করোনা মুক্তির প্রার্থনার মাধ্যমে পালিত হচ্ছে জন্মাষ্টমী
সংগ্রাম অনলাইন ডেস্ক: করোনাভাইরাসের মহামারীতে আর্থিক-সামাজিক দুর্বিপাক থেকে উত্তরণের জন্য স্রষ্টার উদ্দেশে প্রার্থনা করছেন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা।
আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে জন্মাষ্টমী উপলক্ষে জাতীয় মন্দির ঢাকেশ্বরী প্রাঙ্গণে শুরু হয় গীতাযজ্ঞ। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি মিলন কান্তি দত্ত বলেন, “আজ শুরুতেই আমরা করোনাভাইরাসে পীড়িত এ পৃথিবীর জন্য প্রার্থনা করেছি। স্রষ্টার কৃপায় এ পৃথিবীতে ফের প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে আসুক, সে প্রার্থনা করেছি।”
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাসমতে, সাড়ে পাঁচ হাজার বছরেরও আগে দ্বাপর যুগে ভাদ্র মাসের শুক্লপক্ষের অষ্টমী তিথিতে সনাতন ধর্মের অবতার হিসেবে প্রেম, সত্য ও ন্যায়-প্রতিষ্ঠার ব্রত নিয়ে পৃথিবীতে আবির্ভূত হন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ।
তাদের বিশ্বাস, তিনি অত্যাচারী ও দুর্জনের বিরুদ্ধে শান্তিপ্রিয় ভালো মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় ব্রতী হন। দুষ্টের দমন করতে একই ভাবে যুগে যুগে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ পৃথিবীতে আসেন। এসে সত্য ও সুন্দর ও ন্যায় প্রতিষ্ঠা করেন।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, জন্মষ্টমী ব্রত (উপবাস) পালনে সমস্ত পাপমোচন ও পূণ্যলাভ হয়। যারা নিয়মিত এ ব্রত পালন করে থাকেন তাদের সৌভাগ্য, আরোগ্য ও সন্তান লাভ হয়। এছাড়া পরকালে স্বর্গ প্রাপ্তি নিশ্চিত হয়।
রাষ্ট্রপতির শুভেচ্ছাবাণী
জন্মাষ্টমী উপলক্ষে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের শুভেচ্ছা জানিয়ে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেন, “শ্রীকৃষ্ণ ছিলেন মানবতার প্রতীক ও সমাজসংস্কারক। সমাজ থেকে অন্যায়-অত্যাচার, নিপীড়ন ও হানাহানি দূর করে মানুষে মানুষে অকৃত্রিম ভালোবাসা ও সম্প্রীতির বন্ধন গড়ে তোলাই ছিল শ্রীকৃষ্ণের মূল ভাবনা।”
দেশের সমৃদ্ধির জন্য সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি মৈত্রীর বন্ধন দৃঢ় করার আহ্বান জানান রাষ্ট্রপতি।
তিনি বলেন, “সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি আমাদের মহান ঐতিহ্য। সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এই ঐতিহ্য অব্যাহত রেখে পারস্পরিক সৌহার্দ ও সম্প্রীতি অটুট রাখতে হবে। মানবকল্যাণ সব ধর্মের মূল বাণী। সমাজে বিদ্যমান সম্প্রীতি ও মৈত্রীর বন্ধনকে আরো দৃঢ় করে তা জাতীয় অগ্রগতি ও সমৃদ্ধি অর্জনে কাজে লাগানোর জন্য আমি দেশের সকল ধর্মাবলম্বীদের প্রতি আহ্বান জানাই।”
মহামারী করোনাভাইরাসের প্রকোপে সারা বিশ্ব যখন স্থবির হয়ে পড়েছে তখন পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকারের পাশাপাশি নাগরিকদের সহযোগিতার হাত প্রসারিত করতে অনুরোধ জানান তিনি।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশসহ গোটাবিশ্ব আজ করোনা মহামারীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে। করোনার প্রভাবে সারাবিশ্ব আজ স্থবির হয়ে পড়েছে। জীবনযাত্রা, কর্মসংস্থান, ব্যবসা-বাণিজ্য, আন্ত:দেশীয় যাতায়াতসহ অর্থনীতি এক মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে। বাংলাদেশ সরকার করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারের পাশাপাশি দেশবাসীকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে।
“ভয় নয় সতর্কতা- এ মূলমন্ত্রকে ধারণ করে জীবনযাপনের প্রতিটি ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পাশাপাশি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।”
প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছাবাণী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুভেচ্ছাবাণীতে বলেছেন, “শ্রীকৃষ্ণের জীবনের উদ্দেশ্য ছিল মানুষে মানুষে ভ্রাতৃত্ব স্থাপন এবং সমাজে সাম্য প্রতিষ্ঠা। তিনি আজীবন শান্তি, মানবপ্রেম ও ন্যায়ের জন্য কাজ করে গেছেন। শ্রীকৃষ্ণ তাঁর জীবনাচরণ এবং কর্মের মধ্য দিয়ে মানুষের আরাধনা করেছেন।
“শ্রীকৃষ্ণের আদর্শ ও শিক্ষা বাঙালির হাজার বছরের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, সৌহার্দ্য ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধনকে আরো সুদৃঢ় করবে। আমি আশা করি, এই জন্মাষ্টমী উৎসব শ্রীকৃষ্ণের ভক্তগণকে তাঁর জীবনাদর্শ অনুসরণ করতে আরো অনুপ্রাণিত করবে।”
মহামারী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মধ্যে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের জন্মাষ্টমী উদযাপনের আহ্বান জানিয়েছেন শেখ হাসিনা।
জন্মাষ্টমী উপলক্ষে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের।
তিনি বলেন, “জন্মাষ্টমীর এই শুভলগ্নে আমি বিশ্ব শান্তি, সংহতি ও ভ্রাতৃত্ব কামনা করছি। আশা করছি, আগামী দিনে বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্য আরও সুদৃঢ় হবে।’
ডিএস/এএইচ