প্রকল্পে ‘অস্বাভাবিক খরচ’ আর মানা হবে না
স্টাফ রিপোর্টারঃ মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবসহ ৩০টি মন্ত্রণালয়ের সচিবের সঙ্গে বৈঠক করেছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পে অস্বাভাবিক বা বাড়াবাড়ি খরচসহ বেশকিছু বিষয় নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়। বৈঠকে তারা সবাই স্বীকার করেছেন, প্রকল্পে কিছু ক্ষেত্রে অস্বাভাবিক খরচের কথা। তবে এটা গ্রহণযোগ্য নয়। তারা একমত হয়েছেন যে, এসব বিষয় আর মেনে নেয়া যাবে না। এগুলো শোধরানোর জন্য এ বছর থেকেই সবাই একসঙ্গে কাজ করবেন। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে এর বাস্তবায়ন দেখা যাবে।
বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে ৩০টি মন্ত্রণালয়ের সচিবের সঙ্গে বৈঠক করেন পরিকল্পনামন্ত্রী বৈঠক শুরু হয়। দুপুর দেড়টার দিকে সভা শেষ হয়।
সভায় পরিকল্পনা কমিশনের যেসব কর্মকর্তা প্রকল্প যাচাইবাছাই করেন, তাদের পর্যবেক্ষণ, কী কী ঘাটতি লক্ষ্য করেছেন – সেসব তুলে ধরেন। অন্য মন্ত্রণালয়ের সচিবরা যারা প্রকল্প তৈরি করেন, বৈঠকে তাদের শিক্ষণীয় ব্যাপারগুলো তুলে ধরেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব তাদের অভিজ্ঞতার আলোকে উল্লেখ করেছেন যে, কোথায় কীভাবে আরও ভালো করা যায়।
সভা শেষে দুপুর ২টার দিকে সাংবাদিক সম্মেলন করে বৈঠকে কী আলোচনা হয়েছে, সে বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন পরিকল্পনামন্ত্রী। তিনি বলেন, আমরা সবাই একমত হয়েছি যে, করোনার জন্য নয়, অপ্রয়োজনীয় ব্যয় যেকোনো পরিস্থিতিতে আমাদেরকে পরিহার করতে হবে। এটা অপরিহার্য। প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিভিন্ন সময় আমি শেয়ার করেছি। তিনি বিরক্তি প্রকাশ করেছেন। তিনি আমাদেরকে এ সমন্ধে আমাদেরকে নির্দেশনা দিয়েছেন যে, এগুলো গ্রহণ করবেন না। আমাদের কাছ থেকে শুনেন, তা নয়। তার (প্রধানমন্ত্রীর) নিজের নজরেও আসছে। বিশেষ প্রকল্পের রিভিশন নিয়ে তিনি প্রায়ই প্রশ্ন করেন, এত রিভিশন কেন করেন। প্রথমে বললেন দুই-তিন বছরের প্রকল্প। তারপরে এক বছরের মাথায় এসে বলেন, চার বছর লাগবে। আরেক বছর পরে আবার এসে বললেন ব্যয় বাড়াতে হবে। এগুলো তিনি মনে করেন যে, শৃঙ্খলা বিরোধী। এটা আমরা বিস্তারিত আলোচনা করেছি।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘সরকারের অর্থ নয়, জনগণের অর্থ। জনগণের অর্থ যদি অপচয় হয় বা খরচ বেশি করি– এটা গ্রহণযোগ্য নয়। করোনা হোক বা না হোক, কোনো সময়ই জনগণের অর্থ নিয়ে ‘নয়-ছয়’ হতে দেয়া যাবে না, এটা নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। আমরা সবাই স্বীকার করি যে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি আছে। ভুল হোক বা হিউম্যান এরর হোক, হিউম্যান এরর হিসেবে নেব। কিন্তু রিপিটেড হিউম্যান এরর তো গ্রহণযোগ্য নয়। সবাই মিলে আমরা আলোচনা করেছি, কীভাবে এটাকে উতরিয়ে আসা যায়, এ বিষয়ে আমরা সবাই মিলে একমত হয়েছি, আমরা যার যার অবস্থান থেকে এটা মোকাবিলা করবো। আমরা এই বছর থেকে কাজ শুরু করলাম, নতুন প্রকল্পগুলোর জন্য আমরা অনেকটা স্ট্রিনজেন হবো। প্লানিং কমিশনে আমরা মোস্ট স্ট্রিনজেন হবো। আর যারা প্রকল্প তৈরি করবে, তারা আগের তুলনায় অনেক বেশি সাবধানতা অবলম্বন করবেন। যাতে করে এই ধরনের কাজ আগামীতে যেন আর না হয়।’
তিনি বলেন, একজন লোকের কাছে চারটা, পাঁচটা, ছয়টা প্রকল্প। ১০টা প্রকল্পও পাওয়া গেছে। এটা আমাদের সার্কুলার বিরোধী, বিধান বিরোধী। তারপরও করে যাচ্ছি এটা। সুনামগঞ্জের প্রকল্পে প্রকল্প পরিচালক ঢাকায়। এটা গ্রহণযোগ্য নয়। এটা আগেও আলোচনা করেছি। আবার আলোচনা করছি। বারবার করে করে এটাকে আমরা শোধরাবার চেষ্টা করছি। শোধরানো দরকার। এ সমন্ধে কোনো সন্দেহ নাই। আমরা সবাই একমত। আমরা একমত হয়েছি, এসব বিষয় আর মেনে নেয়া যাবে না। এগুলো শোধরানোর জন্য আমরা সবাই আবার একসঙ্গে কাজ করবো।
তিনি আরও বলেন, এ বিষয়গুলো আজকে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। সচিবরা বাস্তবায়নের দায়িত্বে থাকেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব কী কী শাস্তির বিধান আছে, সেটা উল্লেখ করেছেন। জ্যেষ্ঠ সচিব হিসেবে তিনি আবার এটাকে তুলে ধরেছেন বলেও জানান পরিকল্পনামন্ত্রী।