বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪
Online Edition

পল্লবী থানার ভেতরে বোমা বিস্ফোরণে ৪ পুলিশসহ আহত ৫

স্টাফ রিপোর্টার : রাজধানীর পল্লবী থানার ভেতরে বোমা বিস্ফোরণে চার পুলিশ সদস্যসহ পাঁচজন আহত হয়েছেন। গতকাল বুধবার সকালে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পর বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট, সিআইডি, ডিবি, পিবিআইসহ পুলিশের বিভিন্ন সংস্থা ঘটনা স্থলে যায়। তারা আলামত সংগ্রহ করেন। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পুলিশের নিরাপত্তা আরও জোরদার করা হয়। রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি চালায় পুলিশ। এদিকে থানায় বোমা বিস্ফোরণের ঘটনার সঙ্গে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা নেই বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। পুলিশ জানিয়েছে, বোমা বহনকারী তিন জন ভাড়াটে খুনী।
আহতরা হলেন- পল্লবি থানার ওসি তদন্ত (ইন্সপেক্টর অপারেশন) ইমরানুল ইসলাম, (৪৮), উপপরিদর্শক (এসআই) সজীব (৩০), শিক্ষানবিশ এসআই অঙ্কুশ (২৮) ও রুমি (২৮) এবং ইমরান ইসলামের সোর্স রিয়াজ (২৮)। রুমি ও রিয়াজ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসাধীন। পিএসআই অঙ্কুশ চক্ষু হাসপাতালে আছেন। বাকি দুজন প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে বাসায় ফিরেছেন।
এর আগে সকালে ঢাকা মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (ডিসি-মিডিয়া) ওয়ালিদ হোসেন জানান মঙ্গলবার রাতে ‘পল্লবী থানা পুলিশ দুটি আগ্নেয়াস্ত্রসহ তিনজন ভাড়াটে সন্ত্রাসীকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। সন্ত্রাসীদের কাছে থাকা ওয়েট মেশিনসদৃশ্য একটি যন্ত্র ছিল। ওই যন্ত্রটি থানার ডিউটি অফিসারের কক্ষে রাখা হলে সকাল ৭টার দিকে তা বিস্ফোরিত হয়। সন্ত্রাসীরা ওই এলাকার একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিকে হত্যা করবে এমন তথ্য ছিল পুলিশের কাছে। পরে তাদের আটক করা হয়।’ খবর পেয়ে আমাদের বম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের সদস্যরা ঘটনাস্থলে ছুটে যান। তবে তাদের পৌঁছানোর আগেই ওয়েট মেশিনসদৃশ্য বস্তুটি বিস্ফোরিত হয়। এ ঘটনায় আহতদের মধ্যে দুজন ঢাকা মেডিকেলে (ঢামেক) ও একজন চক্ষু হাসপাতালে ভর্তি আছেন। বাকি দুজন প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে বাসায় ফিরেছেন।’ উপ-কমিশনার ওয়ালিদ হোসেন বলেন, বোমা বহনকারী গ্রেফতার তিনজন ‘ভাড়াটে খুনি’। তদন্তের পর বিষয়গুলো স্পষ্ট হবে।
গ্রেফতার তিনজন হলেন- রফিকুল ইসলাম (৪০), শহিদুল ইসলাম (২৩) ও মোশাররফ হোসেন (২৬)। তাদের তিনজনকে থানা থেকে গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে নেয়া হয়েছে বলে পল্লবী থানার উপ পরিদর্শক আকলিমা আক্তার জানিয়েছেন। তবে কাকে তারা হত্যার পরিকল্পনা করেছিল, সে বিষয়েও কিছু বলেননি পুলিশ কর্মকর্তারা।
ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম) কৃষ্ণপদ রায় দুপুরে পল্লবী থানার সামনে এক ব্রিফিংয়ে বলেন, কালশী কবরস্থানের কাছে ‘একদল সন্ত্রাসী’ অবস্থান করছে খবর পেয়ে মঙ্গলবার রাত ২টার দিকে পল্লবী থানা পুলিশ সেখানে অভিযান চালায়। অভিযানে ওই তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়। আরও কয়েকজন ছিল, তারা পালিয়ে যায়। গ্রেফতারদের কাছ থেকে দুটি পিস্তল, চার রাউন্ড গুলী এবং একটি ডিভাইস পাওয়া যায়, যেটি দেখতে ওজন মাপার মেশিনের মত। থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে গ্রেফতার তিনজন পুলিশকে জানায়, ওই ওজন মাপার যন্ত্রে ‘বোমা রয়েছে’। এরপর বোমা নিস্ক্রিয়কারী দলকে খবর দেয়া হলে তারা এসে ডিউটি অফিসারের কক্ষে ওই ওজন মাপার মেশিন পরীক্ষা করেন। পরে আরেকটি বিশেষজ্ঞ দলকে ডাকা হয়, তারা পৌঁছানোর আগেই বিস্ফোরণ ঘটে বলে ঢাকার পুলিশ কমিশনার শফিকুল ইসলাম জানান। বিস্ফোরণের ধাক্কায় থানার দোতলার জানালার কাচ ভেঙে যায়, আশপাশের মানুষের মধ্যে তৈরি হয় আতঙ্ক। পল্লাবী থানায় পরিদর্শক (অপারেশনস) এমরানুল ইসলামসহ পাঁচজনকে আহত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
ঈদুল আযহা ও অগাস্ট মাস সামনে রেখে দেশে জঙ্গি হামলার আশঙ্কায় দিন দশেক আগেই সারা দেশে পুলিশের সকল ইউনিটকে সতর্ক করেছিল পুলিশ সদর দফতর। পুলিশ সদস্য, পুলিশের স্থাপনা, পুলিশের যানবাহন এ ধরনের হামলার ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বলে সদর দফতর থেকে পাঠানো চিঠিতে জানানো হয়েছিল। তবে পল্লবীর ঘটনার সঙ্গে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি বলে ব্রিফিংয়ে জানান পুলিশ কর্মকর্তা কৃষ্ণপদ রায়। তিনি বলেন, অপরাধীচক্র, যারা মিরপুর ভিত্তিক অপরাধ করে থাকে, গ্রেফতাররা তাদেরই সদস্য বলে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হওয়া গেছে। তারা যারা ভাড়াটে খুনী একটি অপরাধ করার জন্য এসেছিল, সে অপরাধ হতে পারে কাউকে খুন করা, কোনো সম্পত্তি সংক্রান্ত অথবা ডাকাতি করা। আমরা বিষয়টা তদন্ত করে দেখছি। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা নেই- স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী: পল্লবী থানায় বোমা বিস্ফোরণের ঘটনার সঙ্গে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা নেই বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। গতকাল তিনি একটি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমি মনে করি না, এই ঘটনার সঙ্গে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা আছে। যাদের আটক করা হয়েছে তারা ডাকাত দলের সদস্য। তাদের কাছে থাকা কিছু একটার বিস্ফোরণ হয়েছে। তারপরও তদন্ত হবে। এরপর বিস্তারিত বলা যাবে।’

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ