনিয়োগের জন্য পাঠানো পুরো অর্থ প্রত্যাবাসনের নির্দেশ দিতে পারবে বাংলাদেশ ব্যাংক। অর্থ প্রত্যাবাসনে ব্যর্থ হলে তা অর্থ পাচার ও মানি লন্ডারিং অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে এবং মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের আওতায় আবেদনকারী প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী, পরিচালক, প্রধান নির্বাহী বা অন্যান্য কর্মকর্তারা শাস্তি পাবেন। একই সঙ্গে বিদেশে পাঠানো অর্থের সমপরিমাণ আবেদনকারী প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী, পরিচালক, প্রধান নির্বাহী বা অন্যান্য কর্মকর্তাদের কাছ থেকে আদায় করবে বাংলাদেশ ব্যাংক।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, উদ্যোক্তাদের বিদেশে বিনিয়োগের জন্য আবেদন করতে হবে বাংলাদেশ ব্যাংক বরাবর। মাধ্যম হতে হবে ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের অথরাইজড ডিলার শাখা। আবেদনের সঙ্গে আবেদনকারীকে অঙ্গীকারনামা দিতে হবে।

খসড়া নীতিমালায় বলা হয়েছে, এ আবেদন যাচাই-বাছাই শেষে বাংলাদেশ ব্যাংক একটি প্রতিবেদনসহ আবেদনটি অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠাবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে রফতানি ও প্রবাসী আয়ের অবস্থা, পূর্বাভাস, লেনদেনের ভারসাম্য, বৈদেশিক মুদ্রার মজুত ইত্যাদি বিষয় বিবেচনা করা হবে। সরকারের সম্মতি পেলে বাংলাদেশ ব্যাংক বিনিয়োগের অনুমতির চিঠি আবেদনকারীর ব্যাংকে পাঠিয়ে দেবে।

এ প্রসঙ্গে ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সাবেক সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, বাংলাদেশ এখন ৩৭৪ বিলিয়ন ডলারের ইকোনমি, বিশ্বের ৩৪তম বৃহৎ অর্থনীতি। তাই এ দেশের ব্যবসায়ীদের অবশ্যই নিয়ম-কানুনের মধ্যে বিদেশে বিনিয়োগের সুযোগ থাকা উচিত।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, বাংলাদেশিদের বিদেশে বিনিয়োগ করার বিষয়ে কোনো আইন-কানুন নেই। আগ্রহী ব্যবসায়ী বাংলাদেশ ব্যাংকে আবেদন করলে তা অনুমোদনের জন্য অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে পাঠানো হয়। কমিটি অনুমোদন দিলে বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন শর্ত সাপেক্ষে আগ্রহী ব্যবসায়ীকে বিদেশে বিনিয়োগের সুযোগ দেয়।

২০১৩ সালের পর থেকে রফতানি প্রত্যাবাসন কোটা থেকে ৮টি বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠানকে বিদেশে বিনিয়োগের সুযোগ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর মধ্যে তৈরি পোশাক খাতের ডিবিএল গ্রুপ ইথিওপিয়ায় কারখানা করছে। এছাড়া মিয়ানমারে মবিল যমুনা, যুক্তরাষ্ট্রে এসিআই হেলথ কেয়ার ও স্কয়ার ফার্মা, যুক্তরাজ্য ও এস্তোনিয়াতে ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস, কেনিয়ায় বিএসআরএম স্টিল ও সিঙ্গাপুরে স্পেকট্রাম ইঞ্জিনিয়ারিং বিনিয়োগের অনুমতি পেয়েছে। সর্বশেষ গত মাসে আকিজ গ্রুপকে মালয়েশিয়ায় দুটি কারখানা অধিগ্রহণের জন্য দুই কোটি ডলার বিনিয়োগের অনুমোদন দেয় সরকার। আরও বেশকিছু প্রতিষ্ঠান বিদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী বলেও জানা গেছে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ